কামিনের পর কুত্তে নিয়ে ভরদ্বাজ পরিবার
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। বিশাল ভরদ্বাজ পুত্র পরিচালক আসমান ভরদ্বাজের ডেবিউ ছবি ‘কুত্তে’ নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
বাবা কামিনে। ছেলে কুত্তে। আরে, না না খামোখা গালি দেব কেন ? এ হলো ঐতিহ্য পরম্পরায় দুটি হিন্দি ছবির নাম ! বাবা বিশাল ভরদ্বাজ বানিয়েছিলেন ‘কামিনে’। ছেলে আসমান ভরদ্বাজ বানালেন ‘কুত্তে’। মজা ছেড়ে আসল কথায় আসি। আগামী বছরের যথেষ্ট আলোচিত ছবিগুলির মধ্যেই আছে বিশাল-পুত্র আসমানের ডেবিউ ছবি ‘কুত্তে’। বিশাল বলিউডের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষ। আর পরিচালক হিসেবে তো শুরু থেকেই ব্যতিক্রমী। বাবার প্রতিভা ও গুণের কতটা পেয়েছেন আসমান, সে তো সময়ই বলবে। তবে, এই ব্ল্যাক কমেডি থ্রিলার নিয়ে এই মুহূর্তে আগ্রহ যে তুঙ্গে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশাল ভরদ্বাজ ফিল্মস, টি সিরিজ ফিল্মস এবং লাভ ফিল্মস-এর ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ, রেখা ভরদ্বাজ, অঙ্কুর গর্গ, লাভ রঞ্জন, ভূষণ কুমার ও কৃষাণ কুমার। ছবির গান লিখেছেন গুলজার। সঙ্গীত পরিচালনা বিশাল ভরদ্বাজ। গুলজার-বিশাল জুটির গান মানেই ধামাকাদার কিছু। অতএব এই নিয়েও প্রত্যাশা যথেষ্ট। ছবির পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে যশরাজ ফিল্মস।
ছেলে আসমানের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে কার্যতই আবেগাপ্লুত বিশাল বলেছেন, ‘কুত্তে’ আমার কাছে খুবই স্পেশাল একটি প্রোজেক্ট ! আসমানের সঙ্গে একযোগে প্রথম কাজ করতে চলেছি আমি। প্রচন্ড উত্তেজনার মধ্যে রয়েছি এই কথা ভেবে, যে, কেমন দাঁড়াবে এই ছবি। এছাড়াও এই প্রথম লাভ ফিল্মস ও বিশাল ভরদ্বাজ ফিল্মস যৌথভাবে কাজ করতে চলেছে। এই সংযুক্তির বিষয়েও আমার উত্তেজনা তুঙ্গে। প্রত্যাশার মাত্রা অনেকটাই উঁচু। সত্যি বলতে কী, ফিল্মমেকিংয়ের বিষয়ে লাভের সাহসী চিন্তাভাবনা দেখে, আমি তো ওর ভক্ত হয়ে গেছি। ওর কমার্শিয়াল বোধেরও তারিফ করি আমি। প্রসঙ্গত, দ্য স্কুল অফ ভিসুয়াল আর্টস, এনওয়াইসি থেকে ফিল্মমেকিং-এ স্নাতকপ্রাপ্ত আসমান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবেও। বিশালের অধীনে তিনি ‘সাত খুন মাফ’, ‘মত্রু কী বিজলী কা মন্ডলা’, ‘পটাখা’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
ব্ল্যাক কমেডি মানেই প্রচুর শেড। অপরাধের জাল বিস্তার লাভ করবে গল্পের পরতে পরতে। চরিত্রগুলির বিচরণও হবে সেই অনুষঙ্গেই। একদিকে চরিত্রগুলির ধূসরতা, অন্যদিকে আলো-আঁধারি পরিবেশ সৃষ্টি। শোনা যাচ্ছে, ‘কুত্তে’-র আপাদমস্তক ঘিরে রহস্যের জাল নির্মাণের কাজটি দুর্দান্তভাবে ঘটেছে সিনেমাটোগ্রাফার ফরহাদ আহমেদ দেহলভির ক্যামেরায়। তাঁর লেন্স পর্দায় বরাবরই চোখ টেনে নেওয়া কাজ করে। এ ছবির অন্ধকার দৃশ্যগুলি কীভাবে সাজান ফরহাদ, তা দেখার অপেক্ষা থাকবে নিঃসন্দেহে। ইতিমধ্যেই এর কিছুটা ঝলক দেখেছে দর্শক গত ২০ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ট্রেলারে।
বস্তুত, ‘কুত্তে’-র ট্রেলার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আগ্রহের পারদ আর একটু উর্দ্ধে ওঠে। সিনেমাটোগ্রাফির কথা তো আগেই বলেছি। সংলাপ এককথায় চাবুক ! ‘কামিনে’-র কথা মনে পড়তে পারে দর্শকের। এখানে তিনটি পর্বে ছবির গল্প বিন্যস্ত। এক একটি পর্বে এক একটি চরিত্রের অন্ধকার দিকগুলি উন্মোচিত হবে। এখানে সাদা বা কালো বলে কিছু নেই। সবটাই ধূসর। এই প্রেক্ষিতেই জেনে নেওয়া দরকার, ‘কুত্তে’-র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন কাপুর, টাবু, নাসিরুদ্দিন শাহ, রাধিকা মদন, কঙ্কনা সেনশর্মা, কুমুদ মিশ্র ও শার্দুল ভরদ্বাজ প্রমুখ।
অর্জুন কাপুর এই প্রথম অভিনয় করতে চলেছেন বিশাল ভরদ্বাজ ফিল্মস-এর ব্যানারে। বস্তুত তাঁকে যথার্থই সৌভাগ্যবান বলা যায়, কারণ, তিনি স্ক্রিন শেয়ার করছেন নাসিরুদ্দিন শাহ, টাবু, কঙ্কনা সেনশর্মা প্রমুখের মতো অভিনেতার সঙ্গে। প্রযোজক বনি কাপুরের পুত্র, মধ্য মেধার অর্জুন এ যাবৎকাল বান্ধবী মালাইকা অরোরা প্রসঙ্গেই যতটুকু যা খবরে থেকেছেন। ছবি হিট হোক বা ফ্লপ, অর্জুনের অভিনয় নিয়ে তেমন উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায়নি এখনও দর্শককে। ‘কুত্তে’ অর্জুন সম্পর্কে ধারণা কতটুকু বদলায়, তা দেখার অপেক্ষায় হিন্দি ছবির দর্শক। ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে তিনি কার্যত স্বীকারই করে নেন, ‘কুত্তে’ তাঁর দশ বছরের কেরিয়ারে এক বিরাট সুযোগ নিয়ে এসেছে। এ ছবিতে তিনি এক পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বিশালের ছবিতে যে মনস্তাত্বিক ছায়াগুলি থাকে, সেখানে অর্জুন কতটা ফিট করেন, দেখা যাক ! শোনা যাচ্ছে, আসমান শুরু থেকেই এই চরিত্রে অর্জুনকেই চেয়েছিলেন। এটা নিশ্চয়ই অর্জুনের জন্য অনেকটা ইতিবাচক হয়েছে। এ ছাড়া কুমুদ মিশ্র, শার্দুল ভরদ্বাজের ক্ষেত্রেও বিশালের প্রযোজনায় কাজ করার প্রথম অভিজ্ঞতা হতে চলেছে এই ছবি।
টাবু বরাবরই বিশালের প্রিয় অভিনেতার তালিকায়। টাবু নিঃসন্দেহে তার হকদার। আমরা ভুলবো না ‘মাচিস’, ‘মকবুল’, ‘হায়দর’ ও ‘তলোয়ার’ ছবিতে টাবুর অভিনয়। ‘মকবুল’ ও ‘হায়দর’ একেবারে বিশালের সিগনেচার ছবি। বিশাল পরিচালিত এই দুটি ছবিই শেকসপিয়র অনুপ্রাণিত এবং মেকিং, অভিনয় সবক্ষেত্রেই অতুলনীয়। দুটিতেই টাবু অসাধারণ। ‘মাচিস’-এ বিশাল ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক। আর ‘তলোয়ার’-এর অন্যতম প্রযোজক তিনি। এই প্রত্যেকটি ছবিই যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় এবং সেখানে টাবুর অভিনয় দক্ষতা পুরোমাত্রায় কাজে লাগান বিশাল। এছাড়া আপকামিং ‘খুফিয়া’, যার প্রযোজনা, পরিচালনা ও সঙ্গীত পরিচালনা সবটাই বিশাল ভরদ্বাজের। এই ছবিতেও টাবু অভিনয় করেছেন। অতএব ‘কুত্তে’-কে ঘিরে আরও একবার টাবুর অভিনয় দেখতে উৎসাহ থাকবেই। টাবুও একজন পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই ছবিতে।
ভারতীয় সিনেমায় জীবন্ত কিংবদন্তি নাসিরুদ্দিন শাহ। তাঁর কাছে আমাদের যত প্রাপ্তি, তত প্রত্যাশা। প্রতি ছবিতেই, আজও, এই বয়সেও চমকে দেন তিনি আমাদের। ‘সাত খুন মাফ’, ‘ইশকিয়া’, ‘ওঙ্কারা’, ‘দশ কাহানিয়া’, ‘দেড় ইশকিয়া’ ছবিতে নাসিরুদ্দিনকে নিয়ে কাজ করেছেন বিশাল। প্রসঙ্গত, নাসিরের অভিনয় পর্দায় তুলে আনার ক্ষেত্রেও বিশাল দর্শকের অভিজ্ঞতায় নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করেছেন। ‘ওঙ্কারা’ যেমন সর্বকালের সেরা হিন্দি ছবির একটি। তেমনই ‘ইশকিয়া’-য় এক নতুন নাসিরকে পাই আমরা। ‘কুত্তে’-র গল্পে বিশাল-পুত্র আসমান নাসিরকে কতটা কাজে লাগান, দেখার অপেক্ষা থাকবে। যদিও, তাঁর নাকি মাত্র দুদিনের শুটিং শিডিউল ছিল। নাসিরের বক্তব্য, সেইজন্যই রাজি হয়েছেন তিনি। বাবা-ছেলের ছবির ‘কুত্তে’-‘কামিনে’ নামকরণ নিয়েও বেশ খানিকটা রসিকতা করেছেন নাসির। তবে, ছবিতে তাঁর উপস্থিতির সময়কাল কতটুকু, সেটা নাসিরুদ্দিন শাহের ক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। তিনি আছেন, এটাই যথেষ্ট।
‘এক থি ডায়েন’, ‘ওঙ্কারা’, ‘সাত খুন মাফ’, ‘তলোয়ার’-এর পর আবার বিশাল প্রযোজিত ছবিতে কঙ্কনা। অত্যন্ত প্রতিভাময়ী, সমান্তরাল ছবির ক্ষেত্রে প্রথমসারির এই অভিনেত্রী তাঁর অভিনয়ে কখনও বিমুখ করেন না দর্শককে। বলিউডে তিনি টিকেই আছেন নিজের সংবেদনশীল ও শক্তিশালী অভিনয় ক্ষমতার গুণে। ‘ওঙ্কারা’ কঙ্কনার কেরিয়ারে এক দুর্দান্ত সংযোজন নিঃসন্দেহে। শোনা যাচ্ছে ‘কুত্তে’-তে আসমান ‘ওঙ্কারা’র মতোই এক জটিল অবতারে কঙ্কনাকে হাজির করেছেন। ফলে, কঙ্কনাকে নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহ আছে দর্শকমহলে। ‘কুত্তে’ রাধিকা মদনের ক্ষেত্রে বিশালের সঙ্গে দ্বিতীয় কাজ। এর আগে তিনি ‘পটাখা’-য় কাজ করেছেন বিশালের পরিচালনায়। এই ছবিতেই বলিউডে ডেবিউ করেন তিনি এবং প্রথম ছবিতেই জিতে নেন ‘স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিমেল ডেবিউ’ ! তাই তাঁর ওপরেও কিছুটা ভরসা নিশ্চয়ই করা যায়। আগামী ১৩ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘কুত্তে’।