Monday, May 12, 2025
ওয়েব-Wave

ওয়েবসিরিজে বিতর্কিত ম্যারিটাল রেপ

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। আজ হইচই-এর ‘সম্পূর্ণা’ নিয়ে লিখেছেন মন্দিরা পান্ডা।

ম্যারিটাল রেপ! ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই শব্দটির সঙ্গে বেশ পরিচিত‌। সমাজে এযাবৎকাল পর্যন্ত যে মতটি প্রতিষ্ঠিত, সেটা হলো,  বিয়ে মানেই স্ত্রী’র সমস্ত কিছুর ওপর স্বামীর অধিকার‌। তাই বিয়ের পরে স্বামী যখন ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে নিজের শারীরিক দাবি মেটাতে পারে স্ত্রী’র কাছ থেকে। সম্পর্কে উভয়ের ‘কনসেন্ট’ সেখানে বিলাসিতা। পুরুষের মনের খিদেটাই সব। বিয়ের পরে তো স্ত্রীর শরীরের মালিকানা স্বামীর কাছেই! স্বামী কি কখনও স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে ? সমাজের এই গতে বাঁধা, অভ্যস্ত রীতিনীতির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘সম্পূর্ণা’য়। গত ২৯শে জুলাই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-তে শুরু হয়েছে ফলো ফোকাস প্রোডাকশন হাউজের প্রযোজনায়, সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত এই সিরিজ।

স্যান্যাল বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্র রক্তিম। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ ভালো। বর্তমানে কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত। এহেন হীরের টুকরো ছেলের পাত্রী নির্বাচনে স্যান্যাল গিন্নী কোনোরকম খুঁত রাখতে চায় না। মাল্টিপল চয়েসের ইঁদুর দৌড়ে রুকু তথা রক্তিমের পছন্দ হয় নন্দিনীকে। স্যান্যাল গিন্নী প্রথমে শুভ-অশুভ নানান ভেবে আপত্তি করলেও, পরে বড়বৌমা সম্পূর্ণার মধ্যস্থতায় নন্দিনীকেই পুত্রবধূ হিসেবে নির্বাচন করে। বিয়ের নানান রীতিনীতি মেনে অবশেষে ফুলশয্যা। বিছানায় অপেক্ষারত লাজুক নন্দিনীর কাছে যায় রক্তিম। আজ পৌরুষ দেখানোর পালা। নন্দিনীর সিঁথির সিঁদুর তার সামনে শারীরিক অত্যাচারের সামাজিক বৈধতা। সেই মতোই ‘বৈধ’ অত্যাচারের শিকার হয় নন্দিনী। হতে থাকে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই।  সংবেদনশীল সম্পূর্ণার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হতে দেরি হয় না। নন্দিনীর পাশে দাঁড়ায় সে। সেই অপরাধে তাকে বাড়ি থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। লড়াই শুরু হয়। আর এই লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে থাকে বিশিষ্ট সমাজসেবী স্মিতা ও এক পুলিশ আধিকারিক।

Images 22 1
ওয়েবসিরিজে বিতর্কিত ম্যারিটাল রেপ 7

সম্পূর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ‘মন্দার’-এর লেডি ম্যাকবেথ তথা সোহিনী সরকার‌। নন্দিনী ও রক্তিমের চরিত্রে যথাক্রমে অভিনয় করেছেন, রাজনন্দিনী পাল ও অনুভব কাঞ্জিলাল। এছাড়াও রয়েছেন প্রান্তিক ব্যানার্জি (বড়ছেলে), লাবণী সরকার (মিসেস সান্যাল), রজত গাঙ্গুলি (মিস্টার সান্যাল) প্রমুখ। আপাতত প্রথম সিজন, দেখানো হয়েছে ৬টি পর্বে। এই ওয়েব সিরিজে ঘটনার ঘনঘটা নেই। ক্লাইম্যাক্সের জন্য টানটান অপেক্ষাও নেই। শেষটাও হয়তো সামান্য প্রেডিক্টেবল। কিন্তু তবুও এই ওয়েব সিরিজ শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করবে। প্রিওয়েডিং ফটোশ্যুট, ডেস্টিনেশন ম্যারেজ, সোশ্যাল মিডিয়ার ‘হ্যাপি কাপল্’–এসব আলোর আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু নির্মম সত্য। যা এই ওয়েবসিরিজের প্রতি পরতে পরম যত্নে বোনা রয়েছে।