অনুরাগী উপহারে আরও এক মুক্ত ভাবনার ছবি
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। প্রেমের নতুন সংজ্ঞা নিয়ে আজই মুক্তি পাচ্ছে অনুরাগ কাশ্যপের ছবি ‘অলমোস্ট প্যায়ার উইথ ডিজে মহব্বত’। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
বলিউডে প্রথম সারির পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম অনুরাগ কাশ্যপ। তিনি নিজেই বদলে দিয়েছেন ছকে বাঁধা হিন্দি ছবির ভাষা। তাঁর ছবির তৈরির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বারবার চর্চা হয়েছে সিনেমা-মহলে। ক্রাইম ড্রামা হোক বা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, এমনকি স্পোর্টস ড্রামাতেও অনুরাগের মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সাহস তাঁর সমসাময়িক পরিচালকরা সেইভাবে করতে পারেননি। অনুরাগের ছবি বক্স অফিসে চলুক বা না চলুক বরাবরই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘নো স্মোকিং’, ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ থেকে শুরু করে ‘আগলি’,’রমন রাঘব২.০’, ‘মুক্কাবাজ’-এর মতো ছবিতে অনুরাগের মুন্সিয়ানা দর্শক ও সমালোচকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তবে, শুধুমাত্র ক্রাইম বা থ্রিলার ছবি দিয়ে অনুরাগের বিচার করলে বোধহয় ভুল হবে। ক্রাইম থ্রিলারের পাশাপাশি ‘দেব ডি’, ‘মনমর্জিয়াঁ’-র মতো রোম্যান্টিক ছবিও তৈরি করেছেন অনুরাগ। তাঁর ছবিতে রোম্যান্সের পরিভাষাও গতানুগতিক ধারার বাইরে।
এহেন অনুরাগ কাশ্যপ নির্দেশিত আধুনিক প্রেমাখ্যান ‘অলমোস্ট প্যায়ার উইথ ডিজে মহব্বত’ নিয়ে তাই আলোচনা তুঙ্গে। আজই মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলায়া এফ এবং নবাগত করণ মেহতা। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে জেন ওয়াইদের নিজেদের খুঁজে পাওয়া, নিজের ভালোবাসাকে খোঁজা এবং সেই ভালোবাসা পাওয়া। সঙ্গে সেই ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য অসুস্থ ও অস্থির মানসিকতা এবং ভালোবাসার মানুষের প্রতি অবিশ্বাস। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যের ক্ষতিসাধন করা। একদিকে সমকামীদের প্রতি ঘৃণা। অন্যদিকে প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের বোঝাবুঝির অভাব। এই ছবির মাধ্যমে সেই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন অনুরাগ।
ছবির ট্রেলারে আমরা দেখি, আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে লন্ডন ও ডালহৌসি, অর্থাৎ একটি বড় এবং আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট শহরের প্রেক্ষাপটে দুটি সমান্তরাল প্রেম ও আকাঙ্ক্ষা বুনন করেছেন অনুরাগ। দুটি ভিন্ন জায়গার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে ঘটে চলা প্রেমাখ্যানে আয়েশা-সমীর, অমৃতা-ইয়াকুবের মতো চরিত্রগুলো কোথাও মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। লন্ডনে একটি ডিস্কোয় আয়েশা সেখানকার ডিজে সমীরের প্রেমে পড়লেও ছেলেটি তাকে পাত্তা দেয় না। অপরদিকে ডালহৌসিতে টিংটংজিয়ানস (tingtongians) নামের এক অ্যাপের মাধ্যমে নিজের পরিধি বিস্তৃত করতে চায় ইয়াকুব। সে প্রেমে পড়ে অমৃতা বলে এক স্কুলপড়ুয়া মেয়ের। যদিও, আর্থ সামাজিক ভাবে দু’জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক।
এমতাবস্থায় হঠাৎ পাহাড়ী অঞ্চলে আগমন ঘটে ডিজে মহব্বত নামের চরিত্রটির। অমৃতা, ডিজে মহব্বতের সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু তার পরিবারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেই সময় অমৃতাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ইয়াকুব। তাকে নিয়ে পালিয়ে যায় সে। কি হয় শেষপর্যন্ত এই দু’জোড়া প্রেমের পরিণতি! এই নিয়েই অনুরাগ কাশ্যপের এই ছবি। ছবিতে দুটি জায়গার প্রেমের কাহিনিতে আলায়া ও করণের লুকটিকে বেশ আলাদা করেছেন পরিচালক। অনেকটা দিন পর্যন্ত গোপন রাখার পর ডিজে মহব্বত চরিত্রের অভিনেতার নাম দর্শকের সামনে অবশেষে এনেছেন অনুরাগ। বলিউডের এই মুহূর্তের অন্যতম সেরা অভিনেতা ভিকি কৌশল আবির্ভূত ডিজে মহব্বতের ভূমিকায়। নিঃসন্দেহে চমকটি যথেষ্ট জোরদার। ডিজে লুকে ভিকির মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স কী পরিমাণ ঝড় তুলবে, তা প্রমোশনাল ভিডিওগুলিতেই উপলব্ধ।
‘অলমোস্ট প্যায়ার উইথ ডিজে মহব্বত’-এ সংগীত পরিচালনা করেছেন অমিত ত্রিবেদী। প্রসঙ্গত অমিত ও অনুরাগের যুগলবন্দি (‘দেব ডি’ ও’মনমর্জিয়াঁ’) ইতিপূর্বে ম্যাজিক সৃষ্টি করেছে পর্দায়। এবারেও তার প্রত্যাশায় রয়েছেন দর্শক। ট্রেলারে সেই ম্যাজিকাল ছোঁয়া পাওয়া গিয়েছে ‘মহব্বত সে হি তো ক্রান্তি আয়েগি’ গানটির মধ্যে দিয়ে। ছবির গীতিকার শৈলী। প্লেব্যাক করেছেন রিচা শর্মা, নিকিতা গান্ধী, ভূমি ত্রিবেদী, অর্জুন কানুনগোর মতো সঙ্গীতশিল্পীরা। সিনেমাটোগ্রাফার সিলভেস্টার ফনসেকা। সম্পাদনায় কোনার্ক সাক্সেনা। গুড ব্যাড ফিল্মস প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বভার সামলেছেন রঞ্জন সিং, অক্ষয় ঠক্কর, ধ্রুব জাগাসিয়া, কবীর আহুজা ও অজয় রাই। নিবেদনে জি স্টুডিওস।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে বহুল প্রশংসিত হয়েছে অনুরাগের এই ছবি। গত বছর মারাক্কেশ জামা এল ফেনা স্কোয়ারে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। গুইলারমো ডেল তোরো, পল শ্রেডার এবং জেমস গ্রে-এর মতো অসামান্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের ছবির সঙ্গে এই ছবিটিও দেখানো হয়। ছবি প্রসঙ্গে অনুরাগ জানান, ‘অলমোস্ট প্যায়ার উইথ ডিজে মহব্বত’ আমার হৃদয়ের খুব কাছের। কারণ এই ছবিটা তৈরি হয়েছে আমার মেয়ের সঙ্গে আমার বছরের পর বছর কথোপকথন থেকে। কিছু দুর্দান্ত তরুণ অভিনেতা, প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে ভরপুর টিম, অমিত ত্রিবেদীর দুর্দান্ত মিউজিক এবং বাকি সকলের সঙ্গে এটা আমার ভালবাসার ফসল বলা যায়। প্রজন্মগত ভাবে বদলাতে থাকা ভালবাসার সংজ্ঞা নিয়ে তৈরি এই ছবি।
ছবির শুটিংয়ের সময় রীতিমতো প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হয়েছে অনুরাগকে। আলায়ার কথায়, “অনুরাগ স্যারকে প্রতিবার আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে ছবিটি তৈরি করতে দেখাটা একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের কাছে।” আলায়া আরও বলেন, “এই ছবির কাজ আমার কাছে মনে রাখা অভিজ্ঞতা। কারণ, একদিন আমরা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম, তো, পরেরদিন আমরা ভিজে গিয়েছিলাম। এমনও সময় ছিল, যখন ঘন কুয়াশার কারণে আমরা কোথায় যাচ্ছি, তা দেখতেই পাচ্ছিলাম না। এক স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আশ্চর্যজনক অ্যাডভেঞ্চার ছিল। এটা আমাদের কাছে এক অবিশ্বাস্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।”
প্রথমবার ছবিতে কাজ করতে এসে করণ এই বিষয়টি দেখে হতবাক হলেও, এহেন পরিস্থিতিতেও তিনি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কথায়, “এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শুটিং করাটা সত্যিই কঠিন ছিল। তবে ছবির ক্রু সদস্যদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছি, তার ফলেই আমরা কাজটা করতে সক্ষম হয়েছি। আমি যখন ছবির ফার্স্ট কাট দেখি, তখন বুঝতে পারি আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।” এখন দেখার এটাই যে আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে আবর্তিত এই প্রেমাখ্যানের মাধ্যমে পর্দায় ভালোবাসার কোন রঙ ছড়িয়ে দেন অনুরাগ। তাঁর এই ছবি দেখবার জন্য রীতিমতো উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন তামাম সিনেপ্রেমী।