জীবন কবিতার উত্তরণে মীনাক্ষী
উত্তরবঙ্গ তাঁর কর্মভূমি। তবে, সেখানেই কেন্দ্রীভূত নয় বাচিকশিল্পী মীনাক্ষী ঘোষের কাজের পরিধি। এ বাবদ উত্তর ও দক্ষিণ–দুই বঙ্গেই অনায়াস যাতায়াত তাঁর। তবু, উত্তরবঙ্গের কথা কিছুটা আলাদা। এখানকার নদী-পাহাড়-জঙ্গল-উপত্যকার মাঝে অবাধ বিচরণে বেড়ে ওঠা তাঁর। মীনাক্ষীর শিল্প ও জীবনচর্চা এই প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে নয়। এরই পাশাপাশি এখানকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ আছে তাঁর হৃদয় জুড়ে। উল্টোদিকে, মীনাক্ষীও আছেন তাঁদের হৃদয়ের অনেকটা জুড়ে।
সম্প্রতি মীনাক্ষীর ৫৯তম জন্মদিনে তাঁর সেই ভালোবাসার মানুষরাই আয়োজন করেছিল এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের। শিরোনাম ‘জীবন কবিতার উত্তরণে ৫৯ বছর’। রূপসজ্জা পরিবারের ছাদ বারান্দায় আয়োজিত এই ঘরোয়া, অনাড়ম্বর, আন্তরিক অনুষ্ঠানের অনেকটা জুড়ে ছিল স্মৃতিচারণ, সঙ্গে আবৃত্তি, নাচ-গান ও শ্রুতিনাটক তো ছিলই। মীনাক্ষীকে নিয়ে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত স্কুল ‘কিশলয়’-এর শিক্ষিকা বনানী সেনগুপ্ত, দেবযানী সাহা, পিয়ালী পাল ও অমৃতা খাসনবিশ প্রমুখের স্মৃতিচারণ ছিল মরমি ও হৃদয়স্পর্শী। এই পর্যায়ে আত্মীয়স্বজনরাও ছিলেন আবেগাপ্লুত। উপভোগ্য ছিল শিক্ষিকা প্রিয়া মালহা, নবনীতা ঘোষ, চুমকি দাস, সুকৃতি গোস্বামী পরিবেশিত নৃত্যানুষ্ঠান। বনানী মুখোপাধ্যায়ের ‘গুষ্টির তুষ্টি’ শ্রুতিনাটক পরিবেশন করেন বুল্টি সাহা, শম্পা বণিক ও মিতালী দাস–যা আন্তরিকতায় উত্তীর্ণ। প্রসঙ্গত, পিয়ালী পাল, নবনীতা ঘোষ, বুল্টি সাহা–সকলেই কিশলয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ও আজকের শিক্ষিকা। আমন্ত্রিত শিক্ষিকা অন্তরা গুপ্ত, জয়তী নন্দীর বক্তব্যও ছিল মনোগ্রাহী।
এদিন নাট্যব্যক্তিত্ব সাধন দাশগুপ্তের স্মৃতিচারণ ও স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এছাড়াও নাট্যকার সুধাংশু বিশ্বাসের স্মৃতিচারণ ও তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘হঠাৎ দেখা’ আবৃত্তি ছিল বাড়তি পাওনা। ওঁরই লেখা শ্রুতিনাটক ‘আশ্চর্য প্রেম’ পরিবেশনে মীনাক্ষী ও সুধাংশু বিশ্বাসের অভিনয় না ভোলা এক নিবেদন। বেশ ভালো লাগলো কলকাতা থেকে আগত বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী চন্দ্রিকা বন্দোপাধ্যায়ের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে কবিতা পাঠ। চন্দ্রিকা ও মীনাক্ষী নিবেদিত ধনঞ্জয় ঘোষালের লেখা শ্রুতিনাটক ‘ডাকছে অমল’ এককথায় ছিল অনবদ্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় আগাগোড়া মনোজ্ঞ ছিলেন কিশলয়ের শিক্ষিকা চন্দ্রাণী সমাদ্দার।