‘কাবুলিওয়ালা’ মিঠুনের অপেক্ষায় আপামর বাঙালি
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। ছবি বিশ্বাস ও বলরাজ সাহানির ফুটস্টেপ ধরে মিঠুনের কাবুলিওয়ালা হয়ে ওঠা, নাকি, তার বাইরে অন্য কিছু দেখব আমরা! পরিচালক সুমন ঘোষের ‘কাবুলিওয়ালা’ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। লিখেছেন নির্মল ধর।
রবীন্দ্রনাথের অন্যতম সেরা ও চিরায়ত গল্প ‘কাবুলিওয়ালা’ প্রকাশিত হয়েছিল একশো উনত্রিশ বছর আগে। ওঁর অন্যান্য গল্প, উপন্যাস নির্বাক-সবাক পিরিয়ডে সিনেমার পর্দায় এলেও, ‘কাবুলিওয়ালা’ প্রথম পর্দায় এলো ১৯৫৭ সালে। পরিচালক ছিলেন তপন সিংহ। দ্বিতীয়বার বলরাজ সাহানি কাবুলিওয়ালার পোশাক পরেছিলেন প্রযোজক বিমল রায়ের জন্য। ছবিটির পরিচালনায় ছিলেন হেমেন গুপ্ত। দুটি ছবিই সেই দুই সময়ে ছিল সুপার ডুপার হিট। প্রায় বাষট্টি বছর পর তৃতীয়বারের জন্য যুবক রবীন্দ্রনাথের সেই অমর কাহিনিকে বাংলা ছবির পর্দায় নিয়ে আসতে চলেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ।
বাণিজ্যিক মহলে তেমন লোভনীয় নাম নেই সুমনের! ২০০৬ সালে সৌমিত্র অভিনীত ‘পদক্ষেপ’ ছবিটি দিয়ে তাঁর বাংলা সিনেমায় যাত্রা শুরু! বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার, দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয় জীবনে সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ সহ খ্যাতিমান পরিচালকদের অগনিত ছবিতে অনন্যসাধারণ অভিনয় করেও যে সেরা জাতীয় অভিনেতার পুরস্কার সৌমিত্রর হাতে ওঠেনি, সুমন ঘোষের ‘পদক্ষেপ’ তাঁকে সেই পুরষ্কার এনে দিলো। সুমনকে কলকাতা চিনতে পারল সেই সুবাদেই!
তারপর তাঁর পরিচালনায় এলো ‘নোবেল চোর’। নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথের পাওয়া সাহিত্যের সেরা আন্তর্জাতিক ও অমূল্য পুরস্কার স্মারকটি শান্তিনিকেতনের মহাফেজখানা থেকে উধাও হয়ে যায়। বছর অতিবাহিত। সেই নোবেল চোর আজও অধরা! সুমন স্যাটায়েরের ভঙ্গিতে মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় ছবি বানিয়েছিলেন! তিনি নিজে অর্থনীতির ছাত্র। এখন আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিরই অধ্যাপক। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের প্রিয় ছাত্র। তাতে কী, বাংলা সিনেমার প্যাঁচালো অর্থনীতি এখনও সুমন তেমন আয়ত্ব করতে পারেননি।
তাঁর ‘কাদম্বরী’, ‘দ্বন্দ্ব’, ‘পিস হেভেন’ দর্শকপ্রিয় হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম তারকাখচিত ‘বসু পরিবার’! সম্ভবত, সেই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়েই সুমন ঘোষ এবার হাত বাড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ও মিঠুন চক্রবর্তীর দিকে। আর নতুন করে আজকের প্রেক্ষিতে সাজিয়েছেন এই কলকাতায় সুদূর আফগানিস্তান থেকে হিং,আখরোট ফেরি করতে আসা এক গরীব কাবুলিওয়ালার সঙ্গে এক কিশোরীর অমলিন বন্ধুত্বের গল্প। সুমনের ছবিতে একটা সোস্যাল মেসেজ থাকেই। আশা করা যায় এখানেও থাকবে।
শুটিংয়ের ব্যস্ততার ফাঁকেই ফোনে তিনি জানালেন, “রবীন্দ্রনাথের লেখার ওপর বেশি খোদকারির দরকার হয় না! তবু,আজকের সময় ও দর্শকের কথা মনে রেখে কিছু তো বদল করতেই হয়েছে। আমার মনে হয়েছে আজকের দিনে জাতিদাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক হিংসা যেভাবে মানুষের স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে তাতে এই কাহিনি সমান প্রাসঙ্গিক ! পরস্পরের ভাষা না জেনেও কাবুলিওয়ালা আর ছোট মিনির মিষ্টি সম্পর্ক সেইসময়ে লেখক যেভাবে portray করেছেন, সেটা আজকের দিনে নতুন করে দেখানোটা জরুরি!”
বলরাজ সাহানি ও ছবি বিশ্বাসের মতো দক্ষ অভিনেতার পর মিঠুন চক্রবর্তীকে একই চরিত্রে নেওয়া সম্পর্কে সুমন বললেন,”ওঁকে নিয়ে ‘নোবেল চোর’ ছবিতে কাজ করেছি। মিঠুন কতটা ডেডিকেটেড চরিত্র ও কাজের প্রতি, সেটা খুব ভালো করেই আমি জানি। সেই বিশ্বাস থেকেই নিয়েছি ওঁকে!” “মিঠুন চক্রবর্তীর পুরনো ডিসকো ডান্সার ইমেজ এখন আর নেই! তিনি সু ও দক্ষ অভিনেতা হিসেবেই আজ সমাদৃত। নইলে, তিন তিনবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার তো তিনি এমনি এমনি পাননি ! কাবুলিওয়ালার চরিত্র তিনি কীভাবে ইন্টারপ্রেট করবেন, তা নিয়ে কিচ্ছু বলেননি। শুধু মুচকি হেসে নীরব ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেখ না কেমন করি! প্রনম্য দুজন শিল্পীর সঙ্গে আমার তুলনা কখনই করিস না। আমি নিজের মতোই করব!”–মিঠুন প্রসঙ্গে জানান সুমন।
সম্প্রতি ‘প্রজাপতি’ ছবিতে বৃদ্ধ বাবার ভূমিকায় মিঠুনের অভিনয় সব বয়সী দর্শকের নজর কেড়েছিল। এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে। নিজেকে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে আজ এই বিন্দুতে পৌঁছেছেন তিনি, যেখানে ছবি বিশ্বাস ও বলরাজ সাহানির পর তাঁকে ভেবেছেন এই সময়ের একজন পরিচালক। এই ভাবনার প্রতি আস্থা রাখছি আমরাও। পরিচালক সুমন ঘোষ এবং অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর যুগলবন্দী এই ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে এক নতুন উচ্চতায় যাবে বলেই ইউনিটের কর্মীরাও মনে করছেন ! দর্শকও অপেক্ষায় থাকছে !!