Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

গসিপ সংস্কৃতি এবং…

তারকাদের সম্পর্ক হওয়া বা ভেঙে যাওয়া, গসিপ ম্যাগাজিনগুলির অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। দরকার হলে, হাতের কাছে বিষয় না পেলে, এরা এই ভাঙাগড়ার গল্প বানিয়েও লিখতে পারে। আর তিলকে তাল করা তো চলছে-চলবে গোছের একটা ব্যাপার। বলা বাহুল্য, পাঠক দরবারেও এই জাতীয় চাটনি সংবাদের চাহিদা বিপুল। এখানে চাহিদা আগে, না মুখের সামনে ধরে দেওয়া টক-ঝাল স্বাদের খাবার আগে–তাই নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। ওই মুরগি আগে না ডিম আগে-র মতো।

বিনোদন সাংবাদিকতার গোড়া থেকেই গসিপ বিষয়টা ছিল। তবে, সেই সময় তার রূপরেখাটা অন্যরকম ছিল। আমরা, যারা আজ ষাটের কোঠায়, তারা বিষয়টা স্মরণে আনতে পারবেন। আমাদের শৈশব-কৈশোরের দিনগুলি সিনেমার খবরে সুরভিত রেখেছিল উল্টোরথ,  সিনেমা জগৎ ইত্যাদি। সেখানেও তারকাদের ব্যাক্তিগত খবর মুখরোচক আকারে প্রকাশ করা হতো। কিন্তু সেখানে একটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকতো। পত্রিকার সম্পাদকগণ বিষয়টা যাতে মাত্রা না ছাড়ায়, সেইদিকে কঠোর ভাবে খেয়াল রাখতেন।

বাংলা বিনোদন সাংবাদিকতার ইতিহাসে যে সংবাদপত্র প্রথম খবরকে ‘গসিপ’-এর রঙ দেয় এবং বিষয়টিকে মুচমুচে করে পরিবেশনের ট্রেন্ড সেট করে, তার নামের উল্লেখ এখানে অপ্রয়োজনীয়। পাঠক জানেন সে নাম। তাদের দাবি, তারা বাংলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আদতে বিপণনের স্বার্থে সংস্কৃতিকে টুইস্ট করিয়ে নিজেদের স্বার্থ অভিমুখী করে তোলায় সিদ্ধহস্ত এই মিডিয়া হাউস। সিনেমাও সেই সংস্কৃতির অঙ্গ। সামগ্রিকভাবে তারা সমাজের ওপর একটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বহুকাল ধরেই। এতে বাঙালির ভালো না মন্দ, কোনটা হয়েছে, সময়ই বলবে।

কিন্তু কিছু আশঙ্কার কারণ নিশ্চয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের সেট করা ট্রেন্ড অনুসরণ করে আজকের ডিজিটাল মাধ্যম সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একদিকে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে একটি বিশেষ গসিপ পাঠক শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা এই জাতীয় চাটনি খবর ছাড়া আর কিছু পড়ে না। তারা এ খবরে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে অনেকেই তারকাদের দেবতার আসনে বসায় এবং তাদের যাপনকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এর ফলে, সমাজের অভ্যন্তরে যে ভুল যাপন সংস্কৃতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, সেটাই ভয়ের। বলা বাহুল্য, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারীও বটে !