হাম রহে না রহে হাম
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। রাজপুত্র আর গরীব কন্যার প্রেমকাহানি সোনি লিভ-এর প্রাইমটাইম ধারাবাহিকে। লিখেছেন সোমদত্তা রায়।
রনকগড় রাজ পরিবারের বড় সন্তান হলো শিবেন্দ্র বারোট ওরফে শিব। শান্ত, ধীর-স্থির, নিষ্ঠাবান, পরিণত মনস্ক ও দায়িত্বশীল এই তরুণ পারিবারিক ঐতিহ্য ও বন্ধনে বিশ্বাসী। শিব ও তার ভাইয়েরা সকলেই তার মা, রানি দময়ন্তী বারোটের নির্দেশিত পথে চলে। এহেন শিবের সঙ্গে একদিন দেখা হয় সুরিলির। কেমন করে ? তার আগে জেনে নিন সুরিলির জীবনকথা। মুম্বাইয়ের কোলাবা অঞ্চলের এক স্বাধীন ও আধুনিক মনোভাবাপন্ন তরুণী হলো সুরিলি আহুজা। সুন্দরী এই সরল কন্যাটি একটি গ্রামাফোন কাফের মালিক। তার বাবা-মা–দুজনেই মারা যাওয়ার পর এই কাফের সব দায়িত্বই এখন সুরিলির কাঁধে।
একদিন সুরিলির কাফেতে এসেছে শিব। সেখানেই কার্যকারণে কোনও একটি সমস্যায় শিবকে সাহায্য করে সুরিলি। পরে, আর একদিন শিবের হোটেলে ঘটে আর একটি ঘটনা। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এক ব্যক্তির সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে গেছে সুরিলি। লোকটি সুরিলিকে মলেস্ট করার চেষ্টা করলে, শিব তাকে রক্ষা করে। হয়তো দুজনের এই ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেখা হওয়ার অবধারিত পরিণতি ছিল একটি সম্পর্কের অভিষেক, যা প্রেমে রূপান্তরিত হলেও হতে পারে।
সেটা বুঝতে পেরেই বিষয়টি অঙ্কুরে বিনাশ করতে উদ্যোগী হন দময়ন্তী। সুরিলিকে টাকা দিয়ে, তাকে শিবের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় নামলেন তিনি। কিন্তু সুরিলি টাকা নিতে অস্বীকার করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় শিবের জীবন থেকে দূরেই থাকবে সে। কিন্তু শিব সেটা মানতে রাজি নয়। সে সুরিলির বোন সাশার সাহায্যে সুরিলিকে তার সম্মতি ছাড়াই নিজের হোটেলে নিয়ে আসে। এর ফলে সুরিলি শিবের ওপর দারুণ রেগে যায়।
রাগারাগির পালার মধ্যেই সুরিলি হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে অজান্তেই জঙ্গলের পথে চলে যায় এবং শেষে পথ হারায়। সেখান থেকে শিবই আবার উদ্ধার করে তাকে। অর্থাৎ, ঘুরেফিরে তারা একে অপরের সঙ্গে জুড়ে আছে, জুড়ে থাকে, সে দময়ন্তী যতই দুজনকে পৃথক করার চেষ্টা করুন না কেন ! যাই হোক, শিব ও সুরিলির এই জুড়ে থাকাটা একদিন স্থায়ী সম্পর্কের রূপ নেয়। তাদের দাম্পত্য যে সুস্থভাবে কাটবে না, সে তো জানাই ছিল ! একজন প্রাসাদের উত্তরসূরী, আর অন্যজন সাধারণ ঘরের এক মেয়ে। এতে, অশান্তি তো ঘটবেই ! এমনিতে দময়ন্তী সহজে ছাড়ার পাত্রী নন। তিনি তাঁর মতো করে জাল বুনছেন। অন্যদিকে আরও নানা জটিলতা, যা ধনী পরিবারগুলির অন্যতম অঙ্গ!
এমনই নাটকীয় ঘটনা প্রবাহে এগিয়ে চলেছে ধারাবাহিক ‘হাম রহে না রহে হাম’। গত এপ্রিলে সোনি লিভ-এ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দর্শকমন জয় করে নেয় এই মেগা। বাকি তথ্যে যাওয়ার আগে জানানো দরকার এই ধারাবাহিকের কাস্ট সম্পর্কে। টেলিভিশন দুনিয়ায় এক সে বড়কর এক তারকার সম্মেলন ঘটেছে ‘হাম রহে না রহে হাম’-এ। ‘উত্তরণ’ খ্যাত টিনা দত্ত অভিনয় করছেন সুরিলির ভূমিকায়। টিনা একজন সহজাত অভিনেত্রী। তাঁর অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে সুরিলি। শিবের চরিত্রে আছেন জয় ভানুশালি। হিন্দি টিভি জগতের সুপারস্টার জয় ভানুশালিকে বেশ ব্যতিক্রমী এক অবতারে পাচ্ছেন এখানে দর্শক। তবে, এই ধারাবাহিকের সবচেয়ে চমকে দেওয়া নামটি হলো কিটু গিদওয়ানি। হিন্দি টিভির অত্যন্ত স্টাইলিশ ও স্বতন্ত্র এই অভিনেত্রী সেই দূরদর্শনের আমল থেকে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন পেতে আছেন। তাঁর অভিনীত দময়ন্তী এককথায় চমৎকার।
ওঁরা ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আভাস মেহতা, সুজয় রেউ, মোহিত দুশেজা, চেষ্টা ভগৎ, মমতা ভার্মা, করণবীর বোহরা, পহল চৌধুরী, প্রেরণা ওয়ানভারি, প্রকাশ রামচন্দনি, খুশবু পাঞ্জাথিয়া, সপন গুলাটি, যশনীত কাউর কান্ত, রশ্মি সচদেব, রুশি মিস্ত্রি, শংকর ভেজেল প্রমুখ। স্বস্তিক প্রোডাকসন্স প্রযোজিত এই ধারাবাহিকে বহু চরিত্রের সমাবেশ যেমন ঘটেছে, তেমনই অভিনয় গুণে সকলেই নাটককে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন টানটান গতিতে। জাঁকজমক পূর্ণ সেট, কস্টিউম ইত্যাদি নিয়ে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে এই মেগা। প্রসঙ্গত, ‘হাম রহে না রহে হাম’ হলো জনপ্রিয় টার্কিশ ড্রামা ‘ইস্তাম্বুল্লু জেলিন’ ওরফে ‘ব্রাইড অফ ইস্তাম্বুল’-এর হিন্দিকরণ। হিন্দিতে এর কাহিনি লিখেছেন সুতপা সিকদার। প্রযোজক সিদ্ধার্থ কুমার তিওয়ারি। থিম মিউজিক নারায়ণ দেব। আপাতত ৪৮ পর্বের প্রথম সিজন, এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। দেখানো হচ্ছে সোম থেকে শুক্র রাত ৯টায়। আগ্রহীরা চ্যানেলের পাশাপাশি সোনি লিভ-এর স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও খোঁজ করতে পারেন। সিরিজ ফরম্যাটে সেখানেও দেখতে পাবেন ‘হাম রহে না রহে হাম’।