Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

ওয়েব দুনিয়ায় তারানাথ তান্ত্রিক

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। এই সপ্তাহে তারানাথ তান্ত্রিক। লিখেছেন মন্দিরা পান্ডা

তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ। মধ্য পঞ্চাশের এই হস্তবিশারদকে সকলে চেনে তারানাথ তান্ত্রিক নামে। বংশগত পদবী চক্রবর্তী। বাবার নাম আদিনাথ। তাঁর জন্মের পূর্বে বাড়িতে অমরজীবন নামে এক রহস্যময় ব্যক্তি আসেন। তিনি তারানাথের বাবাকে ছেলের সম্পর্কে ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন যে তাদের বংশে এক তান্ত্রিকের জন্ম হবে। সে সময় আকাশে নীলরঙের উল্কা দেখা যাবে। অমরজীবনের কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলতে শুরু করে। আপাতভাবে হাত দেখে কোষ্ঠী বিচার করে দিন গুজরান করলেও, জ্যোতিষীর খোলস ছাড়লে তারানাথ রীতিমতো একজন সিদ্ধপুরুষ। বীরভূমের এক শ্মশানে মাতু পাগলি নামের এক রহস্যময়ী সাধিকার কাছে মহাডামর সাধনা করেন তারানাথ। পরে বরাকরের অরণ্যে তিনি লাভ করেন মধুসুন্দরী দেবীর বর।

এ প্রজন্ম সাহিত্য কাহিনির তারানাথ তান্ত্রিক অপেক্ষা সানডে সাসপেন্স খ্যাত তারানাথকে বেশি চেনে। অস্বীকার করা যাবে না, অডিও মাধ্যমে তারানাথকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে রেডিও মির্চির সানডে সাসপেন্স ও তারানাথ চরিত্রে মীরের কণ্ঠাভিনয়। যাই হোক, জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তারানাথ মহাশয় যে বইয়ের পাতার বাইরে একের পর এক গণ্ডি অতিক্রম করবেন, তাতে আর সন্দেহ কী ! তাই ওয়েব দুনিয়াতেও অভিষেক ঘটেছে তাঁর। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় এই সিরিজ। পরিচালনা করেছেন কিউ। সাদা-কালো এই সিরিজের মোট দশটি পর্ব। বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দুটি এবং তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছয়টি ছোট গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই সিরিজ। কিউর সঙ্গে আগাগোড়া বিষয়টিতে যুক্ত থাকেন রিসার্চার সুরজিৎ সেন। এ বাবদ কিউ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। চার বছর ব্যাপী রিসার্চের পর হইচই এর পর্দায় এই সিরিজের আত্মপ্রকাশ। ছবিতে প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে যেমন কিউর নিজস্ব পরীক্ষানিরীক্ষা থাকে, এখানেও তার নির্যাস পাবেন দর্শক। অন্যদিকে সেট, মেকআপ, সঙ্গীত ইত্যাদি ক্ষেত্রে সময়কে নিপুণভাবে ধরেন কিউ।

Images 7 1
ওয়েব দুনিয়ায় তারানাথ তান্ত্রিক 4

প্রসঙ্গত, এর আগে টেলি সিরিয়ালে তারানাথ তান্ত্রিকের ভূমিকায় টলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরীকে পাই আমরা। সেটি প্রচারিত হয়েছিল কালার্স বাংলায়। ওয়েব সিরিজে তারানাথের যুবক বয়সের চরিত্রটিতে রয়েছেন কৌশিক রায় এবং বয়স্ক তারানাথের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতা এবং লেখক জয়ন্ত কৃপালনি। এ ছাড়াও এই সিরিজে অভিনয় করেছেন জয়রাজ ভট্টাচার্য, কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্বেতা চৌধুরী, উমা বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতাঞ্জলি ড্যাং, সত্রাজিত সরকার সহ আরও অনেকে।

সময়টা ১৯৩৯। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। সকলেরই কান তখন রেডিওর দিকে। খবর আসে, হিটলারের সেনাবাহিনী পোল্যান্ড দখল করে ফেলেছে। জনৈক দুই বন্ধু এই নিয়েই আলোচনায়। দুশ্চিন্তা প্রকট তাদের কথাবার্তায়। একদিকে দুর্ভিক্ষ, আর একদিকে যুদ্ধ। মৃত্যুই যেন অনিবার্য। এই অবস্থা থেকে মুক্তির কি কোনও উপায় নেই? ভবিষ্যতে কী আছে, কে জানে ? জানেন একজন। তিনি তারানাথ তান্ত্রিক। অতঃপর দুই বন্ধু চলেছে তারানাথের সঙ্গে দেখা করতে। যদিও এক বন্ধুর কাছে তা ‘বোগাস’। কিন্তু অপর জন নাছোড়বান্দা। দু’জনে এসে দাঁডায় তারানাথের দুয়ারে। সাইনবোর্ডে লেখা–তারানাথ জ্যোতির্বিদ্যাবিনোদ, হাত দেখানো সহ কোষ্ঠী বিচার করা হয়।

Images 6
ওয়েব দুনিয়ায় তারানাথ তান্ত্রিক 5

ইনি এমন একজন তন্ত্রসাধক, যাঁর কাছে বড় বড় রাজা-মহারাজার সার্টিফিকেট আছে। তা সত্বেও, এনার কাছে হাত দেখানোর খরচা নিমিত্ত মাত্র। বড়জোড় একটা সিগারেট চেয়ে বসতে পারেন তান্ত্রিক মহাশয়। পরিবর্তে গালভরা গল্প। একটার পর একটা। লোকটার বড় অদ্ভুত ইতিহাস। পরিবারে তিনি ছাড়া আর একজন মাত্র, কন্যা চারী। বিশ্বাস অবিশ্বাসে দোদুল্যমান দুই বন্ধুকে তারানাথ বলেন, ”গল্প নয়। সত্যি কথা। আর সেটা মারাত্নক।” এরপর চলে অলৌকিক আর অতিলৌকিক দুনিয়ায় আনাগোনা। তারানাথ বলে ওঠেন, ”মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।” তারানাথের গল্পে দুই বন্ধু এতটাই মশগুল হয়ে যায় যে, বাড়ি যাওয়ার কথা তাদের মনেই থাকে না। তারানাথকে যে ‘বোগাস’ বলেছিল, সেই আবার যাওয়ার সময় বলে ওঠে, ”আচ্ছা! আবার আমরা কবে আসবো? ” বলা বাহুল্য দর্শকও এই মনোভাব নিয়েই দেখতে থাকেন তারানাথের গল্প।