Monday, February 3, 2025
বিনোদনের ছোট বাক্স

দর্শকদের সামাজিক বার্তা দেবে ‘রাঙা ব‌উ’

আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। জি বাংলার নতুন মেগা ‘রাঙা ব‌উ’-এর সেটে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন সোমনাথ লাহা। 

সকাল সকাল ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে পৌঁছবার পর এক নিমেষেই মনে হলো, দাঁড়িয়ে আছি উত্তর কলকাতার বনেদি শীলবাড়ির অন্দরমহলে। বাড়ির অন্দরের ঝাপড়ি খিলান দেওয়া নাটমন্দির সেজে উঠেছে রজনীগন্ধার মালায়। মেঝেতে সুন্দর আলপনা।  চেয়ারে বসা বাড়ির ব‌উ পাখিকে আলতা পরতে সাহায্য করছে তার স্বামী কুশ। এরপর পাখি যখন টেবিলে রাখা আয়না দেখে কপালে সিঁদুর পরতে উদ্যোগী হলো, তখনও সিঁদুরের কৌটো খুলে পাখির দিকে এগিয়ে দিল কুশ। তারপর দু’জনের মধ্যে তৈরি হলো ভালোবাসার এক আবেগঘন দৃশ্য। এরপরই হাততালি এবং এগিয়ে এসে নমস্কারের ভঙ্গিতে নাটমন্দিরের সামনে দাঁড়াল পাখি ও কুশ।

চমক ভাঙল আলোকচিত্রীদের হুড়োহুড়িতে। আসলে এই সবকিছুই জি বাংলার নতুন মেগা  ‘রাঙা ব‌উ’-এর সেটে আয়োজিত সাংবাদিক সন্মেলনের অঙ্গ। জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ত্রিনয়নী’-র হিট জুটি শ্রুতি দাস ও গৌরব রায়চৌধুরী আর‌ও একবার একসঙ্গে আসতে চলেছেন ছোটপর্দায় এই ধারাবাহিকের হাত ধরেই। তাঁরাই যথাক্রমে রয়েছেন পাখি ও কুশের চরিত্রে। এখানেই শেষ নয়। ক্রেজি আইডিয়াস মিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত এই মেগাটির প্রযোজনা ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার। এর আগে ইনিই এই জুটিকে নিয়ে ‘ত্রিনয়নী’ পরিচালনা করেছেন। ধারাবাহিকে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋতজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মনোজ ওঝা প্রমুখ।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সহ মেগার দুই মুখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জি বাংলার (পূর্ব) চিফ ক্লাস্টার অফিসার সম্রাট ঘোষ এবং চিফ চ্যানেল অফিসার নবনীতা চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন শোয়ের অপর দুই প্রযোজক রূপা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্দীপ আগর‌ওয়াল। বলা বাহুল্য, ‘রাঙা ব‌উ’-এর হাত ধরে শ্রুতি-গৌরব জুটির ম্যাজিক আর‌ও একবার ছোটপর্দায় দেখার জন্য রীতিমতো উদগ্রীব বাংলার তামাম টিভি দর্শক। চ্যানেলের পর্দায় প্রচারিত ধারাবাহিকের প্রোমোও কৌতুহলের মাত্রা বাড়িয়েছে দর্শকমহলে। জানা গেল, এই ধারাবাহিকের হাত ধরে সামাজিক এক বার্তা দিতে চান নির্মাতারা। সেটি হল রূপে নয়, গুণে আকৃষ্ট হোন। বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, সুন্দর মন‌ই আসল। পাশাপাশি এই ধারাবাহিকের হাত ধরে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিয়ের গান ও লোকসংস্কৃতিকেও দর্শকদের সামনে হাজির করতে চলেছেন নির্মাতারা।

মেগার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে মুর্শিদাবাদের ছোট্ট গ্রাম মাধুনিয়াকে ঘিরে। সেখানে এখনও পৌঁছয়নি আধুনিকতার ছোঁয়া। এই গ্রামের‌ই এক সাধারণ মেয়ে পাখি। বাহ্যিক সৌন্দর্য না থাকলেও তার হৃদয়টা খুব সুন্দর। খুব‌ই নিষ্পাপ ও ভালো মানুষ সে। পাখি ফুল-পাতার মতো প্রাকৃতিক জিনিসপত্র দিয়ে কনে সাজাতে ভালোবাসে। মাতৃহারা পাখি মামার বাড়িতে থাকে। তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে। সৎমা তাকে নিয়ে থাকতে রাজি নয়। এদিকে মামা-মামীর সংসারেও সে বোঝা। তবে, এসব গায়ে মাখে না পাখি। তার আশা নিজের বিয়েতে সে খুব সাজবে ! কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক।

Pxl 20221215 113602176.Night
দর্শকদের সামাজিক বার্তা দেবে 'রাঙা ব‌উ' 6

পাখির হঠাৎ করেই এক কাপড়ে বিয়ে হয়ে যায় উত্তর কলকাতার বনেদি শীলবাড়ির ছেলে কুশের সঙ্গে। শীল পরিবারের আলতা-সিঁদুরের ব্যবসা। এদিকে কুশ শর্ট টার্ম মেমোরি লসের শিকার। এই মুহূর্তের ঘটনা সে পরমুহূর্তেই ভুলে যায়। এক দুর্ঘটনায় মা ও বোনকে হারিয়েছে সে। কুশের বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মেন্টাল অ্যাসাইলেমে ভর্তি। জেঠুর পরিবারে সে মানুষ। যৌথ এই পরিবারে কিছু ভালো মানুষ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে স্বার্থান্বেষীও। শীল পরিবারের রীতি, বউ মাত্রই সুন্দরী হতে হবে। তাদের টানাটানা চোখ, গায়ের রং ফর্সা হ‌ওয়া চাই। তারা সবসময়ই পায়ে আলতা ও মাথায় সিঁদুর পরে। এমন বাড়িতেই কার্যকারণে বউ হয়ে আসে পাখি। শুরু হয় পাখির লড়াই। কুশের সঙ্গে প্রথমে তার ভুল বোঝাবুঝি হলেও, ধীরে ধীরে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে তারা।

‘রাঙা ব‌উ’-এর হাত ধরে জি বাংলায় ফেরা শ্রুতির কথায়, “আমার প্রথম কাজ ছিল জি বাংলায়। আবার সুযোগ পেয়েছি এখানে কাজ করার। মা বিশালক্ষ্মীর আশীর্বাদ নিয়ে এখানেই প্রথম কাজ (ত্রিনয়নী) শুরু করেছিলাম। এবার বাবা ভোলা মহেশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে নতুন কাজ শুরু করছি। আমার মাথার উপরে যে মানুষগুলো রয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।” গৌরব ও পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, “আমি খুব খুশি। গৌরব আমার প্রথম হিরো। প্রথম সবকিছু খুব স্পেশাল হয়। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। স্বর্ণস্যারের সঙ্গেও ছিল আমার প্রথম কাজ। আবারও কাজ করছি। এছাড়া ইউনিটের সকলেই আমার চেনা।”

Pxl 20221215 113637975.Night
দর্শকদের সামাজিক বার্তা দেবে 'রাঙা ব‌উ' 7

“পাখি পটর পটর করে কথা বলে পাখির মতোই। আমি অতো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। এই চরিত্রটায় কাজ করতে গিয়ে নিজেকে অনেকটাই ভেঙেছি। এখন চরিত্রটার সঙ্গে পুরো একাত্ববোধ করতে পারছি। বেশ ভালো লাগছে কাজটা করতে”–মেগায় নিজের চরিত্র সম্পর্কে জানান শ্রুতি। গৌরবের কথায়, “কুশের সঙ্গে আমি নিজের অনেকটা মিল খুঁজে পাই। আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। কুশের বাবা থাকলেও কোথাও গিয়ে তার সমস্যা রয়েছে। এই গল্পটা যখন স্বর্ণদা আমাকে শুনিয়েছিলেন, প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিল এই কারণেই। বাবা না থাকলে একটা পরিবারে যে কতটা সমস্যা হয়, এই গল্পটায় সেটা সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। জি বাংলা, স্বর্ণদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এমন একটা চরিত্রে আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য।”

মেগার পরিচালকের মতে, “নতুন বিষয়ভাবনা, মাটির চেনা এই গল্পটার সঙ্গে দর্শক নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন। আমরা প্রতিনিয়ত এই সমস্যাগুলোর সন্মুখীন হ‌ই। কিন্তু এর কোন‌ও প্রতিকার নেই। প্রতিবাদ‌ও হয় না। অনেকে সহ্য করে নেন। কেউ এখনও করে যাচ্ছেন। কোথাও গিয়ে এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে এই বার্তাটাই আমরা দর্শকদের দিতে চাইছি, যে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই আলোচনাগুলোই আর করা উচিত নয়। এই ধরণের বিষয় নিয়ে অতীতে ধারাবাহিক হয়নি, এখন‌ও হচ্ছে না। আশা করছি এই বিষয়টা দর্শকদের ভালো লাগবে।” ‘রাঙা ব‌উ’ দেখান হচ্ছে সোম থেকে শনি রাত ৮.৩০ মিনিটে জি বাংলায়।