Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

আক্রমণের লক্ষ্যে শিবভক্ত সারা

ধর্ম আসলে কী ? দর্শন ? পালন ? আচার-বিচার ? উৎসব-পার্বণ ? এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। ধর্মের সঙ্গে আবার সম্প্রদায়ের বিষয়টিও জড়িয়ে। ধর্মকে যদি আমরা দর্শন হিসেবে দেখি, তাহলে যেটা উপলব্ধ হয়, সব ধর্মেই মানুষকে তো বটেই, তামাম জীবজগতকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। সেই বিচারে সবার ওপরে মানবধর্ম ও মানবতাবাদই সেরা মতবাদ। তাহলে তো আর কোনও জটিলতা থাকে না। যে যাঁর নির্দিষ্ট ধর্ম পালন করুন না! কারও যদি তথাকথিত ভাবে নিজের ধর্ম ছেড়ে অপরের ধর্মে আগ্রহ তৈরি হয়, তাতেই বা ক্ষতি কী ? দুটি ধর্মের মানুষ একে অপরকে ভালোবেসে সহযাত্রী হলেই বা সমস্যা কোথায় ?

সমস্যা আসলে সৃষ্টি করা হয়। যেটা ভয়ের, আগে শুধু কয়েকজন স্বার্থান্বেষী মানুষ এই জটিলতার জাল বিছিয়ে সমাজে অহেতুক গন্ডগোল বাধাবার চেষ্টা করতো। এখন আমরা সবাই একে একে এতে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছি। সর্বধর্ম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বলিউড একদা সারা দেশে দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল। এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বহু গুণী ও প্রবাদপ্রতিম মানুষ একত্রে মেতেছেন সৃষ্টির আনন্দময় উৎসবে। খুবই আক্ষেপের বিষয় ইদানীং সেখানেও ধর্ম নিয়ে কিছু নোংরা খেলা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, এই খেলায় মেতে গেছে নেট দুনিয়ার কিছু উগ্র ভাবনাযুক্ত মানুষ। এদের আক্রমণের লক্ষ্য এবার সারা আলি খান।

অভিযোগ, সারা নাকি খুব বেশি বেশি হিন্দুধর্মের প্রতি নিজের আগ্রহ ও অনুরাগ দেখাচ্ছেন। গত কিছুদিন ধরেই হিন্দু কট্টরপন্থীরা এই নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। সম্প্রতি শিবরাত্রি উপলক্ষে নিজের শিবপূজার ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন সারা। ক্যাপশন দিয়েছেন ‘জয় ভোলেনাথ’। সঙ্গে সঙ্গে কট্টরপন্থীদের প্রতিক্রিয়া ঠিক এইরকম, হয় মুসলিম, নয় হিন্দু হও। একসাথে দুটো ধর্ম কীভাবে পালন করবে ? এদের অনেকেরই মত, সারা নাকি মুসলিম হিসেবে পরিচিত হতে লজ্জা পান। ধর্মের এই ঠিকাদারদের হাতে শুধু ধর্ম নয়, মানবতাও বিপন্ন আজ।

সারার বাবা সইফ আলি খান মুসলিম, মা অমৃতা সিং হিন্দু। ঠাকুমা শর্মিলা ঠাকুর হিন্দু পরিবারের কন্যা ছিলেন, দাদু মনসুর আলি খান মুসলিম। কী হাস্যকর এসব উল্লেখ ! আমরা এগোচ্ছি না পিছিয়ে যাচ্ছি ? একজন আন্তর্জাতিক খ্যাত ক্রিকেটর, আর একজন ভারত বিখ্যাত অভিনেত্রী। সারা তাঁদেরই রক্ত বহন করছেন। তিনিও একজন স্বাধীন মনের মানুষ হবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক ! এভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে হিন্দু ধর্মের কোন দর্শন এরা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, কে জানে? আশার কথা একটাই, একটা বিরাট অংশের মানুষ কট্টরপন্থীদের এই মানসিকতার নিন্দাও করছেন।

প্রত্যাশা, এদের মাধ্যমেই শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বলিউডের বাতাস আগের মতোই উদার ছন্দে বইবে।