দর্শক তো সমালোচনা করবেনই
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। স্টার জলসায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে মেগা ধারাবাহিক ‘রামপ্রসাদ’। নামভূমিকায় অভিনয় করছেন সব্যসাচী চৌধুরী। লাহাবাড়িতে মেগার সাংবাদিক সন্মেলনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে ধারাবাহিক প্রসঙ্গে নানা কথায় সোমনাথ লাহা।
তোমার কেরিয়ার গ্রাফের দিকে তাকালে দেখা যায়, পৌরাণিক চরিত্রই তোমাকে বেশি আকর্ষণ করে, সেই কারণেই কি সাধক রামপ্রসাদের চরিত্রে কাজ করতে রাজি হলে ?
◆◆ আমি অনেক বছর ধরেই এই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি অন্য ধরনের চরিত্রের থেকেও বেশি প্রাধান্য এই জাতীয় চরিত্রকেই দিই। সেই কারণেই এই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি।
এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সময় কোন বিষয়গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয় ?
◆◆ প্রথমত দেখতে হয়, চরিত্রগুলিতে যাতে পৃথক বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। অর্থাৎ রামপ্রসাদ যেন বামাক্ষ্যাপার মতো একেবারেই না হয়। দু’জনেই সাধক। কিন্তু দুজনের মধ্যে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্যগুলো মাথায় রাখতে হয়েছে। সেটা হাঁটাচলা থেকে শুরু করে তাঁদের বাচনভঙ্গি–সবকিছুই। রামপ্রসাদ অত্যন্ত মার্জিত, সৌম্য। তিনি সেই সময়ের একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তাঁর সঙ্গে বামার কোনওরকম তুলনাই হয় না।
রামপ্রসাদের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য চিত্রনাট্য বা ওঁর জীবনীর পাশাপাশি কি ধরনের বই পড়েছ?
◆◆ সবার আগে ঈশ্বর গুপ্তের লেখা বই পড়েছি। সম্ভবত সর্বপ্রথম ঈশ্বর গুপ্তই রামপ্রসাদকে নিয়ে লেখেন। তারপরেই রামপ্রসাদ অতখানি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর সম্পর্কে বাকিরা জানতে পারেন। এছাড়া যোগীন্দ্রনাথবাবুর (যোগীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়) বই রয়েছে। এমনকি সিস্টার নিবেদিতারও বই রয়েছে। উনি অবশ্য ইংরেজিতে লিখেছিলেন মা কালীকে নিয়ে। সেখানে রামপ্রসাদের প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। তবে, আমাকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছেন শিবাশিসদা (ধারাবাহিকটির গবেষক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং ঋতমদা (চিত্রনাট্যকার ঋতম ঘোষাল)। এই কাজটি নিয়ে খুব ভালো এবং একটা বিস্তারিত রিসার্চ ওয়ার্ক করেছেন ওঁরা।
সাধক রামপ্রসাদের নামের সঙ্গে বাংলা গানের একটি বিশেষ ধারার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেটা নিয়ে কতটা ভাবতে হয়েছে তোমায়?
◆◆ আমি যখন ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ কাজ করতাম সেই সময় বামা কিন্তু এমন অনেক গানই গেয়েছে যেগুলো রামপ্রসাদী গান–যেহেতু বামাক্ষ্যাপা একশো বছর পরে জন্মেছেন। তাই এই গানগুলো আমার কাছে নতুন কিছু নয়। এখনও শ্যামাসংগীত হিসেবে পাড়ায় পাড়ায় কালীপুজোর সময় এই গানই কিন্তু চালানো হয়। একজন মানুষ তিনশো বছর আগে যে গান লিখেছেন, সেই গান এখনও এতটাই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন। গানগুলো এতটাই ভালোবাসার জায়গায় রয়েছে মানুষের মনে। সেটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। সেটাকে তো মূল্য দিতেই হবে।
সুস্মিলি ও পায়েলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ?
◆◆ সুস্মিলি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ছোট হলেও ও কিন্তু অভিনয় জীবনে আমার থেকে অনেক সিনিয়র। অনেক ছোটবেলা থেকেই সুস্মিলি অভিনয় করছে। ওর অভিনয়টা খুবই পরিমিত এবং ও জানে কোথায় কতটুকু করতে হবে। সেটা খুবই ভালো। সুস্মিলি খুবই পরিণতমনস্ক। আর পায়েলদি আমার থেকে অনেক সিনিয়র। অনেক কাজ করেছেন। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকেছি, তখনও infact আমি পায়েলদিকে দেখতাম কাজ করতে। আর একটা কথা, পায়েলদির সঙ্গে দেবী রূপটা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
এই ধরণের চরিত্রে অভিনয় করা কতটা চ্যালেঞ্জিং? কারণ, দর্শক একটু ভুল দেখলে সমালোচনায় বিদ্ধ করবেন।
◆◆ আমি এই বিষয়টা নিয়ে একদমই চিন্তা করি না। দর্শক তো অবশ্যই সমালোচনা করবেন। না করাটাই অস্বাভাবিক! সেটা করায় তাঁদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমি চেষ্টা করি, আমার কাজটুকু যথাযথ করতে।
দর্শকের উদ্দেশ্যে কি বলবে ?
◆◆ দর্শকের উদ্দেশ্যে বলব, এতকাল যেভাবে আমাকে ভালোবেসেছেন আপনারা, সেভাবেই ভালোবাসুন। আগলে রাখুন। কাজ করাটা আমার দায়িত্ব। আমি সেটা সঠিকভাবে করার আপ্রাণ চেষ্টা করব। সেটা যদি আপনাদের ভালো লাগে–তার চাইতে ভালো আর কী হতে পারে !?