আমি কিন্তু মোটেই মৌয়ের মতো নই, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করি
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবীর ইচ্ছা ছিল অন্যকিছু ! ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ স্বীকৃতি মজুমদার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন অজন্তা চৌধুরী। দুটি পর্বে প্রকাশিতব্য সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ।
তোমার অভিনয়ে আসাটা কী হঠাৎই, না, পূর্ব পরিকল্পনা ছিল ?
◾না, কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারে যেমন ছোট থেকে পড়াশোনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, তেমন একটি পরিবারেই আমার বেড়ে ওঠা। তবে হ্যাঁ, তিন বছর বয়স থেকে আমি নাচ শিখেছি। মূলত কত্থক শিখলেও, ভারতনাট্যম, ওড়িশিতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এভাবেই চলছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বায়োটেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করি। ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে চাকরিও পাই। সেটা অতিমারী শুরুর ঠিক আগে। আমি মানসিকভাবে মুম্বাইতে চাকরিতে জয়েন করব বলে মনস্থির করে ফেলেছি। এই সময় মা আমার অজান্তেই একটা বিউটি কনটেস্টে আমার নাম এনরোল করিয়ে দেয়। ব্যস এরপরই সব বদলে যায়।
তাহলে বলা যায়, বিউটি কনটেস্টের সূত্রেই দরজাটা খুলে গেল!
◾ ঠিক তাই। কনটেস্ট অর্গানাইজারদের পক্ষ থেকে অডিশনের জন্য ফোন আসাতে তো আমি অবাক ! মাকে বলাতে, মা অডিশনে যেতে বলল। গিয়ে দেখি প্রায় ৬০০টা মেয়ে–দেখতে সুন্দর, ফিগারও দেখবার মতো। আমার তো খুব নার্ভাস লাগছিল। মাকে বললাম, এদের এটা প্রফেশন, এই বিষয়ে ট্রেনিংও আছে, আমি তো একদম নভিস। মা নাছোড়বান্দা। যাই হোক, এরপর গ্রুমিং শুরু হল (১৫ দিনের)। শেষে ফাইনাল রাউন্ড। ফাইনালে সেকেন্ড পজিশন অর্জন করে আমি পি. সি. চন্দ্র গোল্ডলাইট দিবা হলাম।
এরপরই কী অভিনয়ে আসার পথটা নির্ধারিত হয়ে যায় ?
◾ সেটা বলা যায়। যদিও, তখনও আমি মুম্বাইতে চাকরিতে জয়েন করার সিদ্ধান্তে স্টিক করে আছি। এরইমধ্যে আমি মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের সাহায্যে একটা পোর্টফোলিও তৈরি করি। ঠিক এই সময়েই স্টার জলসা থেকে আমার কাছে একটা ফোন এলো। একটা পুরনো সিরিয়ালের নির্বাচিত অংশের অভিনয় করে পাঠাতে বলল ওরা। আমি পাঠালাম। কয়েকদিন পরই জানতে পারলাম, আমি সিলেক্টেড হয়েছি। এরপর প্রোডাকশন হাউস থেকে আমাকে ডাকে এবং জানায় ‘খেলাঘর’-এ মুখ্য চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছি আমি। ‘খেলাঘর’ দিয়েই আমার অভিনয় কেরিয়ার শুরু হলো।
এই যে নতুন একটা জার্নি শুরু হলো, এর প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
◾ অদ্ভুত একটা সময় ! চাকরি করব, কী, করব না, সেই টানাপোড়েন। অন্যদিকে যথারীতি ‘খেলাঘর’-এর শুটিং শুরু হয়ে গেল। প্রথম দিন শুটিংয়ের পর বাড়ি এসে আমার মনে হলো, একদম ভালো অভিনয় করিনি। আসলে আমার বাংলা উচ্চারণে একটু টান ছিল। হিন্দি এবং ইংরেজিতে যতটা স্বছন্দ, বাংলায় ততটা সাবলীল ছিলাম না। যাই হোক, মনে দ্বিধা থাকলেও, কাজটা করছিলাম। এই প্রেক্ষিতেই মা আমায় বলল “ভালো রেজাল্ট আছে তোর। আর একটা চাকরি তুই যে কোনও সময় পাবি। এখন যে সুযোগ না চাইতেই পেয়েছিস, সেটার সদ্ব্যবহার কর।” তো, সেটাই করলাম। তারপর ধীরে ধীরে কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম। এখন তো ১২-১৪ ঘন্টার শুটিং-এ অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
‘মেয়েবেলা’-র মৌ চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের তোমার মিল বা অমিল কতটুকু ?
◾পুরোটাই অমিল। মৌয়ের সঙ্গে স্বীকৃতির কোনও মিলই নেই। মৌ সাবমিসিভ। অন্তত, গল্পের প্রয়োজনে তাকে সাবমিসিভ থাকতে হয়। পছন্দ না হলে প্রতিবাদ করার সাহস নেই। যেহেতু, তার মা-বাবা কেউ নেই। মাসি-মেসোর আশ্রিতা সে। আমার সিচুয়েশন তো সেরকম নয়। তাই দুজনের চরিত্রে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি প্রতিবাদী। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করি। হয়তো একটু ক্ষেপে উঠেই শান্ত হয়ে যাই। কিন্তু, প্রতিবাদ করবই।
‘মেয়েবেলা’-র বিষয়ে তোমার নিজের ভাবনা জানাও।
◾সচরাচর মেগা বলতে আমরা যা বুঝি, ‘মেয়েবেলা’-র গল্পটা ঠিক তেমন নয়। ‘মেয়েবেলা’-তে অনেক বেশি রিয়ালিস্টিক স্টাইল মেনটেন করা হতো। স্ক্রিপ্ট থেকে ডিরেকশন, হেয়ার স্টাইল-মেকআপ, সেট-লাইট-ক্যামেরা–সব কিছই ছিল খুব স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ, আরোপিত নয়। আমার ঠোঁটে যদি একটু লিপবামও থাকত, সেটাও ঘষে তুলে ফেলা হতো। কারণ আমার যে চরিত্রটা–তার কিছু নেই, সে কিছু জানে না। মৌয়ের চটি কেনা হত ফুটপাত থেকে। একটা নতুন ব্যাগ কেনা হলো আমার জন্য। কিন্তু, ঝকঝকে নতুন ব্যাগ তো আমার চরিত্রের সঙ্গে মানানসই নয়। ব্যাগটাকে প্রোডাকশনের লোকেরা নানারকমভাবে পুরোনো রূপ দিল, যেমনটা আমাকে মানায়। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, যে বাড়িতে শুটিং হচ্ছে, সেটা কোথায় ? ওটা তো বিশেষ কোনও বাড়ি নয়, ওটা তো সেট। কিন্তু, সেটটা এমন, এত সুন্দর যেটা আমরা সচরাচর দেখি না। গল্পটাও খুব স্বাভাবিক। নেগেটিভ ক্যারেক্টর যেগুলো ছিল, লক্ষ্য করবে সেটাতেও কমিক শেড ছিল। যেটায় কমিক শেড নেই, সেখানেও তার কাজটার সুনির্দিষ্ট যুক্তি ও কারণ ছিল। অকারণে কিছু হতো না।
মেয়েবেলা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
◾ ভীষণ ভালো। ‘খেলাঘর’ শেষ হওয়ার পর আমার প্রচন্ড টেনশন ছিল, আমি আর একটা প্রোডাকশন হাউজের সঙ্গে কীভাবে এডজাস্ট করব ! ‘খেলাঘর’ প্রায় দু’বছর চলেছিল। সবাই পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল। একটা আলাদা বন্ডিং তৈরি হয়। ভাবতে পারিনি যে এরকম বন্ডিং আমার অন্য কোথাও হতে পারে। এখানে এসে দেখলাম–ডিরেক্টরিয়াল টিম, অভিনেতা ও ক্রু মেম্বাররা সবাই ভীষণ ভালো। পরিচালক ‘কাট’ বললেই, দাসানি ওয়ান-এর বাইরে পাতা চেয়ারে চা নিয়ে পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই একসঙ্গে বসে আড্ডা মারতাম। আবার ‘একশন’ বললেই সবাই সিরিয়াস। জোরকদমে শুটিং শুরু। (চলবে)
***ছবি ঋণ : স্বীকৃতি মজুমদার