আগ্রহ তুঙ্গে – আসছে ‘মির্জাপুর’ ৩
অনেকেই অভিযোগ করেন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মানেই ক্রাইমের ছড়াছড়ি। কথাটা খুব ভুল নয়। তার সঙ্গে এটাও ঠিক, ‘মির্জাপুর’-এর মতো একটি সিরিজ যখন আমরা এই প্ল্যাটফর্মে দেখি, তখন চিত্রনাট্যের কোথাও কোনও কষ্টকল্পনা চোখে পড়ে না। বরং মনে হয়, আয়না এখানে একেবারে সমাজের মুখের সামনে। এই মুখগুলি আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীর অংশীদার না হলেও, এরা আমাদের যথেষ্ট চেনা। রাজনীতি, প্রশাসন ও অপরাধ জগৎ যে এখন প্রতিনিয়ত হাত ধরাধরি করে চলে, তার ঝলক সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে ধারাবাহিক ভাবেই গোচরে আসে সকলের।
‘মির্জাপুর’-এর বিনোদন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান একদল গুণী অভিনেতাকে তাঁদের যোগ্য আসনে বসানো–এঁরা আমাদের কাছে চেনা হয়েও প্রায় অচেনা ছিলেন। পরিচালক করণ অংশুমান, গুরমিত সিং ও মিহির দেশাই অভিনেতা নির্বাচনে কতটা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তা এই সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় সিজনেই দর্শক বুঝে গেছেন। অভিনয় প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আরও কিছু তথ্য।
ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটর অর্থাৎ যাঁরা কাগজে-কলমে বিষয়টাকে নিয়ে আসেন, তাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম। কনটেন্ট ভালো না হলে, দক্ষ অভিনেতাও বেকুব বনে যান–এই অভিজ্ঞতা আমাদের বড় ও ছোটপর্দায় ফিকশন দেখার ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটে থাকে। আদতে এটা যে কনটেন্টের যুগ, তা ওটিটি বিপ্লবই বলে দিয়েছে। ‘মির্জাপুর’-এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী তিন ক্রিয়েটর করণ অংশুমান, পুনীত কৃষ্ণ ও বিনীত কৃষ্ণের নাম তাই শুরুতেই উল্লেখ জরুরি। আর সিরিজের কার্যনির্বাহী প্রযোজক যেখানে ফারহান আখতার ও রিতেশ সিধওয়ানির এক্সেল এন্টারটেনমেন্ট–সেখানে কনটেন্ট তো গুরুত্ব পাবেই। আমাজন প্রাইম ভিডিও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘মির্জাপুর’-এর সৌজন্যেই যে প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকটা এগিয়ে গেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে কাকে ছেড়ে কার কথা বলি। অখন্ডানন্দ ত্রিপাঠি ওরফে কলীন ভাইয়ার চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠির কথাই ধরা যাক। এনএসডি’র এই প্রাক্তনী এই মুহূর্তে হিন্দি ছবির এক অপরিহার্য চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু তাঁর যথাযোগ্য জায়গাটা নিঃসন্দেহে ‘মির্জাপুর’-এর কারণেই সঠিক দিশা পায়। গত ২টি সিজন ধরে কলীন ভাইয়ার দাপট দেখছে ওটিটি দর্শক। কার্পেট ব্যবসার আড়ালে কোটিপতি ব্যবসায়ী আদতে একজন মাফিয়া ডন–পঙ্কজের সেরিব্রাল অভিনয়ে অখন্ডানন্দ বা কলীন, যে নামেই আসুন পর্দায় পঙ্কজ–দর্শক প্রতিবার নড়েচড়ে বসেছে।
বিস্ময়ে স্তব্ধ করে দেয় আলি ফজল, বিক্রান্ত মেসি, শ্রিয়া পিলগাঁওকর, রসিকা দুগাল, দিব্যেন্দু শর্মা, শ্বেতা ত্রিপাঠি, ঈশা তলোয়ার, হর্ষিতা শেখর গৌর, রাজেশ টাইলং, বিজয় বার্মা, শত্রুঘ্ন ত্যাগী, প্রিয়াংশু পেইনুলি, শাজী চৌধুরী, আনজুম শর্মা, নেহা সরগম প্রমুখ। অভিনয়ে এক সে বড়কর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন প্রত্যেকেই। আর কুলভূষণ খারবান্দা, লিলিপুট, শিবা চাড্ডাদের কথা আর নতুন করে কী বলবো ! রিয়ালিস্টিক অভিনয়ের রাজা এঁরা। আর ওটিটি দর্শক তো এই অভিনয়ের ম্যাজিকেই মজেছেন।
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চল–মূলত মির্জাপুর, জৌনপুর, আজমগড়, গাজীপুর, লখনৌ, রায়বেরিলি, গোড়খপুর ও বেনারসের নানা লোকেশনে শুটিং হয়েছে ‘মির্জাপুর’-এর। ২০১৮-র নভেম্বরে ‘মির্জাপুর’-এর প্রথম সিজন দেখেন ওটিটি দর্শক। ৯ পর্বের প্রথম সিজনেই তৈরি হয় টানটান উত্তেজনা। দর্শক আগ্রহ তুঙ্গে ছিলই। ১০ পর্বের দ্বিতীয় সিজন ২০২০ অক্টোবরে শুরু হতেই দর্শক সমান উৎসাহে ডুবে যায় ‘মির্জাপুর’-এর পরবর্তী কাহিনির মায়াজালে। শুরু থেকেই অপরাধ এখানে শুধু ঘরের বাইরে নয়। সমাজের চৌহদ্দি ছেড়ে বারবার অপরাধের থাবা ছুঁয়ে গেছে পাত্রপাত্রীদের পারিবারিক জীবন। একদিকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এলাকা দখলের লড়াই। অন্যদিকে ঘরে ঘরে অসাধুতা আর অসৎ সম্পর্কের চোরাস্রোত।
এতকিছুর পর সিজন ৩-এর অপেক্ষায় থাকবেই দর্শক। সিজন ২ এসেছিল প্রথম সিজনের দু’বছর পর। ২০২১-এ সিজন ৩ আসার কথা শোনা গেলেও সেটা বাস্তবায়িত হতে পারেনি–সম্ভবত কোভিড পরিস্থিতির জন্য। তবে, ঘোষণা হয়ে গেছে। ট্রেলর লঞ্চ হয়েছে। দর্শকের মনে প্রশ্ন অনেক। মুন্না কী ফিরবে, এটাই সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা ! প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে কলীন ভাইয়ার মনে। কী দশা হবে রাজা, গুড্ডু এবং গোলুর? বীনার ভাগ্যেই বা কোন শাস্তি লেখা আছে ! কলীন তার বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিল কী ? আপাতত অপেক্ষা। এ বছরেই আসছে ‘মির্জাপুর’ সিজন ৩।