দেবুদাকে নিয়ে একটি সন্ধ্যা
শিল্পের চেয়ে জীবন বড়–এমনই ছিল তাঁর ভাবনা ও আদর্শ। এটাকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়–তাঁর যাপনকলায় জীবনের জয়গান মূর্ত হয়েছে সৃজনের রামধনু রঙে। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ তো বটেই। পাশাপাশি বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে দেবুদার জ্ঞান সমৃদ্ধ করেছে আমাদের। বর্ণে, বৈচিত্রে, গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে সতত সৃষ্টিশীল মানুষটি চলে যাওয়ার পর একটি বছর অতিক্রান্ত। অরুণাভ লাহিড়ী তাঁর পোশাকি নাম। সবার অত্যন্ত প্রিয় দেবুদা আদতে এমন একজন মানুষ, যাঁর তুলনা আকাশ বা সমুদ্রের সঙ্গে করা যায়। যাঁর স্নেহের, সাংস্কৃতিক অবদানের ফল্গুধারায় স্নাত হয়েছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন, তাঁরা কী হারিয়েছেন।
গত ২৫ শে এপ্রিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে ‘বিহঙ্গম’ এক অনাড়ম্বর ও আন্তরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বৈশাখের এই সন্ধ্যা মুখর হয়ে ওঠে গুণমুগ্ধ স্বজন-বন্ধুদের কথায়, গানে, কবিতায়, নৃত্যে। দেবুদার উপস্থিতি যেন আরও একবার অনুভূত হয় এই অনুষ্ঠানে৷ সত্যি কথা বলতে কী, ‘বিহঙ্গম’ আয়োজিত এই আয়োজন তথাকথিত কোনও বিষাদজড়িত স্মরণ অনুষ্ঠান ছিল না৷ দেবুদার প্রাণোচ্ছল স্বভাবকে সম্মান জানিয়ে এই অনুষ্ঠানটি ছিল এক সংযত সুন্দর উদযাপন। অনুষ্ঠানে দেবুদার লেখা গান, কবিতা-আলেখ্য-নৃত্য সহযোগে পরিবেশিত হয়, যা এককথায় ছিল চমৎকার।
এদিন প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল কানায় কানায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের নানা বয়সের মানুষ দেবুদাকে যেমন পেয়েছেন, দেখেছেন তা তুলে ধরেন৷ আড়ালে থাকতে পছন্দ করা বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী, সমাজ সচেতন একজন মানুষ ছিলেন তিনি। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ছিলেন সর্ব অর্থেই। সঙ্গীত, নৃত্য বিষয়ক বহু বই ছাড়াও ছোটদের জন্য বই এবং কবিতা ও গানের রচয়িতা তিনি৷ এদিন দেবুদার গুণমুগ্ধ মানুষজনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে দেবুদার কাজকে রক্ষা করা এবং চর্চার জন্য। সৌম্যেন বসু, মিলা বসু, মধুমতী লাহিড়ী, সুপ্রিয় ভট্টাচার্য, চয়ন ভট্টাচার্য, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, বুলবুল আহমেদ, তাপস চৌধুরী, সৌকর্য ঘোষাল প্রমুখ বহু শিল্পী এদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন অভিরূপা ৷