এভাবেই ফিরে আসা যায় !
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। গুরু শিষ্যার ম্যাজিকাল জুটি ‘পন্নিন সেল্ভান-২’। লিখেছেন চন্দন রায়।
গুরুর হাত ধরে শিষ্যার ফিরে আসার লড়াই । এ এক অনবদ্য চিত্রনাট্য ! তবে বাস্তব! গুরু এখানে মণি। ভারতীয় সিনেমার এক অমূল্য রত্ন! তাঁর শিষ্যাও কম কিছু নন, ভারতীয় সিনেমায় তাঁর ঐশ্বর্যের ব্যাপ্তি পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের দরবারেও!
পাঠক বুঝতেই পারছেন, কাদের কথা বলা হচ্ছে? হ্যাঁ, পরিচালক মণিরত্নম এবং অভিনেত্রী ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন! ‘মণি স্যর’-এর হাত ধরেই অভিনেত্রী হিসেবে ঐশ্বর্যা রাইয়ের পথ চলা শুরু। ১৯৯৭-তে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইরুভার’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে ঐশ্বর্যার অভিনয় তখনই নজর কেড়েছিল দর্শকের। সহশিল্পী হিসেবে ঐশ্বর্যার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণী সিনেমার দুই তারকা মোহনলাল ও প্রকাশ রাজ। ছবিটি সেই বছর জাতীয় পুরস্কার পায়! তারপরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ঐশ্বর্যাকে। ক্রমশ দক্ষিণ থেকে উত্তর–তথা সমগ্র ভারতেই নায়িকা হিসেবে রাজত্ব করেছেন তিনি।
তবে, অভিনেত্রী হিসেবে জয়যাত্রার মাঝেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। সলমন খানের সঙ্গে প্রেম ও বিচ্ছেদ ! বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে ক্ষণিকের সম্পর্ক ! পরবর্তীতে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থিতু হয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনে–মা হয়েছেন কন্যাসন্তান আরাধ্যার জন্ম দিয়ে। এককথায় পরিপূর্ণ জীবন! কিন্তু তারকার জীবন কি আর এত সরলরেখায় বইতে পারে ?
কেন? আসছি সেই কথায়। তার আগে আবার একটু গুরুর দিকে ফিরে তাকানো যাক। ঐশ্বর্যা যে সময় বিয়ে করে মা হয়েছেন, তখন সমসাময়িক অনেক অভিনেত্রীই বিয়ে করার পর অভিনয় কেরিয়ারকে গুডবাই জানিয়ে সংসার করায় মন দিয়েছেন! করিশ্মা থেকে রবিনা অনেকেই আছেন উদাহরণ স্বরূপ। ঐশ্বর্যার কেরিয়ারেও হয়তো এই অমোঘ যবনিকা নেমে আসত! কিন্তু, সময়মতো তাঁর অভিনয় কেরিয়ারে অব্যর্থ অক্সিজেন যুগিয়েছেন গুরু মণিরত্নম! ২০০৭-এ মুক্তি পায় মণির ছবি ‘গুরু’। এই ছবি যেমন ঐশ্বর্যার স্বামী অভিষেক বচ্চনের কেরিয়ারে এনে দেয় এক মাইল ফলক, তেমনই ঐশ্বর্যাকেও প্রাসঙ্গিক করে রাখে দর্শকের কাছে। অন্যধারার অভিনয়ে ঐশ্বর্যাকে এনে দেয় নতুন খ্যাতি।
প্রায় একই ধারা বজায় থাকে এর বছর তিনেক পরেও! মণি স্যর ২০১০-এ তৈরি করেন ‘রাবণ’, পুরাকাহিনি আধারিত বর্তমানের সেই ছবিতেও অভিষেক বচ্চন এবং ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে এনে দিল খ্যাতির অন্যমাত্রা। তারপর প্রায় এক দশক গুরু ও শিষ্যা অর্থাৎ মণিরত্নম ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের জীবন প্রবাহিত হয়েছে নিজ নিজ খাতে। মণি ছবি করা কমিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই আর ঐশ্বর্য মন দিয়েছেন ঘরকন্যায়, মেয়েকে বড় করে তোলায়। ঐশ্বর্যার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল ২০১৮-র ‘ফ্যানি খান’। সে ছবি তেমন কোনও সাড়া ফেলতে পারেনি দর্শকমহলে। এরপর কেরিয়ারে দীর্ঘ বিরতি আর দেহের ওজন দুটোই বাড়তে থাকে একদা বহু পুরুষের হার্টথ্রব ঐশ্বর্যার!
এরপর আবার দ্রোণাচার্যর মতোই আসরে অবতীর্ণ হলেন মণিরত্নম। কল্কি কৃষ্ণমূর্তির লেখা জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘পন্নিন সেল্ভান’-কে সিনেমার পর্দায় নিয়ে এলেন মণি স্যার–একটি নয়, দুটি ছবির মধ্য দিয়ে। চোল রাজত্বের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই কাল্পনিক কাহিনিতে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে ফিরিয়ে আনলেন তাঁর প্রিয় শিষ্যা ঐশ্বর্যাকে। সব সমালোচনার জবাব দিয়ে এ এক অভূতপুর্ব কামব্যাক ঐশ্বর্যার !
২০২২-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পন্নিন সেল্ভান’ প্রশংসা কুড়িয়ে নিল দর্শক ও সমালোচকদের। বক্স অফিসে ৫০০ কোটি টাকার ব্যাবসা করল এই ছবি। তামিল ভাষার প্রথম পাঁচটি ছবির মধ্যে স্থান করে নিল। আর চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩-এর এপ্রিলেই মুক্তি পেল ‘পন্নিন সেল্ভান-২’। ঐশ্বর্যার কেরিয়ারে সোনালি দিন ফিরিয়ে এনে দিল এই ছবি! আবারও সাফল্যের বন্যা বইতে শুরু করেছে সর্বত্র। সেই জোয়ার শেষ পর্যন্ত কতদূর পৌছয়, সেটাই দেখার।
এমনিতেই ‘বাহুবলী’ পরবর্তী সময় থেকে দক্ষিণী ছবি রাজত্ব করছে গোটা দেশ জুড়ে। এমনকী বলিউডও সেই দাপটে কাঁপছে! সম্প্রতি বিশ্ব দরবারে অস্কার মঞ্চে ‘আর আর আর’-এর সাফল্য ভারতীয় মূলধারার ছবির সমীকরণটাকেই অনেকাংশে বদলে দিয়েছে! যদিও মণিরত্নমের ছবির ভাষা বর্তমানের সফল দক্ষিণী ছবিগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে মণিরত্নমের হাত ধরে ঐশ্বর্যার এই ফিরে আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ!
এরপরে ঐশ্বর্যার অভিনয় কেরিয়ার কি সতিই আবার নজরকাড়া সাফল্যের বাঁকে এগোবে? নাকি আবারও তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে মণিরত্নমের নতুন কোনও ছবির প্রস্তাবের জন্য? এর উত্তর দেবে সময়! আপাতত আমরা গুরু মণি ও শিষ্যা ঐশ্বর্যার এই জোড়া সাফল্যকেই উদযাপন করায় মন দিই নতুন ছবিটা দেখে! ‘পন্নিন সেল্ভান’ ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। মিস করে গেলে দেখে নিতে পারেন। আর ‘পন্নিন সেল্ভান-২’ তো হলেই চলছে রমরমিয়ে।