ওয়েব সিরিজে অবৈধ অভিবাসী সমস্যা
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। জি ফাইভে স্ট্রিমিং হচ্ছে ‘ইউনাইটেড কাচ্চে’। দেখুন সুনীল গ্রোভারের কামাল করা অভিনয়। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে পাঞ্জাবের ছোট এক গ্রাম থেকে ইংল্যান্ডে যায় তেজেন্দর সিং ওরফে ট্যাংগো। উদ্দেশ্য তার বাবার ইচ্ছাপূরণ। কিন্তু ব্যাপারটা দূর থেকে যতটা উজ্জ্বল মনে হয়, ততটা যে নয়, সেটা ভিসার মেয়াদ ফুরোলেই বুঝতে পারে ট্যাংগো। তার অস্তিত্বের ওপর ট্যাগলাইন পড়ে ‘কাচ্চে’, যার অর্থ illegal immigrant (অবৈধ অভিবাসী)। এরপর থেকেই ট্যাংগোর জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, যেমনটা ঘটে বিদেশে বেআইনী ভাবে বসবাসকারী যে কোনও এশীয় ইমিগ্র্যান্ট তথা অভিবাসীর ক্ষেত্রে। ক্রিয়েটর মনোজ সভরয়াল এবং পরিচালক মানব শায়ের ভাবনা নিঃসন্দেহে অভিনব, প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়। ওয়েব সিরিজে এমন কাহিনি এই প্রথম, যার কৃতিত্ব নিশ্চয়ই ওঁদের।
জি ফাইভে গত মার্চেই শুরু হয়েছে ‘ইউনাইটেড কাচ্চে’। বিষয়টা শুরুতেই বলেছি, যা সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেই এক জ্বলন্ত সমস্যা। বিশেষত, ইউরোপ ও আমেরিকায় গিয়ে সেটলড হবার স্বপ্ন দেখা এশীয় দেশগুলির মানুষজনের পক্ষে বিষয়টা অতি চেনা, জটিল ও অপ্রীতিকর। আইনের ফাঁক দিয়ে চেষ্টা করে, বেআইনী ভাবে বিদেশে বসবাস করার মাশুল দিতে হয়েছে, চরম ও কঠিন শাস্তির মধ্যে দিয়ে, এমন ঘটনা অসংখ্য। এখানে অবশ্য বিষয়টিকে কমেডির মোড়কেই হাজির করতে চেয়েছেন নির্মাতারা। সম্ভবত, পরিবেশন ভঙ্গির কারণেই বিষয়টি কিছুটা তার গুরুত্ব হারায়। যদিও অভিনয়ে ত্রুটি রাখেননি অভিনেতারা।
আর এই প্রসঙ্গে প্রথম নামটা নিশ্চিতভাবেই ট্যাংগো রূপী সুনীল গ্রোভার। পৈতৃক বাড়িটিকে বন্ধক রেখে ইংল্যান্ডে যায় তেজেন্দর সিং। লন্ডনে পা রেখেই সে আবিষ্কার করে, সেখানকার জীবনযাত্রা এবং আইনের জটিল বিষয়টা। তার মধুর কল্পনা কঠোর বাস্তবের আঘাতে ভেঙে পড়তে দেরি হয় না। কপিল শর্মার সিটকমে নানা চরিত্রে যে সুনীলকে আমরা পাই, তেজেন্দর সিং থেকে ট্যাংগো হয়ে ওঠার বিবর্তনে দর্শক একেবারে ভিন্ন মাত্রায় সুনীলকে আবিষ্কার করবেন। একদিকে লন্ডনের ইমিগ্র্যান্ট সংক্রান্ত আধিকারিকদের ভয়। উল্টোদিকে তার পাকিস্তানী বাড়িওয়ালা সাজ্জাদ (মনু ঋষি চাড্ডা) ও জারিনের (নয়নী দীক্ষিত) সংবেদনশীল ব্যবহার। এই জায়গাগুলিতে সুনীল অনবদ্য। বাকিরাও সমমাত্রায় দক্ষতা দেখান।
এছাড়াও আছে তার সুন্দরী গুজরাতি প্রতিবেশী ডেইজি (সপনা পাব্বি), যার সঙ্গে এক অন্য আবেগে জড়িয়ে পড়ে ট্যাংগো। রয়েছে তার বাংলাদেশী রুমমেট যমজ ভাই শ্যাম্পি ও বাম্পি (নিখিল বিজয়)। সুনীলের সঙ্গে তাল রেখেই এঁরাও চরিত্রানুগ অভিনয় করেছেন। বিশেষ নজরে পড়ে সুনীল ও সপনার রসায়ন। চিত্রনাট্যের দুর্বলতা ঢাকা পড়ে যায় ওঁদের অভিনয়ে। অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে আছেন দীক্ষা জুনেজা, নীলু কোহলি, পূজন ছাবড়া এবং সতীশ শাহ। গল্প লিখেছেন গৌরব শর্মা, মনোজ সভরয়াল, আলি হাজি, খুশ মল্লিক, বীর পাঞ্চাল, সুদর্শন পারীক, রবি রা ও পার্থ আহুজা। পরিচালনায় মানব শায়ের সঙ্গী হয়েছেন ধরমপাল ঠাকুর। আপাতত ৮ পর্বের প্রথম সিজন স্ট্রিমিং হচ্ছে জি ফাইভে।