Sunday, February 2, 2025
প্রজ্ঞা পাবলিকেশন

উপন্যাস – দেহলিজ-এ-দোজখ|প্রদীপ্তা রায়চৌধুরী সেন|প্রকাশক – প্রজ্ঞা পাবলিকেশন|পাঠ প্রতিক্রিয়া|

জানালেন – শ্রী সৌরভ আঢ্য

উপন্যাস – দেহলিজ-এ-দোজখ

লেখক – প্রদীপ্তা রায়চৌধুরী সেন

প্রকাশক – প্রজ্ঞা পাবলিকেশন

বাঁধাই – হার্ড বাউন্ড

মুদ্রিত মূল্য – ৩৮০ /-

-পাঠ প্রতিক্রিয়া? সে আবার কী? আরে ভাই আমি পড়িই কম…

– না মানে পড়ি কেবল নিজের জন্য, মানে ওই ছাই পাশ দু চার কলম যা লিখি তার জন্য যেটুকু পড়তে হয় আর কী!

– আরে আমি খুব স্লো রিডার। একসময় খুব দ্রুত পড়তে পারলেও সময়ের সঙ্গে সব গেছে। এখন আমি শেখার জন্য পড়ি। তাই…

– আরে বইটাই এমন ছিল যে বাধ্য করিয়ে নিয়েছে একটানা পড়তে।

-লিখতেই হবে?

-আচ্ছা তবে তাই হোক।

এরকমই অনেক টাল বাহানার পরে মানে নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধের পরে এই বইটার পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখবো বলে ঠিক করলাম। আসলে কিছু বইয়ের কথা সকলের জানা উচিত, পড়া উচিত। তাই আর কী!

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আজ যে বইটার কথা আপনাদের বলবো তার নাম #দেহেলিজ_এ_দোজখ।

দেহলিজ-এ-দোজখ বইটির আলোচনা করতে গিয়ে যেটার কথা প্রথমেই বলবো সেটা হল বইয়ের প্রচ্ছদ। যতই বলা হোক না কেন “don’t judge a book by its cover” তবুও আমার মতে প্রচ্ছদ হল বইয়ের অন্দরমহলে প্রবেশের প্রথম রত্নখচিত সোপান, সেই সোপান যদি সুসজ্জিত আর বিষয়ানুগ হয় তাহলে বই পড়ার আগ্রহ পাঠকের অনেকাংশেই বেড়ে যায়। উপরন্তু বইমেলার লক্ষ বইয়ের ভিড়ে পাঠক বাধ্য হন মনোগ্রাহী প্রচ্ছদের বই হাতে নিয়ে একবার হলেও দেখতে। আর এই বিষয়ে শিল্পী অভীক দাস ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন। রঙের ব্যবহার থেকে লেটারিং সবেতেই তিনি যাকে বলে, বলে বলে ১০ গোল দিয়েছেন।

দ্বিতীয় যে বিষয়ে আসবো সেটা হল মাননীয়া লেখিকার ভাষার উপর দখল। কী অবলীলায় তিনি ভাষার টাইম মেশিনে চড়িয়ে আমাদের একবার মোঘল পিরিয়ডের দেহেলিতে নিয়ে গেছেন তো পরক্ষণেই এনে দাঁড় করিয়েছেন খান্ডবপ্রস্তে, যখন ইন্দ্রপ্রস্ত তৈরীও হয় নি। এবং দুটি টাইম পিরিয়ডের জন্য দুটি আলাদা ডায়লেক্ট। দুটি টাইম পিরিয়ড প্যারালাল চলেছে, কিন্তু পাঠক হিসাবে আমার কখনও মনে হয় নি যে আমি আগের চ্যাপ্টারের ছেড়ে রাখা সুতো হারিয়ে ফেললাম বলে। এখানেই লেখিকার কৃতিত্ব। ভাষার ভারে ভারাক্রান্ত না করে পাঠকের মাথায় শব্দ নিয়ে খেলা করার।

এবার আসি উপন্যাসের বিষয়বস্তুতে। এখানেই আমি সবচেয়ে বেশি চমকেছি। কী অবলীলায় মহাভারত আর  অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তথ্য বিকৃতি না করেও যে ফিকশন লেখা যায় এই বই যেন তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। মহাভারত থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের মশনদে বসা একটি বিশেষ বংশ যেভাবে (বইয়ে লেখিকা নাম পরিবর্তন করেছেন তাই আমিও সেই নাম উল্লেখ করলাম না ) উঠে এসেছে তা চমকে দেওয়ার মত। সুদীর্ঘ কয়েক হাজার বছরের ঘৃণার ইতিহাস, ষড়যন্ত্রের ইতিহাস যেন রক্তাক্ষরে মুদ্রিত হয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়। সর্পসত্র যজ্ঞ থেকে হুমায়নের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়া, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ থেকে কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবার (?), বেদব্যাস থেকে আমির খসরু কী অবলীলায় যাতায়াত করেছেন লেখিকা। তার পড়াশোনা, জ্ঞানের পরিধি আমাকে চমকেই দেয় নি খালি, গুলিয়েও দিয়েছে কোনটা ইতিহাস আর কোনটা কল্পনা।

বইয়ের মুদ্রণ, ফন্ট সাইজ, বাইন্ডিং খুব ভালো। এর জন্য প্রকাশকের কৃতিত্ব প্রাপ্য।

কিন্তু বইয়ের খারাপ কি কিছু নেই? আছে। বইয়ের অলঙ্করণগুলি আমার পছন্দ তো হয়ই নি উপরন্তু গল্পের   যে যে পাতায় তা ছাপা তার সঙ্গে লেখার মিল খুঁজে পাই নি ( একটি বাদে )। আমার মতে এই বইয়ে অলঙ্করণ বাহুল্য। কোন প্রয়োজন ছিল না।

দুই লেখিকার প্রাচীনকালের ডায়লেক্টে বাংলার মধ্যে হিন্দি শব্দের ছাপ এসেছে। হয়ত লেখিকা প্রবাসী বাঙালি বলেই এটা হয়েছে। যদিও এতে গল্পের হানি তো হয়ই নি, অনেকক্ষেত্রে এটাই মাধুর্য বাড়িয়েছে তবুও আমি লেখিকাকে বলবো এই বিষয়টি একটু খেয়াল রাখতে।

আর বাকি যা আছে তা ফাটাফাটি।

তাহলে আর কী! আজ এই অবধিই। আমি আপনাদের সকলকেই বলবো একবার হলেও বইটা পড়ুন। আমি তো বইটা শেষ করার আগে থামতে পারি নি, কে বলতে পারে আপনার ক্ষেত্রেও তাই হবে না!

অতএব পড়া চলতে থাকুক।

অলমিতি।

—————————-

প্রাপ্তিস্থানঃ

  • প্রজ্ঞা পাবলিকেশনের নিজস্ব বিপণী। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, প্যারামাউন্টের ঠিক বিপরীতে।
  • ঘরে বসেই বইটি হাতে পাওয়ার জন্য WhatsApp করুন 9147364898 – এই নম্বরে।

অন্যান্য প্রাপ্তিস্থান –

  • দে বুক স্টোর (দীপুদা)
  • জানকী বুক ডিপো (সুখরঞ্জন দা)
  • বইবন্ধু