এমন পাঠশালা গ্রামে গ্রামে হোক
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। প্রত্যাশা জাগায় পরিচালক সত্যজিৎ দাশগুপ্তর ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক তিনি। নাম সুজিত চট্টোপাধ্যায়। ৮১ বছর বয়সেও সামাজিক কর্মকাণ্ডে চূড়ান্ত সক্রিয় তিনি। কী সেই কাজ ? শিক্ষকতা, যা তিনি আজীবন করে এসেছেন। অবসর তাঁকে থামিয়ে দিতে পারেনি। পারে না এইসব মানুষের ক্ষেত্রে। মানুষ গড়ার কারিগর যে তিনি ! তাঁর পাঠশালা সেইসব ছাত্রছাত্রীদের জন্য, যাঁরা ঠাই পায় না প্রতিষ্ঠিত স্কুলে। বেসরকারি স্কুল তো অনেক দূরের ব্যাপার, সরকারি স্কুলের দরজাতেও অনেক সময়ই পৌঁছতে পারে না এই হতভাগ্যরা। সুজিতবাবুর বাড়ি বর্ধমানের আউশ গ্রামে। রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে তাঁর বসবাস। সেখানেই অবসরের পরে গ্রামের ছাত্রদের পড়ানো শুরু করেন তিনি বছরে মাত্র এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে। পরে এক টাকার বদলে সেটা দু’টাকা হয়। এইভাবে বিগত কুড়ি বছর ধরে পড়িয়ে আসছেন সুজিতবাবু।
২০২১ সালে উনি পদ্মশ্রী পান। বাংলা টিভি দর্শক অবশ্য তাঁকে তার আগেই দাদাগিরি-র মঞ্চে বিজয়ী খেতাব জিততে দেখেছে। এহেন মানুষটিকে নিয়েই সত্যজিৎ দাশগুপ্তের ডকুফিচার ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’। আদতে এটাই সুজিতবাবুর স্কুলের নাম। কেন এই নামকরণ, সে আপনারা ছবির পর্দাতেই দেখবেন। ছবির ভাবনা, প্রযোজনা, চিত্রনাট্য, ক্যামেরা ও এডিটিং-ও সত্যজিতেরই । কেমন করে এমন এক ছবির ভাবনা এলো তাঁর মনে জেনে নিন পরিচালকের কথাতেই–”ফেসবুকে ওঁর সম্পর্কে জানতে পারি প্রথম। সেই থেকে ওঁর সম্পর্কে একটা দারুণ শ্রদ্ধা জন্মায় মনে। আজকাল এমন মানুষ যথার্থই বিরল। তখনই ইচ্ছে হয় ওঁকে নিয়ে একটা ছবি যদি করা যায়, যার মাধ্যমে ওঁকে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারি।”
এরপরই সত্যজিৎ তাঁর এক বন্ধুর ভাই সুরজিতের সাহায্যে সুজিতবাবুর কাছে পৌঁছন। ছবির পরিকল্পনা ও নামকরণ হলো। এরই পাশাপাশি সত্যজিতের সঙ্গে যোগ দেন দেবায়ন কঙ্কতিকা। দেবায়ন আগাগোড়া কাজটিতে সত্যজিতের সঙ্গে ছিলেন। ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে সত্যজিৎ ও দেবায়ন দুজনে মিলে সুজিতবাবুর বাড়িতে গিয়ে ছবির পুরো শুটিংটা করেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন তিনি, সেই দৃশ্যই টেক করা হয়। অর্থাৎ রিয়েল লাইফ হিরো, তাঁর রিল লাইফে ধরা দেন। সঙ্গে থাকে তাঁর অতি আপন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। ক্যামেরার পিছনেও সত্যজিতদের কর্মসঙ্গী হয় পাঠশালার ছাত্রছাত্রীরা। ছবির আবহ সৃষ্টি করেছেন তিতাস আর উৎপল দাস বাউল ও নির্মল দাস। ছবির স্টিল তোলার কাজটি করেছেন দেবায়ন। আগামী ১৫ মে নন্দন ৩-এ স্ক্রিনিং হবে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’র।
আজকের স্বার্থান্ধ সমাজে এখনও সুজিতবাবুর মতো শিক্ষক বাস করেন–নিরলস কাজ করে যান নিঃস্বার্থভাবে। এটা যেমন বিস্ময়কর, তেমনই অনুপ্রেরণাযোগ্য। এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি করে পরিচালক সত্যজিৎ দাশগুপ্তও অনেকখানি সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। লোকজন বেশি বেশি করে এমন ছবি দেখবে, সেটাই প্রত্যাশিত। তাহলেই এ ছবির নির্মাণ সার্থক হবে।