Monday, February 3, 2025
বিনোদনের ছোট বাক্স

ওদের মিস করবো : তৃণা

শনি-রবি ফিনালের মঞ্চ মাতাবে খুদেরা

আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। কয়েক মাসের টানটান প্রতিযোগিতার পর এসে গেল গ্র্যান্ড ফিনালে। স্টার জলসার ‘ডান্স ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র গ্র্যান্ড ফিনালে উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন সোমনাথ লাহা

পাঁচ মাসের পথচলার পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে এবার। শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্ট ডাউনের পালা। কার মাথায় উঠবে বিজয়ীর শিরোপা! কে হাসবে জয়ের হাসি?  স্টার জলসার জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র গ্র্যান্ড ফিনালে নিয়ে এভাবেই টেনশনে টানটান দর্শকও। ইতিমধ্যেই ফিনালেতে পৌঁছে গিয়েছে সেরা ছয় প্রতিযোগী–সমৃদ্ধি, অনুষ্কা, আরোহী, কথাকলি, চিত্রিতা ও আনন্দ।

প্রসঙ্গত, বিহারের মধুবনীর বাসিন্দা আনন্দ একজন ভার্সেটাইল ডান্সার। হাবড়ার ট্যালেন্টেড কথাকলি এই শোয়ের সবচেয়ে খুদে পারফর্মার। ওড়িশার আঙ্গুলের বাসিন্দা অনুষ্কা একজন ট্রেন্ড ওড়িশি নৃত্যশিল্পী। সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা থেকে আসা সমৃদ্ধি তার এরিয়াল ডান্স ও ব্যাড সালসা অ্যাক্টের মাধ্যমে সকলের মন জিতে নিয়েছে। কনটেম্পোরারি ও ক্রিয়েটিভ ডান্সের মধ্যে দিয়ে দর্শকদের আকর্ষণ করেছে চিত্রিতা। অপরদিকে নিজের এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে মঞ্চে ম্যাজিক সৃষ্টি করতে আরোহীর জুড়ি মেলা ভার। তাই গ্র্যান্ড ফিনালের মঞ্চে প্রতিযোগিতা যে অন্যমাত্রায় যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রসঙ্গত, শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় প্রযোজিত ও পরিচালিত এই রিয়েলিটি শো ইতিমধ্যেই টিভির নন-ফিকশন শো-গুলির মধ্যে এক নম্বর স্থান অধিকার করে নিয়েছে। বিভিন্ন পর্বে এই শোয়ে বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত হয়েছেন কলকাতা ও মুম্বইয়ের বিভিন্ন তারকারা। গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও যিশু সেনগুপ্ত। শোয়ে বিচারকের ভূমিকায় রয়েছেন টলিউড সুপারস্টার দেব সহ অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র ও মনামি ঘোষ। ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে তৃণা সাহা, দীপান্বিতা রক্ষিত এবং অভিষেক বসু। সম্প্রতি স্টার জলসার অফিসে ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র গ্র্যান্ড ফিনালের প্রচারপর্বে উপস্থিত ছিলেন শোয়ের প্রযোজক, পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যতম ক্যাপ্টেন তৃণা সাহা। উপস্থিত ছিল ফিনালের প্রতিযোগীরা এবং শোয়ের দুই খুদে সঞ্চালক লাড্ডু ও উদিতা।

Img 20221224 Wa0029
ওদের মিস করবো : তৃণা 3

শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের এই জার্নিটা অডিশন থেকে শুরু হয়েছিল। তারপর সিলেকশন রাউন্ড, পারফরম্যান্সের পর্ব পেরিয়ে ফিনালেতে এসে পৌঁছেছে। পুরো জার্নিটায় আমরা একটা পরিবার হয়ে উঠতে পেরেছি। এমন কিছু মুহূর্ত, এমন কিছু স্মৃতি তৈরি হয়েছে যেগুলো কোন‌ওদিন ভোলা যাবে না।” সঙ্গে যোগ করেন, “গ্র্যান্ড ফিনালের দুটি রাউন্ডে কম্পিটিশন অন্যমাত্রায় যাবে। প্রতিটা বাচ্চাই দিনরাত পরিশ্রম করেছে। এদের প্রত্যেকের পরিশ্রম পর্দায় প্রতিফলিত হবে। সকলকে অনুরোধ করব, গ্র্যান্ড ফিনালে মিস করবেন না। তাহলে এই ছোট বাচ্চাদের সততা, পরিশ্রমটাকে মিস করবেন।”

শোয়ের অন্যতম ক্যাপ্টেন তৃণা সাহা। নিজের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রাঞ্জল ছিলেন তিনি। কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে জানান, “প্রথমবার নন-ফিকশনে কাজ করাটা ভীষণভাবে এনজয় করেছি। আমরা যে সিরিয়াল বা সিনেমায় অভিনয় করি, সেখানে পুরোটাই scripted থাকে। এখানে সবকিছুই ভীষণ রিয়েল ছিল। রিয়েল ইমোশন, হাসি, কান্না, রাগ। সবকিছুই এতটা রিয়েল বলেই এতটা এনজয় করেছি।”

প্রশ্ন করেছিলাম খুদে প্রতিযোগীদের সম্পর্কে। তৃণার কথায়, “ওরা যে ধরণের পরিশ্রম ও একাগ্রতা নিয়ে দিনরাত খাটত, আমরা ওই বয়সে কোন‌ওদিন পারতাম না। আমরা যখন ওদের বয়েসী ছিলাম, পড়ার সময় পড়তাম, নিজের মতো খেলতাম, ঘুমিয়ে পড়তাম। টেনশন-ফ্রি জীবন ছিল। ওরা যে টেনশনটা নিয়েছে, জাস্ট ভাবা যায় না। প্রত্যেকদিন, আমি যখন‌ই আসতাম, দেখতাম ওরা প্র্যাকটিস করছে। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে, ওরা উত্তর দিত, না না, প্র্যাকটিস করে খাব। এই হচ্ছে ওদের level of dedication !”

“সত্যি বলতে কী, বাচ্চাদের থেকে কত কিছু যে শিখেছি–পরিশ্রম, শৃঙ্খলাবোধ সব ! আমরা ওদের কতটা শেখাতে পেরেছি জানি না। বরং আমি বলবো, ওরা আমাদের বেশি শিখিয়েছে। এই পাঁচ মাসে আমরা ওদের growth, emotion, maturity দেখেছি। চোখের সামনে ওদের সবার বড় হয়ে ওঠা লক্ষ্য করেছি। ওরা সবাই নিজের মতো করে বেড়ে উঠেছে। ওদের পাশে আমাদের পুরো টিম সবসময় থাকবে।”–জানান আবেগাপ্লুত তৃণা।

এই সেটে আর আসতে পারবেন না, প্রতিদিন বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা হবে না এটা ভেবে রীতিমতো বিষন্ন বোধ করেন বলে জানালেন তিনি। “তবে, ওদের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছে। ওরা আমাকে ফোন করে। আমি ওদের সঙ্গে ফোনে গল্প করি। এমনকী আমাদের একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান‌ও হয়। এরকম‌ও হয়েছে যে আমি এক-দু’দিন ওদেরকে নিয়ে বেরিয়েও ছিলাম। আমি চাই এগুলো যেন বজায় থাকে।”–জানান তৃণা।

শোয়ের প্রযোজক ও পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তৃণা হাসতে হাসতে জানান, “আমরা প্রচুর ঝগড়া করেছি। আসলে আমার এটা প্রথম রিয়েলিটি শো। আর শুভঙ্করদা যথেষ্টই অভিজ্ঞ এই বিষয়টায়। শুভঙ্করদার সঙ্গে মারাত্মক ঝগড়া, মান-অভিমান সব হয়েছে।” তারপরই বললেন, “আসলে, ব্যক্তিগতভাবে খুব involve হয়ে গিয়েছিলাম প্রত্যেকের সঙ্গে। প্রতিযোগীদের পাশাপাশি লাড্ডু-উদিতার সঙ্গেও দারুণ সময় কাটিয়েছি। এতে কাজ ভালো হওয়ার পাশাপাশি কোথাও একটা আবেগজনিত সমস্যাও হয় !”

সবশেষে লাড্ডু আর উদিতার‌ কথা। শো শেষ হ‌ওয়ায় মন খারাপ ওদেরও। দুজনেই জানায়, “সকলকে মিস করব। তবে ভালো কিছু বন্ধুও তৈরি হয়েছে। আর একনম্বর শোয়ের সঞ্চালক হতে পেরেছি। ভীষণ ভালো লাগছে।” আর যারা এই শোয়ের সবকিছু, সেই  ফিনালের ছোট ছোট প্রতিযোগীরা রীতিমতো আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। সকলেই একবাক্যে জানাল, “আমরা একটুও ভয় পাচ্ছি না। আর‌ও ভালো করে ডান্স করতে চাই।” ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র গ্র্যান্ড ফিনালে দেখবেন আগামিকাল ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ (শনিবার) ও ১ জানুয়ারি ২০২৩ (রবিবার), স্টার জলসায় রাত ৯.৩০ মিনিটে।