গ্রেসফুলি হাতে ‘গ্রেস’ ট্যাটু বানালেন কৌশিকী
আমার মনে আছে, তখন আমি নিজে পুরোমাত্রায় গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ঠিক কী ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ পরব, তার একটা সুনির্দিষ্ট রূপরেখা অজান্তেই অনুসরণ করা আমাদের সহজাত ছিল। তাঁত বা সিল্কের শাড়ি, সঙ্গে উপযুক্ত অলঙ্কার বা মাথায় ফুলের সাজ ! যেন এমনটা না হলে, ভালো শিল্পীর ইমেজ তৈরি করা যাবে না!
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, আমাদের আগের প্রজন্মের কিংবদন্তি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও গুরু সুচিত্রা মিত্রের কথা। তিনি তাঁর সময়ের শুধু নয়, এখনকার হিসেবেও দারুণ স্মার্ট এবং স্টাইলিশ ছিলেন। সুচিত্রা মিত্রের বয়কাট চুল আর স্লিভলেস ব্লাউজ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা হতো সেই সময়। অথচ, মঞ্চে কী গ্রেসফুল যে লাগত তাঁকে দেখতে ! বিষয়টি তিনি একেবারেই পাত্তা না দেওয়ায়, অবশেষে, নিন্দুকেরা থেমে যায় ! আজ তো এসব ভাবলে হাসিই পায়। কোনও এক শিল্পী জিন্স পরে মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে, এই নিয়েও একবার ভালোই জলঘোলা হয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, আজ এই ২০২৩-এর ঘরে পা দিয়ে এসব আর কেন ? আসলে স্মৃতি উসকে দিল সাম্প্রতিক এক ঘটনা ! ঘটনা না ঘোষণা !! নতুন প্রজন্মের একটা গুণ, তাঁরা ঢাকঢাক গুড়গুড় করেন না। যেটা ঠিক মনে করেন, সেটা নির্দ্বিধায় জনসমক্ষে করে ফেলেন। শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী তাঁর হাতে ট্যাটু করেছেন এবং তার ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। একটি প্রথমসারির সংবাদপত্র এই বিষয়ে মন্তব্য করেছে, ‘এমনই এক কাজ করলেন কৌশিকী, যা তথাকথিত ভাবে শাস্ত্রীয় ঘরানার শিল্পীদের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না’। কে তোমাদের স্থির করার দায়িত্ব দিয়েছে বাবা, কীসের সঙ্গে কী খাপ খায়, আর খায় না !!
কৌশিকী অবশ্য এইসব সমাজ রক্ষকদের মতামতের ধার ধারেননি মোটেই। হাতে ‘গ্রেস’ লেখা ট্যাটুর ছবি পোস্ট করে কৌশিকী লিখেছেন, ‘‘গ্রেস আর মিউজ়িক, আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই স্তম্ভ। এই দুই স্তম্ভকে আমি যতটা শ্রদ্ধা করি, ততটাই এগুলোর জন্য নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করি। সেই কৃতজ্ঞতার বার্তা থেকেই এই ট্যাটু।’’ কৌশিকী এও জানিয়েছেন, ট্যাটু বিষয়টা তাঁর সব সময়ই বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হতো। ব্যথা লাগার ভয়ে বা ট্যাটু একবার করলে মোছা যায় না, সে কথা ভেবে আগে পিছিয়ে গেলেও, এবার ভালোবাসা দিয়ে এই ভয়কে জয় করেছেন তিনি।
সময় বদলেছে। কৌশিকীর এই সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে সেই অর্থে তেমন ঝড় ওঠেনি। বরং সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁর ভক্তকুল বিপুলহারে প্রশংসা করেছেন কৌশিকীর। মিষ্টি চেহারার এই গুণী কন্যা সংগীতে নিজের দক্ষতা ও ব্যাপ্ত প্রতিভার চূড়ান্ত স্বাক্ষর রেখেছেন। সুখের কথা, তাঁর ট্যাটু সেই সাফল্যের পথে কাঁটা বিছোতে পারেনি। সাজগোজ একজন মানুষের ব্যক্তিগত রুচি। এই নিয়ে ‘গেল গেল’ রব তোলার দিন যে গিয়েছে, কৌশিকীর ঘটনা নিঃসন্দেহে তারই প্রমাণ !!