Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

এক রানি ও এক বর্ণময় ইতিহাস

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। আজ বহু আলোচিত, আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত ‘দ্য ক্রাউন’  নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা

গত ৮ সেপ্টেম্বর যেন হঠাৎ করে বিস্মৃতির অতল থেকে উঠে এলো তাঁর নাম। রানি এলিজাবেথের (২) মৃত্যু ও একটি যুগের অবসান। যদি বলি, এই ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির প্রেক্ষিতেই ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ক্রাউন’-ও নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে, বাড়িয়ে বলা হবে না। এ বাবদ প্রথমেই সুখবরটা দিই। আগামী ৯ নভেম্বরে নেটফ্লিক্স-এ আসছে ‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজন। প্রসঙ্গত, ‘দ্য ক্রাউন’-এর পুরোটা জুড়েই আমরা দেখি এক রানির জার্নি। অভিজাত, বৈভবপূর্ণ, বর্ণময় ও বিলাসবহুল জীবনের আপাত সুখের আড়ালে কত যে অন্ধ আকুতি, দীর্ঘশ্বাস ও হাহাকার ! কত ষড়যন্ত্র, সম্পর্কের জটিল ঘূর্ণিপাক, আপনজনের দূরে সরে যাওয়া এবং পরমাত্মীয়ের মৃত্যু যন্ত্রনা ! তারই মধ্যে পড়তিবেলায় রাজত্ব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা! দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক ডামাডোল ! কৈশোর থেকে এভাবেই যে কেটেছে রানির দিনগুলি। একেবারে শুরুতে নির্ধারিত জীবনরেখার পথে নিজেকে তৈরি করা। তারপর কণ্টকিত সিংহাসন লাভ। বাকিটা তো সাদা-কালো-ধূসরের ইতিহাস।

Images 2 21
এক রানি ও এক বর্ণময় ইতিহাস 8

‘দ্য ক্রাউন’ নেটফ্লিক্স-এ দেখানো শুরু হয় ২০১৬-র নভেম্বর। প্রযোজনা সংস্থা লেফট ব্যাংক পিকচার্স ও সোনি পিকচার্স টেলিভিশন। ক্রিয়েটর পিটার মরগ্যান। তিনিই মুখ্যত লিখেছেন কাহিনি। প্রসঙ্গত, মরগ্যান তাঁর ২০০৬-এর ছবি ‘দ্য ক্রাউন’ এবং স্টেজ প্লে ‘অডিয়েন্স’ থেকে ওয়েব সিরিজের কাহিনি নির্মাণ করেন। প্রথম সিজনে আমরা দেখি ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপের সঙ্গে এলিজাবেথের বিয়ে, বোন মার্গারেটের বিয়ে ইত্যাদি। ঐতিহাসিক সময়কাল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল। পরের অর্থাৎ দ্বিতীয় সিজনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে উল্লেখ্য সুয়েজ খাল সমস্যা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যকমিলনের অবসর গ্রহণ ও প্রিন্স এডওয়ার্ডের জন্ম। এখানে ধরা হয়েছে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত সময়কালকে।

১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত সময়কাল আমরা দেখি তৃতীয় সিজনে। ব্রিটেনের রাজবাড়ীর অন্দর নাটকে বহু আলোচিত ও বিতর্কিত ক্যামিলা পার্কারের প্রবেশ ঘটে এই সময়েই। এরপর আসে প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের জমানা, চতুর্থ সিজনের হাত ধরে। সময়কাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০-এর শুরু। রানির আসনে এলিজাবেথ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে লৌহমানবী থ্যাচার। দুজনের সম্পর্কের অম্ল-মধুরতা দেখবেন দর্শক এই সিজনে। এরই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার প্রেম ও পরিণয়। এই পরিণয় পরে কোনপথে চালিত করে ঘটনা প্রবাহ, তা মিডিয়ার সূত্রে সকলেরই জানা। সেসব পঞ্চম সিজনে দেখবো আমরা। চতুর্থ সিজনে চার্লসের জীবনে ক্যামিলার প্রবেশ ঘটে গেছে। এরই পাশাপাশি আমরা দেখি নিজের স্বাধীনচেতা ও মুক্ত মন নিয়ে রাজ পরিবারের কঠিন বাঁধনে ছটফট করা এক বিহঙ্গের ডানা ঝাপটানো।

শুরুতেই বলেছি পঞ্চম সিজনের কথা। এই সিজনকে নির্মাতারা অন্তিম পর্বের শুরুয়াত বলছেন। অর্থাৎ এই সিরিজ শেষ হচ্ছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সিজন মিলিয়ে। পঞ্চম সিজনে আমরা দেখবো ব্রিটেনের রাজনৈতিক পটভূমিতে যে পরিবর্তনের রূপরেখা রচিত হচ্ছে এবং সেখানে রাজ পরিবারের যে ভূমিকা থাকছে। মূলত নয়ের দশককেই ধরা হয়েছে এখানে। এরপর দেখার পালা একুশ শতক পর্যন্ত ঘটমান রানি এলিজাবেথের রাজত্ব। এখানেই ডায়ানার মর্মান্তিক মৃত্যুও দেখবো আমরা। এই সিরিজের শরীর জুড়ে রাজকীয় আভিজাত্য। বাকিংহাম প্যালেস থেকে এই পরিবারের আনুষঙ্গিক সমস্ত বিচরণক্ষেত্র নির্মাণে প্রভূত যত্ন চোখে পড়ে। কস্টিউম, এক্সেসরিজ, মেকআপ, প্রতিটি চরিত্রের চলাফেরা, কথাবলা–সর্বত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষনার ছাপ স্পষ্ট। অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর।

Images 2 23
এক রানি ও এক বর্ণময় ইতিহাস 9

রানি এলিজাবেথের চরিত্রে সিজন ১ ও ২-এ অভিনয় করেন ক্লেয়ার ফয় এবং ৩ ও ৪-এ আমরা পাই অলিভিয়া কোলম্যানকে। একইভাবে ম্যাট স্মিথ ও টবিয়াস মেঞ্জিস প্রিন্স ফিলিপের ভূমিকায়। প্রিন্সেস মার্গারেট হয়েছেন ভ্যানেসা কিরবি ও হেলেনা বোনহ্যাম কার্টার। গ্রেগ ওয়াইজ ও চার্লস ড্যান্স–মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকায়। উইনস্টন চার্চিলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জন লিথগো। মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় আমরা পাই জিলিয়ান এন্ডারসনকে। ডায়ানার ভূমিকায় এম্মা করিন। প্রিন্স চার্লস হয়েছেন জোশ ও’কোনোর। ক্যামিলা পার্কারের ভূমিকায় এমেরাল্ড ফেনেল। এঁরা প্রত্যেকেই নামী-দামি অভিনেতা। প্রত্যাশা মতোই অসাধারণ অভিনয়ের দ্বারা চরিত্রগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। ওঁরা ছাড়াও আছে অজস্র গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। স্বাভাবিক। কয়েক যুগের ইতিহাস, বিশাল রাজ পরিবার ও ব্রিটেনের তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ মানুষজন, রাজনীতি থেকে শিক্ষা ও শিল্পকলা। বহু চরিত্রের সমাবেশ তো ঘটবেই। এক্ষেত্রেও অভিনয়ে প্রত্যেকে নিখুঁত, বলা যেতে পারে।

Imelda Staunton Thecrowns05 1644829591
এক রানি ও এক বর্ণময় ইতিহাস 10

সিজন ৫-এ একেবারে নতুন এক অভিনেতা টিম নিয়ে আসতে চলেছে ‘দ্য ক্রাউন’। রানি এলিজাবেথের চরিত্রে আসছেন ইমেলডা স্টাউনটোন। তাঁকে ঘিরে স্বভাবতই প্রত্যাশা তুঙ্গে। এছাড়াও আছেন লেসলি ম্যানভিলে (মার্গারেট), জোনাথন প্রাইস (প্রিন্স ফিলিপ), এলিজাবেথ ডেবিকি (ডায়ানা), ডমিনিক ওয়েস্ট (প্রিন্স চার্লস), অলিভিয়া উইলিয়ামস (ক্যামিলা পার্কার) প্রমুখ। সাল ১৯৯২–পরপর অঘটন। চার্লস ও ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ, নানা গুঞ্জন ও বিতর্ক পল্লবিত রাজ পরিবারকে কেন্দ্র করে। যা গড়াল ১৯৯৭-এ ডায়ানার মৃত্যু পর্যন্ত। এইসবই থাকবে আপকামিং সিজনে। সম্ভবত, ২০০২-এ রানি এলিজাবেথের শাসনকালের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পর্যন্ত এই সিরিজ প্রদর্শিত হবে।  ব্রিটেনের ইতিহাসের এই সময়কে কোন প্রেক্ষিতে কীভাবে দেখানো হবে, তা বোঝা যাবে আর কিছুদিন পরেই। আপাতত তীব্র অপেক্ষা !