Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

গান্ধীজি নন নেতাজিই আসল দেশনায়ক

দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি নিয়ে সাম্প্রতিক ‘ভিখ’ মন্তব্যের পর গান্ধীজি আর নেতাজির মতাদর্শগত পার্থক্যকে ঘিরে নতুন প্রশ্ন তুললেন হিমাচল কন্যা। ওঁর কথায়, দেশের মানুষকে যে কোনও একজন নেতাকে বেছে নিতে হবে। হয় গান্ধীজি নয় নেতাজি। বলা বাহুল্য, এই নিয়ে আবার নতুন বিতর্কের ঝড় উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। অভিনয়টা ভালোই করতেন কঙ্গনা রানাওয়াত। নেপটিজম নিয়ে যতই গলা ফাটান তিনি, বলিউডের বেশ কিছু বড় ব্যানার ও নামী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি বরাবর। এরমধ্যে হঠাৎ করে, কোন প্রেক্ষিতে তিনি রাজনৈতিক ভাবে এত বোদ্ধা হয়ে উঠলেন জানা নেই। তবে, সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই প্রথম কঙ্গনার এই নতুন রূপটি প্রকাশ্যে আসে। এতটাই সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি যে, তাঁর এক একটি মন্তব্যকে ঘিরে তামাম বলিউড দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। সেই বিভক্তি বা বিভাজনের সূত্র ধরে শিবসেনা-বিজেপির একদা প্রীতির সম্পর্ক থেকে আজকের তিক্ততা সবই ঘুরেফিরে চলে আসে মিডিয়ায়। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়া প্রবল শক্তিশালী, আমরা সবাই জানি। ফেসবুক, টুইটারে কঙ্গনার এক একটি মত ও মন্তব্য ঘিরে বলিউড তারকা, বিশিষ্টজন থেকে আম জনতা পর্যন্ত বিতর্কের আসরে নেমে পড়েন। সেই বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জাভেদ আখতারের মতো বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্য লেখক পর্যন্ত এই দড়ি টানাটানির মধ্যে পা দিয়ে ফেলেন।

মোদ্দা কথা, সিনেমার কেরিয়ার যেদিকেই যাক, রাজনৈতিক ভাবে কঙ্গনা বারবার সংবাদ শিরোনামে আসছেন। তবে, এবার তিনি সীমা ছাড়িয়েছেন। ১৯৪৭-এ কংগ্রেস তাদের মিত্র ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ভিক্ষা করে পেয়েছিল। দেশ নাকি স্বাধীন হলো সেদিন, এই ২০১৪ সালে, বিজেপি থুড়ি মোদি সরকার আসার পর। এটা তো রীতিমতো সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করা !! দেশের কোনও নাগরিক কী এটা আইনত করতে পারেন ? প্রশ্ন হলো, এত সাহসই বা তিনি পাচ্ছেন কোথায় ? যেখান থেকেই পান, তারা কোনও দিন কাজ ফুরোলে কঙ্গনার পায়ের তলা থেকে মইটা কেড়ে নিতে পারে, এই বাস্তববুদ্ধিটাও  মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কঙ্গনার কথায়, গান্ধীজি কোনওদিন ভগত সিং ও নেতাজিকে সমর্থন করেননি। নেতাজি আর ভগত সিংই ছিলেন আসল দেশনায়ক। ওঁরা সাহসী, ওঁরা প্রানপণ লড়াই করেছেন। গান্ধীজি লড়াই নয়, বিশ্বাস করতেন এক গালে চড় খেলে আর এক গাল বাড়িয়ে দেওয়ায়। সুতরাং ওঁর কথা নয়, আমাদের জানতে হবে নেতাজির মতো বীর নেতাদের অবদান !! অনুরাগীরা বলছে, দেশের মানুষকে সঠিক ও সত্য ইতিহাস জানাবার দায়িত্ব নিয়েছেন কঙ্গনা। আর নিন্দুকেরা কঙ্গনার এইসব বক্তব্যে স্পষ্ট আরএসএস যোগাযোগ দেখছে। সে হোক, তিনি কোন সংগঠন বা কোন রাজনৈতিক দলের মুখ হয়ে উঠবেন, সেটা কঙ্গনার ব্যক্তিগত চর্চার বিষয়। শুধু স্বাধীনতা আন্দোলন, অগণিত মানুষের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা লাভের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ করুন তিনি, এটাই সমগ্র শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চাহিদা।