আগামী ডিসেম্বরেই আসছে কারাগার ২
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
‘কারাগার’ আমার কাছে ভীষন স্পেশাল একটি সিরিজ। বিষয়টা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক ! চরিত্রটিতে একেবারে ডুবে গিয়ে কাজটা করেছি–এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ওয়েব সিরিজের মুখ্য চরিত্রাভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বস্তুত তিনি কতখানি একাত্ম হয়ে অভিনয়টা করেছেন তা হইচই স্ট্রিমিংয়ে যাঁরা এই সিরিজ দেখেছেন, তাঁরা সকলেই স্বীকার করবেন। আদতে এর কাহিনি, চিত্রনাট্য, সমগ্র পরিবেশনা এবং অভিনয়ে কেউ কারও চেয়ে কম যান না। তা সত্ত্বেও, ‘কারাগার’ মুখ্যত দাঁড়িয়ে চঞ্চলের ওপরেই, এ কথা অনস্বীকার্য।


তিনি যখন নিজের চরিত্রায়ন সম্পর্কে বলেন,”এই ধরণের একটি চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে কতখানি নিখুঁত হতে হবে প্রতি পদক্ষেপে, এটা আমি জানতাম। এটাও জানতাম, আমার লুক, কস্টিউম, মেকআপ এবং বডি ল্যাঙ্গোয়েজ যেন সেই সময়কে ধরতে পারে, সেদিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখা জরুরি। তার জন্য যা যা করণীয়, করেছি আমি।” করেছেন তিনি। ওজন কমিয়েছেন। প্রতিদিন শুটিংয়ের আগে ৪ ঘন্টা ধরে মেকআপ চেয়ারে বসেছেন। কস্টিউম ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রোডাকশন ইউনিটের পাশাপাশি নিজেও খেয়াল রেখেছেন। সত্যি কথা বলতে কী, চঞ্চল চৌধুরী এমন একজন অভিনেতা, যিনি শুধু নিজে ভালো কাজ করেন, এমন নয়, অনুপ্রাণিত করেন গোটা টিমকে।

সেই কারণেই ‘কারাগার’ দুই বাংলার ওয়েব দর্শকেরই মন জয় করে নিয়েছে দ্রুত। গত ১৯ শে আগস্ট হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছিল সিরিজের প্রথম সিজন। ওপার বাংলায় তো আগেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন চঞ্চল। এপার বাংলাতেও ‘কারাগার’ প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই চঞ্চলকে ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে। তবে, শুধু চঞ্চল নন। বলতে হবে ইন্তেখাব দিনারের কথাও। অভিজ্ঞ এই অভিনেতা, আকাশনগর জেলের ওয়ার্ডেন মোস্তাক আহমেদের ভিতরে যে অশান্তি, টানাপোড়েনের ঝড় চলে, তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন নিপুণ অভিনয়ে। ব্যক্তিত্বে চমৎকার আই জি হুমায়ূন কবিরের ভূমিকায় জাহিদ হাসান শোভন। খুব ভালো লাগে মাহার চরিত্রে তাসনিয়া ফারিনকেও। অভিনয়ে নজর কেড়ে নেন অফিসার, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ আশফাকের চরিত্রে এফ এস নঈমও। এছাড়া রয়েছেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনেতা এবং অসংখ্য ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করেছেন এমন অভিনেতারা। বলতে দ্বিধা করবো না, সকলেই নিজের জায়গায় নিখুঁত। তেমনই নিখুঁত এর সেট, লোকেশন, সংলাপ, প্রত্যেকের কস্টিউম ও মেকআপ।


প্রথম সিজনের শেষ পর্বে আমরা দেখি, মাহা তার বাবার ব্যাপারে খোঁজখবর করতে ডেভিড আলম (চঞ্চল) থুড়ি রহস্যময় সেই চরিত্রের মুখোমুখি, যে কিনা দাবি করে, ১৭৭১ সালে মীরজাফরকে খুন করার অপরাধে বন্দি হয় সে। তখন থেকেই সে আকাশনগর কারাগারের এই ঘরটিতে আবদ্ধ। রহস্য জমে ওঠে তার এই অদ্ভুত দাবিকে ঘিরেই। মাহার সঙ্গে ইশারায় কথা বলার পর কাগজে তাকে কিছু লিখে দেয় ডেভিড। এরপর মাহাকে আমরা দেখি এক চার্চে, ফাদারের সামনে। এখানে এসে একটি বই দেখে চমকে যায় মাহা। এদিকে কারাগারে নতুন এক কয়েদি। সে এসে ডেভিডের সামনে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে সাংকেতিক কিছু বার্তা বিনিময় হয়। আমরা বুঝতে পারি খুব বড় কোনও ঘটনা ঘটতে চলেছে। তার চেয়েও বড় চমক, দর্শক দেখেন, ডেভিড দিব্যি কথা বলছে লোকটির সঙ্গে। তাহলে সে মূক ও বধির নয় ! কী ঘটাতে চলেছে এরা ? আইজি চাইছেন কারাগার শিফটিং অর্থাৎ এই পুরোনো ভাঙাচোরা বিল্ডিং থেকে দ্রুত নতুন জায়গায় কয়েদিদের নিয়ে যেতে। সেটা কী সম্ভব হবে ? এইসব নানা প্রশ্নের জবাব পেতে তীব্র অপেক্ষায় দর্শক।
বাংলাদেশের পটভূমিকায় তৈরি ‘কারাগার’ পরিচালনায় আছেন সৈয়দ আহমেদ সওকি। তাঁর নিপুণ নির্দেশনায় এই সিরিজ এতটাই স্মার্ট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে, যা নিঃসন্দেহে পাল্লা দিতে পারে আন্তর্জাতিক মানে যে থ্রিলারগুলি আমরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখি, তার সঙ্গে। ২৫০ বছর ধরে একজন মানুষ কারাগারে বন্দি, এটা যেমন এক টানটান রহস্যের বিষয় হিসেবে উঠে আসে। তেমনই কারাগারের পরিবেশ রচনায় পরিচালক এর অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র, অসাধুতা ও অপরাধচক্রের বিষয়টিও সুন্দর নিয়ে এসেছেন। অনেক রহস্য, অনেক প্রশ্ন। দর্শকের জিজ্ঞাসার পারদ চড়ছে। তবে, আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। আগামী ১৫ ডিসেম্বরই হইচইয়ে মুক্তি পাচ্ছে ‘কারাগার ২’।