অভয় ২ : দুর্নিবার চাঙ্কি
মৃণালিনী ঠাকুর
ঝাঁক বেঁধে বড়পর্দার তারকারা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নাম লেখাচ্ছেন, ইদানীং এই বিষয়টি গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের। এই তালিকায় যখন চাঙ্কি পান্ডের নামটা উঠে এলো, তখন কেউই তেমন গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টাকে। অথচ গুরুত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ ছিল। পহেলরাজ নিহালনির ‘আগ হি আগ’ ছবিতে নীলমের সঙ্গে ডেব্যু করেন চাঙ্কি। মালটিস্টারার এ ছবি সুপার হিট হয়। পহেলরাজ নিহালনিরই পরের ছবি ‘পাপ কি দুনিয়া’-ও ছিল যথেষ্ট হিট। চাঙ্কি যে সময়টা চুটিয়ে কাজ করছেন বলিউডে, সেই ১৯৮৭ থেকে নয়ের দশকের শেষ, বেশিরভাগই হয় মাল্টিস্টারার ছবিতে নায়ক, নাহলে পার্শ্ব চরিত্রে। তাঁর সম্পর্কে এটা বলা যায়, যে একক নায়ক হিসেবে চাঙ্কি তেমন সফল না হলেও, কমেডিয়ান রূপে নিজের একটি পাকাপোক্ত জায়গা করে নেন তিনি।
এমনকী পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করেও দর্শকের মনে দাগ কাটতে সমর্থ তিনি। তেজাব, খতরোঁ কে খিলারি, ঘর কা চিরাগ, বিশ্বাত্মা, আঁখে, লুটেরে ইত্যাদি ছবি তার প্রমাণ। তিন দশকের কেরিয়ারে একশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু বলিউডের স্টিরিও টাইপ চরিত্র এবং টাইপ কাস্টিংয়ের চক্করে নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তি দেখাবার সুযোগ পাননি চাঙ্কি। মাঝে বেশ কিছুদিন বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করেন তিনি। উল্লেখযোগ্য সাফল্য পান তিনি এখানে। অন্যদিকে, মুম্বইয়ে বেশ কয়েকবছর বিরতির পর ফিরে এসে নিজেকে একেবারে ভেঙেচুরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন চাঙ্কি। ‘বেগমজান’ এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমান। পরবর্তীকালে কিছু নেগেটিভ রোলেও কাজ করেন তিনি। কতকটা সেই ধারাবাহিকতা মেনেই যেন ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় পা রাখেন চাঙ্কি ‘অভয় ২’-এর হাত ধরে।
দ্বিতীয় সিজনের আগে প্রথম সিজনের কথা। প্রথম সিজনে চাঙ্কি ছিলেন না। জি ফাইভের অরিজিনাল হিন্দি এই ক্রাইম থ্রিলারের মুখ্য চরিত্রে আছেন কুনাল খেমু। কুনাল পরের সিজনেও আছেন। কুনাল অভিনীত তদন্তকারী অফিসার অভয় প্রতাপ সিং, যিনি নিজেও কিছুটা অপরাধী মানসিকতার শিকার, তাকে নিয়েই পল্লবিত ‘অভয়’কাহিনী। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে জি ফাইভে ‘অভয়’-এর আগমন ঘটে। পরিচালক কেন ঘোষ। প্রযোজনা করেছেন টিভি ক্রাইম ফিকশন দুনিয়ার অতি চেনা নাম বি পি সিং।
এবার বলা যাক চাঙ্কি অভিনীত ‘অভয় ২’-এর কথা। ২০২০-র আগস্টে শুরু ‘অভয় ২’। এই সিজনে চাঙ্কি ছাড়াও এসেছেন হিন্দি টিভির সুপারস্টার রাম কাপুর। এসেছেন বিদিতা বাগ, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, রাঘব জুয়েল প্রমুখ। চাঙ্কি হলেন মুখ্য ভিলেন হর্ষ। আর এখানেই তিনি তাঁর সম্পর্কিত যাবতীয় ধারণা বদলে দিয়েছেন। চাঙ্কির কথায়, “নিজেকে আগাগোড়া বদলেছি হর্ষকে জীবন্ত করে তোলার জন্য।” সত্যিই তাই। এ এক অন্য চাঙ্কি। বস্তুত, অনেকেই ‘অভয় ২’-তে চাঙ্কি-র অভিনয় দেখার পর নড়েচড়ে বসে এর প্রথম সিজন দেখা শুরু করেছেন। তাঁর শেষ বড় কাজ, ‘হাউসফুল’ ফ্রাঞ্চাইজির আখরি পাস্তা-কে ভুলিয়ে দিয়েছে হর্ষ। একজন দু-মুখো সাপ যেন এই মানুষ। জটিল এই সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে চাঙ্কিকে দেখে অনেকেই বলছে বি টাউন ওঁকে সঠিক ব্যবহার করেনি।
হর্ষের চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে চাঙ্কি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি বরাবর ভিলেন চরিত্রগুলির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছি। ভীষণ পছন্দের ‘রামপুর কা লক্ষণ’ ছবিতে শত্রুঘ্ন সিনহার চরিত্রটি, ‘মিঃ ইন্ডিয়া’-র মোগাম্বো এবং অবশ্যই ‘শোলে’ ছবির গব্বর সিং। জন্মগতভাবে আমার মধ্যে এক শয়তান বাস করে। ভিলেন অভিব্যক্তি খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসে আমার অভিনয়ে (হাসতে হাসতে)।” শক্তি কাপুর এবং প্রয়াত কাদের খানেরও ভক্ত তিনি। ওঁর মতে, এঁরা দুজনেই ভিলেন চরিত্রে দুরন্ত কমেডি ব্লেন্ড করেছেন।
দিনের বেলা ভালো মানুষের ভাব। রাতে ভয়ঙ্কর এক খুনি–এহেন হর্ষকে দর্শক ঘৃণা করেও অস্বীকার করতে পারছে না, এতটাই শক্তিশালী চাঙ্কির অভিনয়। এই সিরিজে নিজের বিশেষ লুক সম্পর্কে বলেছেন, “স্কুলে আমার এক টিচার ছিলেন যিনি অত্যন্ত কড়া, কিন্তু কথায় মিষ্টি। তাঁকেই মাথায় রেখে এই লুক।” পাশাপাশি নিজের চলাফেরা, কথা বলা–সবক্ষেত্রেই এক অন্য স্টাইল নিয়ে এসেছেন চাঙ্কি। এইসবই চরিত্রের প্রয়োজনে। ওয়েব সিরিজে নিজের অভিষেককে পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা বলে মনে করেন না চাঙ্কি পান্ডে। নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন একজন নতুন অভিনেতার মতোই। তার ফলও মিলছে। লোকজন চাঙ্কিকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছেন।