‘জিগাটো’-য় সিরিয়াস কপিল
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। এই সপ্তাহে ‘জিগাটো’ নিয়ে লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
বলিউডের এই মুহুর্তের বহুচর্চিত নাম কপিল শর্মা। তাঁর নাম মনে এলেই, যেটা মাথায় আসে, সেটি হল কমেডি। হাস্যরস পরিবেশনে কপিলের জুড়ি মেলা ভার। ৪১ বছর বয়সী এই কমেডিয়ান আজ নিজেই একটা ব্র্যান্ড। ছোটপর্দায় ‘স্ট্যান্ড আপ’ কমেডি শোয়ের হাত ধরে তাঁর পথ চলা শুরু। পরবর্তী সময়ে নিজের পরিকল্পনায় ‘কমেডি নাইটস উইথ কপিল’-এর মতো শোয়ের হাত ধরে ছোটপর্দায় দর্শকমনে স্থায়ী জায়গা করে নেন তিনি। এখন তাঁর সিটকম ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ চূড়ান্তভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। শোয়ে আসা বিভিন্ন অতিথিকে নিজের সেন্স অফ হিউমারের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন কপিল। পাশাপাশি মজার ছলে নিজস্ব ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করে সেলিব্রেটি অতিথিদের থেকে মনের কথাও আদায় করে ছাড়েন।
এহেন কপিল ছোটপর্দার পাশাপাশি পা রেখেছেন বড়পর্দাতেও। ২০১৫-তে আব্বাস-মস্তান পরিচালিত ‘কিস কিস কো প্যায়ার করু’ ছবির হাত ধরে সিনেমার জগতে পা রাখেন কপিল শর্মা। কিন্তু বক্স অফিসে সেই ছবিটি বিশেষ কিছুই করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ‘ফিরঙ্গী’, ‘ইট’স মাই লাইফ’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন কপিল। তবে, তাঁর অভিনীত কোনও ছবিই সেভাবে বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেনি অথবা সমালোচকদের মনেও দাগ কাটতে পারেনি। কিন্তু, কপিলকে মুখ্য চরিত্রে রেখে নন্দিতা দাস নির্মাণ করছেন ‘জিগাটো’, এই খবর প্রকাশ পাওয়ার দিন থেকেই বিষয়টা একেবারে এক অন্য গুরুত্ব পেয়ে গেছে। স্বাভাবিক। পরিচালক অত্যন্ত প্রতিভাবান নন্দিতা দাস যে ! ছবিতে একজন ফুড ডেলিভারি বয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কপিল।
একজন দক্ষ অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি অসাধারণ পরিচালক নন্দিতা দাস। তাঁর পরিচালিত ‘ফিরাক’ ও ‘মান্টো’ রীতিমতো প্রশংসিত হয়েছে দর্শক ও সমালোচক মহলে। এহেন নন্দিতার লেখা ও পরিচালনায় তৈরি হয়েছে ‘জিগাটো’। অ্যাপ্লজ এন্টারটেনমেন্ট ও নন্দিতা দাস ইনিসিয়েটিভ নিবেদিত এই ছবিটি ৪৭তম টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ড সিনেমা’ বিভাগে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে ইতিমধ্যেই। শুধু তাই নয়, টরেন্টোর পাশাপাশি ২৭তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত এই ছবি রীতিমতো প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়েছে দর্শক এবং সমালোচক মহলে। ছবিতে কপিলের বিপরীতে রয়েছেন সাহানা গোস্বামী। কপিলের স্ত্রীর ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। সাহানার অভিনয় প্রতিভা প্রশ্নাতীত। বলিউডে ‘রক অন’, ‘মির্চ’, ‘হানিমুন ট্র্যাভেলস প্রাঃ লিমিটেড’, ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’-এর মতো ছবিতে সাহানার অভিনয় দাগ কেটে গিয়েছে দর্শক মনে। নন্দিতার সঙ্গে এটি সাহানার দ্বিতীয় ছবি। ইতিপূর্বে নন্দিতা পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ফিরাক’-এ কাজ করেছেন সাহানা। সেই ছবিতেও তাঁর অভিনয় তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দর্শকদের।
‘জিগাটো’ ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। অতিমারীর কারণে কারখানার ফ্লোর ম্যানেজারের চাকরি হারানো একজন মানুষ আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। এমতাবস্থায় সংসার চালাতে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ জিগাটো-তে ডেলিভারি বয়ের কাজ নেয় সে। তার পরিবার বলতে স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে। অতিমারীর পর কীভাবে তারা সব কিছু সামলায় তাই নিয়েই এগিয়েছে ছবির গল্প। ‘জিগাটো’-তে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন তুষার আচার্য সহ অন্য শিল্পীরা। সমীর নায়ার, দীপক সেহগলের সঙ্গে ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বভার সামলেছেন নন্দিতা স্বয়ং। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার রঞ্জন পালিত। আবহসংগীত পরিচালনায় সাগর দেশাই। ‘জিগাটো-‘র বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছে ওড়িশায়।
ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ছবির ইন্টারন্যাশনাল ট্রেলার। ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে, কপিলের চরিত্র অর্থাৎ মানসকে অনেক পিৎজা নিয়ে ঘেমে নেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হচ্ছে। ইনসেনটিভ পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের খুশি করতে হচ্ছে বিভিন্নভাবে। একদিকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে এই কাজ করায় ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে মানসকে। অন্যদিকে আরও টাকা রোজগারের জন্য মানসের স্ত্রীকে যেতে হচ্ছে কাজে। ট্রেলারে একটা জায়গায় কপিলকে বলতে দেখা যায়–‘ও মজদুর হ্যায় ইসলিয়ে মজবুর হ্যায়’ ! সঙ্গে এটাও বলেন, ‘ইয়ে ভি হো সকতা হ্যায়, ও মজবুর হ্যায় ইসলিয়ে মজদুর হ্যায়’। বলাই বাহুল্য, এই ছবিটি কপিল শর্মার কেরিয়ারের সেরা ছবি হতে চলেছে। ট্রেলার দেখার পর দর্শক একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন কমেডির পাশাপাশি অভিনয়ের বাকি ব্যঞ্জনা ও অভিমুখগুলি শিখে রীতিমতো একজন ভালো অভিনেতা হয়ে উঠেছেন কপিল শর্মা।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই ছবি প্রসঙ্গে কপিল জানান, “আমার হারানোর কিছু নেই। একদম ভয় করেনি এই চরিত্রে অভিনয় করতে।” পাশাপাশি অভিনেতা আরও বলেন, “আমি সম্প্রতি আমার স্ত্রীকে বলেছি যদি এই ছবিটা না চলে, আমি কিছুই হারাব না। তবে এই ছবি যদি সাফল্য পায় ও হিট করে তাহলে আমি অনেক কিছু পাব। দর্শক বলবে কপিল খুব ভালো কাজ করেছে। সেই কারণেই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে দর্শক যেন খুব বেশি করে এই ছবিটা দেখে।” কপিল বলেন, “কমেডি শো আমার রুজি-রুটি। আমি সেই কারণেই অনুপ্রাণিত হয়ে ভাবলাম ঘরের রান্নাঘর যখন সুরক্ষিত, তখন এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া যেতেই পারে। কখনও মনে হয়েছে আমি ভয় পাচ্ছি ! পরক্ষণেই মনে হয়েছে কেন আমি ভয় পাব ? আমার কাজ তো ভালোই চলছে। আমি আমার কাজের সঙ্গে এবার আলাদা কিছু যোগ করতে চাই।”
ছবিতে কপিলের সঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গে সাহানার অভিমত, “নন্দিতা যখন আমায় প্রথম কপিলের কথা বলল, আমি দ্বিধায় ছিলাম। আমার মনে হল কপিল! ওকে একজন কমেডিয়ান রূপেই জানতাম আগে। তারপর ভাবলাম এটা খুব ভালো আইডিয়া। আমি ওঁকে চিনতাম না। ওঁর শো-ও কখনও দেখিনি। কিন্তু ওঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর বুঝতে পারলাম, ও কতটা ভালো মানুষ। কতখানি দক্ষ অভিনেতা। কপিল ছোটবেলায় থিয়েটার করেছেন। খুব ভালো একজন অভিনেতা। ওঁর সঙ্গে কাজ করে খুবই আনন্দ পেয়েছি।” ভারতীয় দর্শকের জন্য কবে, কোথায় মুক্তি পাবে ‘জিগাটো’, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। এমনকি ছবি মুক্তির কোনও তারিখও ঘোষণা করা হয়নি। তাই ছবিটি সিনেমাহলে নাকি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে, তা জানার জন্য তীব্র অপেক্ষায় সারা দেশের কপিলভক্ত ও সিনেমাপ্রেমী দর্শক।