আগামী আগস্টে মুক্তি পাচ্ছে ‘গদর ২’
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। পর্দার কাহিনি এগোচ্ছে ২৪ বছর। ‘গদর’-এর সিকোয়েল মুক্ত ২২ বছর পর। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
তারা সিং বসে আছে সাকিনার কবরের পাশে এমন এক টিজার দেখে আম জনতা যে বেশ খানিকটা চমকে উঠবেন এবং শোকাতুর হবেন, তাতে আর সন্দেহ কী ! তাঁদের সেই আবেগকে নাড়া দিতেই যে ছবির প্রথম অফিসিয়াল টিজারটির পরিকল্পনা করেছেন ‘গদর ২’-এর প্রযোজক-পরিচালক অনিল শর্মা–তাও নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়। যদিও পরে জানা যায়, ওটি মোটেই সাকিনার কবর নয়। পুরোটাই একটা চমক। সাকিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমিশা প্যাটেল, সবারই জানা। এরপর আমিশাকে ঘিরেই আর একটি চিত্তাকর্ষক টিজার প্রকাশিত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
বলিউডের সর্বকালের সেরা হিট ছবির অন্যতম ‘গদর : এক প্রেম কথা’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০১ সালে। ব্লকবাস্টার এই ছবির পটভূমি ছিল দেশভাগ পরবর্তী নির্মম সময়কাল। দেশভাগের মর্মান্তিক প্রভাব যে দুটি রাজ্যে প্রকট হয়, সেটা হলো বাংলা ও পাঞ্জাব। এ ছবির প্রেক্ষাপট ছিল পাঞ্জাব। উপ-মহাদেশের পক্ষে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও জটিল ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সেই সময়কে এক মরমি কাহিনির আধারে দর্শক দরবারে নিয়ে আসা হয়। পরিচালক অনিল শর্মা বিষয়টি খুবই নিপুণ ও সংবেদনশীল ভাবে পর্দায় নিয়ে আসেন। সম্প্রতি ‘গদর : এক প্রেম কথা’-কে নতুনভাবে সিনেমাহলে মুক্তি দেওয়া হয়। পরিচালক স্বয়ং, সানি দেওল, আমিশা প্যাটেল ও অন্যান্য অভিনেতারা মিলে একত্রে দারুণভাবে সেলিব্রেট করেন মুহূর্তটি।
‘গদর : এক প্রেম কথা’-র অনেকটা জুড়েই ছিল এক তরুণের আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার তীব্র আর্তি, যে কিনা প্রতিবেশী দেশে মেয়েটির বাবার সংসারে বন্দি। বাবা লোকটি চরম ভারত বিদ্বেষী। সীমানার একপ্রান্তে সেই তরুণ অর্থাৎ তারা সিং ও তার কাতর পুত্র সন্তান। ওপারে তারা সিংয়ের স্ত্রী ও তার ছেলের মা সাকিনা। বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী, আপন প্রতিজ্ঞায় অটল তারা সিংয়ের ভূমিকায় সানি দেওল ছবিতে দারুণভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেন। ‘গদর ২’-এর ক্ষেত্রেও তিনি সমানভাবে দর্শক-হৃদয় ছুঁয়ে যাবেন প্রত্যাশিত। ছবির একটি টিজারে আমরা দেখি, যারা তার জীবনে দুর্দশা ডেকে এনেছে, তাদের চরম শাস্তি দেবার শপথ নিচ্ছে তারা সিং। পরের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, সে হাতে তুলে নিয়েছে গরুর গাড়ির একটি চাকা এবং সেটি ছুঁড়ে মারছে পলায়নরত শত্রুদের দিকে। তারপরই সেই দৃশ্য, যার কথা শুরুতেই বলেছি, সাকিনার কবরের (?) সামনে বসে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা সিং। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে ছবির হিট গান ‘ও ঘর আ যা পরদেশী’র স্যাড ভার্সান !
টিজার বলছে এবারও নাটক জমিয়ে দেবেন দেওল পরিবারের একান্ত শুভানুধ্যায়ী পরিচালক অনিল শর্মা। সানির কেরিয়ারে ‘গদর ১’ কতটা উচ্চমাত্রা যোগ করেছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক, তারা সিং ও সাকিনার প্রেমকাহিনি এবার ২৪ বছরের লিপ নিচ্ছে। এবারে পটভূমি পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত ক্রাশ ইন্ডিয়া মুভমেন্ট। বলা বাহুল্য, পাক-ভারত যুদ্ধকালীন সেই সময় ছিল দু দেশের মানুষের কাছেই অত্যন্ত জটিল ও সংকট-বহুল। পর্দায় হাজির করার ক্ষেত্রে বিষয়টি নিঃসন্দেহে খুবই স্পর্শকাতর, যা এবারও অত্যন্ত নিখুঁত মাত্রায় হাজির করতে চলেছে টিম গদর।
‘গদর : এক প্রেম কথা’-য় আমরা দেখি তারা সিং স্ত্রী সাকিনাকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছে পাকিস্তানে। এবার সে যাচ্ছে ছেলে চরণজিৎ ওরফে জীতেকে আনতে। চলছে চূড়ান্ত যুদ্ধকালীন টানাপোড়েন। দুই দেশের সম্পর্কেও রয়েছে দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও হানাহানির দীর্ঘ ইতিহাস। সোর্স বলছে, এবারে চিত্রনাট্যে বাবা-ছেলের বন্ড অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। দর্শক দেখবেন, ছেলের খাতিরে একজন বাবা কতদূর যেতে পারে ! যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেই নিজের জীবন বিপন্ন করে তারা সিং প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সানি দেওল ও আমিশা প্যাটেলের সঙ্গে অভিনয়ে এবারও রয়েছেন উৎকর্ষ শর্মা। বালক জীতের ভূমিকায় আমরা আগেই উৎকর্ষকে পাই। সেই উৎকর্ষই তরুণ জীতের ভূমিকায়। আক্ষরিক অর্থেই সিকোয়েল এই ছবি। প্রধান অভিনেতারা প্রত্যেকেই তাঁদের আগের ইনস্টলমেন্টে করা চরিত্রগুলির ভূমিকায়। শুধু তাদের বয়স বেড়েছে। অভিনয়ে অন্যান্যদের মধ্যে আছেন সিমরত কাউর, লব সিংহ, মণীশ ওয়াধা, বীরেন খান, মীর সরওয়ার, রোহিত চৌধুরী, গৌরব চোপড়া, রুমি খান, অর্জুন দ্বিবেদি, রাজ খান্না প্রমুখ। ‘গদর ২’-এর কাহিনি লিখেছেন শক্তিমান তলোয়ার। সিনেমাটোগ্রাফি নাজিব খান। মিউজিক মিঠুন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মন্টি শর্মা। প্রযোজনা সংস্থা জি স্টুডিওজ ও অনিল শর্মা প্রোডাকসন্স। আগামী ১১ আগস্ট দেশ জুড়ে মুক্তি পাচ্ছে ‘গদর ২’।