খলচরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। ‘নটী বিনোদিনী’ থেকে ‘খেলনা বাড়ি’-র সিমি। নানা ধরনের চরিত্রে নিজের প্রতিভার ব্যাপ্তি প্রকাশ করেছেন স্বাগতা সেন। আজ তাঁরই মুখোমুখি অজন্তা চৌধুরী।
পরিবারে অভিনয়ের ধারা কী ছিল? নাকি তুমিই প্রথম? এক্ষেত্রে পরিবার থেকে কতটা উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছ ?
◾অভিনয়ে আমিই প্রথম। ইন ফ্যাক্ট, আমারও এই পেশায় আসার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। ঘটনাচক্রে এসে পড়েছি বলতে পারো। তবে, প্রথম থেকেই বাবা-মায়ের সহযোগিতা পেয়েছি। প্রথম দিকে তাঁরা এই পেশাকে ঘিরে আমার কেরিয়ার নিয়ে কিছুটা দুর্ভাবনায় থাকলেও কখনও বাধা দেননি। বরং, উৎসাহই দিয়েছেন।
অভিনয় জগতে পা রাখা ঠিক কীভাবে ?
◾ এই পেশায় আসার পরিকল্পনা ছিল না, সে তো আগেই বলেছি। ডায়ালিসিস টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে একটি চাকরিতে ঢুকি। মন দিয়ে কাজটাও করছিলাম। সেই সময় আমার কাছে মডেলিংয়ের অফার আসে। সত্যি কথা বলতে কী, মডেলিং সম্পর্কে কোনও ধারণাই আমার ছিল না। গুগুল ঘেঁটে দেখেছিলাম মডেলিংয়ের যোগ্যতা কী কী, কোথায় ট্রেনিং নেওয়া যায় ইত্যাদি। এছাড়া আমি সাজগোজ করতে একেবারেই পছন্দ করি না। সব মিলিয়ে, এই পেশা সম্পর্কে খুব একটা উৎসাহিত ছিলাম না। এরই মধ্যে একজন পরিচিত ফটোগ্রাফার আগমনী শ্যুটের কাজ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু-কিন্তু করে কাজটা করেও দিলাম। প্রশংসিতও হলো কাজটা।
এরপর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মডেলিংয়ের অফার আসতে শুরু করল। আমি কিন্তু তখনও পুরোদমে হসপিটালে চাকরি করছি। তারই ফাঁকে মডেলিংয়ের কাজ করতাম। ভালোও লাগতে শুরু করল। আসলে হসপিটালের কাজের ফাঁকে এই কাজটা আমার কাছে রিল্যাক্সেসনের মতো ছিল। আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেললাম। চাকরি আর মডেলিং–দুটোই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পরে একসময় দেখলাম দু-নৌকায় পা দিয়ে আর চলা যাচ্ছে না। তখন চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি মডেলিংয়ে চলে আসি। মডেলিং করতে করতেই ‘নটী বিনোদিনী’-র সুযোগ আসে। তারপর একের পর এক কাজ। এভাবেই চলছে।
তোমাকে আমরা মূলত খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি। যেমন ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ বা এখন ‘খেলনা বাড়ি’-তে। এটা কি নিজের সিদ্ধান্ত ? নাকি এভাবেই সুযোগগুলো এসেছে ?
◾ একেবারেই আমার নিজের সিদ্ধান্ত নয়। সুযোগ এসেছে, করেছি, এই আর কি ! তবে, প্রথম দিকে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে আমার একেবারেই ছিল না। পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলে সহজে দর্শকের ভালোবাসা পাওয়া যায়, এটা তো সত্যি ! তবে, কেরিয়ারের শুরুতে আমি দুটো সিরিয়ালেই পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি–নটী বিনোদিনী এবং মঙ্গলচণ্ডী। ‘মঙ্গলচণ্ডী’-তে স্বয়ং মঙ্গলচণ্ডীর ভূমিকায়। সেখান থেকে একেবারে খলনায়িকা। মনে দ্বিধা ছিল। চ্যানেল থেকে বলেছিল, এই চরিত্রটিতে কাজ করার সুযোগ আছে। ভাবলাম, অভিজ্ঞতা তো হবে ! তাই রাজি হলাম। এটা বলতেই হবে, ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’-র রোহিনী চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি। দেখলাম, খলনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেও সাড়া পাচ্ছি। তারপর আমি সাহস পেয়েছি সিমির চরিত্রে অভিনয় করার ।
সুযোগ পেলে পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করবে?
◾ সব চরিত্রই মিলেমিশে করতে চাই। পজেটিভ চরিত্র মানেই তো সে ভালো হবে। গল্পে ‘ভালো’ দেখানো হবে তাকে। নিজেকে ‘ভালো’ দেখাতে আমিও চাই। তারপরও বলব, আমি ভালো-মন্দ সব চরিত্রেই অভিনয় করতে সমানভাবে আগ্রহী।
অনেকেই বলেন, নেগেটিভ চরিত্র অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়। এ ব্যাপারে তোমার কি মত?
◾ একদমই তাই। রোহিনী চরিত্রটার কথাই যদি বলি, শুনেছিলাম এতে অনেক বেশি অভিনয় দেখানোর সুযোগ পাব। প্রচুর শেড থাকবে চরিত্রটিতে, সেইগুলি ভাল করে ফুটিয়ে তোলার জায়গা পাব। বলতে দ্বিধা নেই, সেটা পেয়েওছি। এখন ‘খেলনা বাড়ি’-তে যে চরিত্রটা করছি, সেখানেও আমি দেখেছি ভালো লাগছে অভিনয় করতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ঝগড়া করতে হয় ঠিকই। কিন্তু, তার একটা প্রস্তুতিও লাগে। সেই প্রস্তুতি পর্বটাই তো একজন অভিনেতার নিজের ক্ষমতাকে আবিষ্কার করার জায়গা ! এই ব্যাপারটা দারুণ উপভোগ করি আমি।
বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে কাজ করেছ। পরিচিতিও পেয়েছ। খলনায়িকা হিসেবে দর্শকদের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছ কখনও?
◾তা হয়েছি দু’একবার। গ্রামে মঞ্চানুষ্ঠান করতে গিয়েছি৷। আমাকে দেখে ওখানকার মহিলারা বলেছেন, তোমাকে দেখলে তো ভালোই মনে হয়। দেখতেও সুন্দর! তো, তুমি ভাগ্যশ্রীর (ভাগ্যলক্ষ্মী) সঙ্গে অত খারাপ ব্যবহার করো কেন ? ওরকম আর করো না। আর একবার শহরের এক শপিংমলে আমি শপিং করছি, ট্রলি ঠেলে নিয়ে চলেছি। এমন সময় হঠাৎ এক মহিলা আমার হাত সজোরে ধরে, আমাকে পুরো ওঁর দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রোহিনী না? আমি বললাম, না, মানে আমি ওই চরিত্রটি করছি। উনি বললেন, কিছু মনে করো না, তোমাকে আমার একেবারে ভালো লাগে না। তুমি ভাগ্যশ্রীর সঙ্গে এতটা খারাপ ব্যবহার করছ কি করে? কারওর পক্ষে সম্ভব এতটা খারাপ হওয়া ? তোমার নিজের বাড়ির লোক হলে এরকম করতে পারতে? আমি বললাম, এটা তো স্ক্রিপ্টের ব্যাপার, আমাকে যা বলা হয় তাই করি। এটুকু বলে কোনওক্রমে ওনার হাত থেকে মুক্তি পেলাম। তবে, উনি এত জোরে আমার হাতটা ধরেছিলেন যে পুরো খামচির মতো দাগ পড়ে গিয়েছিল।
একটি চরিত্রে নির্বাচিত হবার পর প্রস্তুতিপর্ব কীভাবে চলে?
◾’নটী বিনোদিনী’ চরিত্রে অভিনয় করার আগে নটী বিনোদিনী সম্পর্কে সামান্যই জানতাম। চরিত্রটিতে অভিনয় করার জন্য আমি এই বিষয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করি। ‘মঙ্গলচণ্ডী’-র সময়ও আমি যথেষ্ট চর্চা করার পরই অভিনয় করি। এই সুযোগগুলো না আসলে আমি হয়তো এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হতাম না। রোহিনী চরিত্রটার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি নিজে থেকে ওরকম তেড়েফুঁড়ে ঝগড়া করতে বা কথা শোনাতে পারি না, ওটাও একটু রপ্ত করতে হয়েছে বৈকি (হাসি)। সিমির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে, সিমি আবার তার সঙ্গে খুবই লোভী প্রকৃতিরও। এরকম চরিত্র আমি বাস্তবেও দেখেছি। দেখাটাও প্রস্তুতির একটা অংশ।
এই ইউনিটের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
◾ ভীষণ ভালো। ‘খেলনা বাড়ি’-তে বেশ কয়েকজন সিনিয়র আর্টিস্ট যেমন রয়েছেন, তেমনই আমরা ছোটরাও আছি বেশ কয়েকজন। একটা বড়দের গ্রুপ আর একটা আমাদের অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম ! প্রথম প্রথম দুটো গ্রুপ আলাদা ছিল। এখন মিলেমিশে একাকার। সব সময় ইউনিটে কিছু না কিছু সেলিব্রেশন চলতেই থাকে। ওই নিয়েই মেতে থাকি আমরা। এককথায়, বন্ডিংটা দারুণ। আর পরিচালকের সঙ্গে সর্ম্পক তো ভীষণ বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি যতগুলো কাজ করেছি, তার মধ্যে আমার দেখা একমাত্র পরিচালক, যিনি বিন্দুমাত্র বকাঝকা করেন না। আমাদের সবারই খুব প্রিয় উনি।
আগামী দিনে তোমায় টেলিভিশন ছাড়া অন্য মাধ্যমে কী দেখতে পাবে দর্শক? যেমন, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে ?
◾ প্রথম কথা, মেগা সিরিয়ালে কাজ করতে করতে ওয়েব সিরিজে কাজ করাটা একটু চাপ হয়ে যায়। টাইট সিডিউল থাকে। এই কারণে দু’একটা ওয়েব সিরিজের কাজ আমি ছেড়ে দিয়েছি। যদিও পরে আমার মনে হয়েছে, ঠিক হয়নি। টাইমটা ম্যানেজ করা উচিৎ ছিল। এখন অবশ্য ঠিক করেছি, পরবর্তীতে পছন্দমতো সুযোগ এলে কাজটা করার চেষ্টা করব। ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা–সবেতেই কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার।
মেগার টিআরপি ওঠানামার ক্ষেত্রে অভিনেতাদের ভূমিকা কতটা থাকে বলে মনে করো তুমি ?
◾ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভূমিকা তো অতি অবশ্যই থাকে। তবে, তার সঙ্গে গল্পেরও একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। গল্পটা কীভাবে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।
মুম্বইতে কাজ করার ইচ্ছে আছে ?
◾হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। হিন্দি বলার ক্ষেত্রে আর একটু পোক্ত হতে হবে আমাকে। হিন্দি ভালো করে শিখে, তবেই, মুম্বইতে কাজ করতে চাই আমি।
স্বপ্নের কোনও চরিত্র ?
◾কেরিয়ারের শুরুতেই নটী বিনোদিনী চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যেটা আমার মনের খুব কাছাকাছি একটা চরিত্র ছিল। ঐতিহাসিক কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে পারলে খুব খুশি হবো। ছোটবেলায় আর্মি অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম–সেইরকম কোনও চরিত্র পেলে তো কথাই নেই। আমার পেশায় সবরকম পেশাকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ আছে–সেদিক থেকে ডাক্তার বা উকিলের চরিত্রও আমার খুব পছন্দের। স্বপ্নের চরিত্র একটা নয়, একাধিক আছে। দেখি, কতটা স্বপ্ন পূরণ হয় !