Tuesday, May 13, 2025
সম্পাদকীয়

নস্টালজিক জলসা

জলসা ব্যাপারটা একদা বাঙালি বিনোদন চর্চার অনেকটা জুড়ে ছিল। বিশেষত, শীত এলে তো কথাই নেই। পাড়ায় পাড়ায় ম্যারাপ বাঁধা শুরু হয়ে যেত। জলসাকে আমরা অনেকেই ছোটবেলায় ফাংশন বলতাম। যদিও এটা ব্যাকরণগত ভাবে সঠিক নয়। একটু বড়বেলায় বিজ্ঞাপনে দেখতাম লেখা হতো বিচিত্রানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের বেশ কিছুদিন আগে থেকে উদ্যোক্তারা মাইক নিয়ে প্রচারে বের হতেন, সেখানেও ওই বিচিত্রানুষ্ঠানই বলা হতো। আবার অমুক নাইট, তমুক নাইটও ছিল। ছিল খুব নামী শিল্পীদের একক। নানা কারণে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতোই এই জলসা বা বিচিত্রানুষ্ঠানেও কিছুটা পরিবর্তন এলো। সে হোক, বন্ধ না হলেই হলো। পারফর্মিং আর্টের অনেকটাই যে এই মঞ্চের আলোকোজ্জ্বল মায়ায় জড়ানো। সামনে সারি সারি শ্রোতা-দর্শকের মাথা। তারা কখনও নিবিষ্ট, কখনও উদ্দাম―এটা যে শিল্পীদেরও উৎসাহ, প্রেরণার অনেক বড় এক উৎস !!

গত কয়েক বছরে জন্ম-কর্মের কলকাতা শহরে চোখের সামনে খুব দ্রুত সেই ছবিটা বদলে যেতে দেখলাম। বাঙালির রুচিবদল, পৃষ্ঠপোষকদের নিরুৎসাহিতা (আর্থিক মন্দা) হয়তো কিছুটা এর কারণ। এছাড়াও প্রযুক্তির চূড়ান্ত আশীর্বাদে অধিকাংশ বিনোদনপ্রেমী মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়লো মুঠোফোনে। সবশেষে এই অতিমারী !! সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কী আর বিচিত্রানুষ্ঠান সম্ভব ? তারমধ্যেও শীতের নস্টালজিক রাতে কদাচিৎ দূর থেকে ভেসে আসা জলসার গান যেন কোন গতজন্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। কলকাতা ছেড়ে শিলিগুড়ি চলে আসার পর, অতিমারী শুরুর আগে পর্যন্ত এমন অযাচিত আনন্দে ভাসমান হয়েছি। এখানে এখনও জলসার আয়োজন হয়, সে বাংলা-হিন্দী যে গানই হোক। ইদানীং ফিল্মী নাচও হচ্ছে। সে বোধহয় সব জেলা শহর বা গ্রামেই হয়। বাঙালি রুচি বহুগামিতার পথ বেছে নিয়েছে। জলসা পরিণত ফেস্ট বা ইভেন্টে। রাজনৈতিক রংও লেগেছে তাতে। এতকিছুর পরেও বলবো, মঞ্চমায়া জেগে থাক। শিল্পীরা শুধু নন, বহু মানুষের রুটি-রুজি জড়িয়ে এর সঙ্গে। আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা, ঐতিহ্যের অহংকার―সবার ওপর যে মানুষের বেঁচে থাকা। সেটা ভুললে চলবে না।