Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

‘অভয়’ যেন কুণালকে ভেবেই তৈরি

মৃণালিনী ঠাকুর

বলিউডের সঙ্গে সেই শৈশবে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন তিনি। আর তখন থেকেই দর্শকের প্রিয় কুণাল খেমু। বিশেষত, ‘জখম’,’রাজা হিন্দুস্থানী’ ও ‘দুশমন’ ছবিতে কিশোর বয়েসী কুণাল তাঁর শক্তিশালী অভিনয় ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখেন। বড় হওয়ার পর ‘কলযুগ’, ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’, ‘ঢোল’, ‘গোলমাল’ সিরিজ, ‘ব্লাডমানি’ এবং ‘কলঙ্ক’ ইত্যাদি ছবিতে কুণাল অভিনেতা হিসেবে তাঁর স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দেন।

তবে, তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমালোচকদের প্রশংসা বেশি কুড়িয়েছেন। বাণিজ্যিক সাফল্য বা তথাকথিত মেনস্ট্রিম ছবির দর্শক আনুকূল্য তাঁর ভাগ্যে ততটা জোটেনি। যদি বলি, তাঁর এই অপ্রাপ্তি পুষিয়ে দিয়েছে অভয় প্রতাপ সিং, তাহলে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যে সমস্ত অভিনেতার প্রতিভা ও ক্ষমতাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যবহার ক’রে দর্শক দরবারে হাজির করেছে, কুণাল খেমু নিঃসন্দেহে তাঁদের অন্যতম বিবেচিত হবেন। জি-ফাইভ অরিজিনাল ‘অভয়’-এর তৃতীয় সিজনে এসে দর্শক নিশ্চিত অভয় প্রতাপ সিংয়ের জটিল মনস্তাত্ত্বিক চরিত্রটি কুণালের মতো নিখুঁত করে তুলতে আর কেউ পারতেন না।

ক্রাইম সিরিজ নির্মাণের একচ্ছত্র অধিপতি টেলিভিশনের বি পি সিং ‘অভয়’-এর প্রযোজক। পরিচালক কেন ঘোষ। কুণালকে অভয়ের জন্য নির্বাচিত করে ভুল করেননি ওঁরা। কুণালের ডিজিটাল ডেবিউ যে বেশ ধামাকাদার হলো এই সিরিজকে ঘিরে, সে কথা বলাই বাহুল্য। তদন্তকারী অফিসার অভয়, অপরাধের অনুসন্ধান ও বিনাশে যতদূর পর্যায় হোক যেতে পারে। আর এক্ষেত্রে তাঁর ভাবনার গতিপথ ঠিক যেন অপরাধের জটিল-কুটিল পথ ধরেই চলে। আদতে অভয়ের চরিত্রটি বিন্যাস করা ও তার প্রেক্ষাপট রচনায় বাকি চরিত্রগুলি অঙ্কনের ক্ষেত্রে কুর্নিশ জানাতেই হয় ‘অভয়’-এর লেখক টিমকে। সংখ্যায় তাঁরা ডজন খানেক এবং প্রথম দু’টি সিজনের পর তৃতীয় সিজনে এসেও দর্শকের আগ্রহ টানটান মেজাজ ধরে রাখার নেপথ্য কারিগর নিঃসন্দেহে ওঁরাই।

Images 22 1

প্রথম সিজনে আমরা পাই এসপি অভয় সিংকে, যার জীবনের মুখ্য অংশ জুড়ে একদিকে ছেলে সাহিল। ছেলেকে নিয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে অভয়। সম্ভবত, তার পিছনে রয়েছে অভয়ের অন্ধ অতীত। অন্যদিকে তার পেশা অর্থাৎ অপরাধ দমন। এই পেশাকে ঘিরেই নানা জটিলতার চক্রে আবর্তিত অভয়ের জীবন। সেখানে আছে নাতাশা ও গোবিন্দ–এই দু’টি চরিত্র। গোবিন্দের সঙ্গে অভয়ের শত্রুতার নেপথ্য কাহিনি ছিল প্রথম সিজনের অনেকটা জুড়ে। নাতাশার সঙ্গেই বা অভয়ের হিসেবটা কী ? ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সিজন শুরু ও ৮টি পর্বে সমাপ্ত, এরপর কী হয়–সেই কৌতূহল ও আগ্রহ টানটান উত্তেজনায় রেখে।

দ্বিতীয় সিজন শুরু হয় ২০২০-র আগস্টে। কুণালের সঙ্গে প্রথম সিজনে ছিলেন সন্দীপা ধর, নমিত দাস (গোবিন্দ), এলনাজ নরৌজি (নাতাশা), প্রিয়াল গোর (অভয়ের স্ত্রী), মানিনী মিশ্র। দ্বিতীয় সিজনে এলেন আশা নেগি ( অভয়ের প্রেমিকা), দুই ভিলেনের চরিত্রে রাম কাপুর ও চাঙ্কি পান্ডে, বিদিতা বাগ, নিধি সিং, অসীমা বদান, রাঘব জুয়াল, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। দুই ভয়ঙ্কর অপরাধীর মোকাবেলাতেই দ্বিতীয় সিজন পার করে অভয়, বলাই বাহুল্য। দর্শক দেখে, অপরাধজনিত কর্মকান্ডে অভয়ের মস্তিষ্ক অপরাধীদের থেকেও বেশি চলে। ৮টি পর্বে এরও সমাপন।

Images 23

অতি সম্প্রতি শুরু হয়েছে ‘অভয়’-এর তৃতীয় সিজন। এই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটি তথ্য। দ্বিতীয় সিজনের একটি পর্বে অপরাধী হিসেবে বাংলার শহীদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুকে দেখানো হয়, যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রবল বিতর্কের ঝড় ওঠে। অপরাধীদের ছবির গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে ক্ষুদিরামের ছবি–এটা দেখে কে আর মাথা ঠিক রাখতে পারে ? দর্শক এর তুমুল বিরোধিতা ও সমালোচনা করে। বিষয়টি আইন-আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে এবং ছবিটিকে তারপর থেকে ঝাপসা দেখানো হয়।

যাই হোক, এবার এক অজানা শত্রুর সঙ্গে লড়াই অভয়ের। এক কালো শক্তি, অতি প্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী এই দল বা তার নেতা কী মানুষ না অন্য কিছু? এদিকে অভয়ের ব্যক্তিগত জীবনের জটিলতাও আরও বেড়েছে। অভিনেতার দলে নতুন সংযোজন বিজয় রাজ (মৃত্যু), রাহুল দেব (অবতার), তনুজ বিরওয়ানি (কবীর), দিব্যা আগরওয়াল (হারলিন), বিদ্যা মালবাড়ে (নিধি)। আগের সিজনের আশা নেগি ও নিধি সিংও আছেন এই সিজনে। এবারেও ৮ পর্বের টানটান সিজন। অন্ধকার যেন আরও প্রকট এবার। অভিনয়ে সকলেই স্মার্ট ও নিখুঁত। আর মধ্যমণি কুণাল খেমুর কথা তো শুরুতেই বলেছি।