Tuesday, May 13, 2025
কৃষ্টি-Culture

দশ বছর পর ‘চিরদিনের গান’

বাংলা সঙ্গীত বা সামগ্রিকভাবে বাংলা সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে এই মানুষটির অবদান তুলনাহীন। নিজের গানবাজনা ও সাংবাদিকতা–দুই সূত্রেই খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে বলতে পারি, দীপনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ আমি ওঁর চলে যাওয়ার পর আর দেখিনি। সাংস্কৃতিক নানান কর্মকাণ্ড ঘিরে দীপনাথদার উৎসাহ, উদ্যোগ, আবেগ ছিল সম্পূর্ণ স্বার্থহীন, নির্মল ও নির্ভেজাল। সঙ্গীতশিল্পী ও আমার গানের গুরু প্রয়াত বন্দনা সিংহের স্বামী হিসেবে প্রথম দীপনাথদার সঙ্গে পরিচিত হই। সেই সঙ্গেই পরিচয় হয় ওঁদের ছেলে আজকের প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন, এই পুরো পরিবারটিই বরাবর বাংলা সঙ্গীত ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পূজারী হিসেবে পরিগণিত। দীপনাথদা, বন্দনাদি দুজনেই আজ আর নেই। কিন্তু ওঁদের অবদান রয়ে গেছে, থাকবে। পাঠক মাফ করবেন, কিছু ব্যাক্তিগত কথার অবতারণা অপরিহার্য ছিল চিরন্তনের পূজারী দীপনাথদার স্বপ্ন ও ভাবনা প্রসূত ‘চিরদিনের গান’ প্রসঙ্গে।

আজ সন্ধ্যা ৬ টায় কলকাতার শিশির মঞ্চে দশ বছর পর আবার ‘চিরদিনের গান’। নিঃসন্দেহে এ এক স্মরণীয় মুহূর্ত ! ১৯৯৩ সালে ‘সুরর্ষি’র ব্যানারে ‘চিরদিনের গান’ শুরু করেন দীপনাথ চট্টোপাধ্যায়। ওঁর সঙ্গে ছিলেন উৎসাহী আরও কিছু সংগীতপ্রেমী মানুষ। তারপর থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা চলেছে ‘চিরদিনের গান’। সেই বছরই দীপনাথ চট্টোপাধ্যায় মারা যান। ওঁর মৃত্যুর তিনদিন আগে অনুষ্ঠিত হয় সে বছরের ‘চিরদিনের গান’। দীপনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় এই অনুষ্ঠান। এ বছর পুরনোদের মধ্যে আছেন হৈমন্তী শুক্লা, শিবাজী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। কিংবদন্তি শিল্পীদের মধ্যে বেঁচে আছেন নির্মলা মিশ্র।  বহুদিন যাবৎ অসুস্থ তিনি। আজ আর গাইবার মতো অবস্থায় নেই। চলে গেছেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, মাধুরী চট্টোপাধ্যায়। এই সন্ধ্যায় শ্রোতা-দর্শকের স্মৃতিতে নিশ্চয়ই থাকবেন তাঁরা।

এ বছর ‘চিরদিনের গান’ মঞ্চে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছেন বাচিকশিল্পী ও অভিনেত্রী মধুমিতা বসু, তাঁর সাংস্কৃতিক সংস্থা আন্তরিক-এর ব্যানারে। সঙ্গে আছেন শুভাশিস মজুমদার। সিকম স্কিলস ইউনিভার্সিটির নিবেদনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ‘চিরদিনের গান’। প্রসঙ্গত, শেষ কয়েক বছর অনুষ্ঠিত ‘চিরদিনের গান’ এই সংস্থাই স্পনসর করে। দীপনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কে সংযুক্ত এই সংস্থা। সেই সূত্রেই আজও এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে ওদের আবেগ রয়ে গেছে একই মাত্রায়। দেবমাল্যর অনুরোধে এগিয়ে এসেছেন ওঁরা সপ্রাণ আগ্রহে। একদা বাংলার প্রচুর নতুন প্রতিভা সুযোগ পেয়েছেন এই প্ল্যাটফর্মে। আজ তাঁরা অনেকেই খ্যাতনামা। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরেই সেই সময় স্বর্ণযুগের বাংলা গান নতুন করে গুঞ্জরিত হয় বাংলার অগণিত শ্রোতার কানে। আজ সন্ধ্যার নিবেদন ‘স্মরণে ও বরণে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়’। অংশগ্রহণে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে বাংলার প্রখ্যাত শিল্পীবৃন্দ। সঞ্চালনায় দেবাশিস বসু ও মধুমিতা বসু।