দেহলিজ-এ-দোজখ- পাঠ প্রতিক্রিয়া
লিখলেন – সায়ন্তী সাহা
উপন্যাস – দেহলিজ-এ-দোজখ
লেখক – প্রদীপ্তা রায়চৌধুরী সেন
প্রকাশক – প্রজ্ঞা পাবলিকেশন
মুদ্রিত মূল্য – ৩৮০ /-
বাঁধাই – হার্ড বাউন্ড
গতবছর বইমেলায় কিনেছিলাম দেহলিজ-এ-দোজখ বইটা, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে হাতে পেয়েছি গতসপ্তাহে। নিজের পড়াশোনা, ছাত্র পড়ানোর ব্যস্ত রোজনামচার ফাঁকে মোটামুটি তিনশো পাতার কাছাকাছি বইটা শেষ করতে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচদিন, একটানা পড়ার অবসর পেলে হয়তো একটা রাতই যথেষ্ট ছিল- যার এক ও একমাত্র কারণ কাহিনির গতি। তবে এটুকু বুঝেছি এ বই ওয়ান টাইম রিডের উপযুক্ত মেটিরিয়ালস তো মোটেই না, এটাকে আরও বার কয়েক পড়তে হবে, ছোট থেকে জেনে আসা ইতিহাসকে প্রামাণ্য এবং সঠিক ভেবে মনে মনে মধ্যযুগের ভারতবর্ষের যে কল্পনা আমি করেছিলাম, সেটিই যে একমাত্র সর্বৈব সত্যি না সেই ধাক্কাটার জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ জানাই।
কাহিনির বিষয়বস্তু ভারতবর্ষের দিল তথা দিল্লিকে নিয়ে এবং তার ওপর বিরাজমান হয়ে বিভিন্ন সময়ে গোটা ভারতবর্ষ শাসন করে চলা বিভিন্ন রাজবংশের ইতিহাসকে নিয়ে, তার সঙ্গেই সমান্তরালে ঘটে চলা বিভিন্নরকম ষড়যন্ত্রের যা কখনো সর্বসম্মুখে প্রকাশিত আবার কখনো বা অপ্রকাশিত এবং নিষিদ্ধ। এরই সঙ্গে স্বমহিমায় যোগ হয়েছে পুরাণ, নিজের সমস্ত রকম দৈবিক সত্ত্বা বর্জন করে, বাস্তব ও যুক্তিসম্মত ঘটনার রূপ পরিগ্রহ করে। সুতরাং বিষয়বস্তুর বিচারে এ বই একাধারে ঐতিহাসিক ফিকশনধর্মী যার সঙ্গে ঘটনাসূত্রে ও খানিকটা ভাগ্যতাড়িতভাবেই সর্পরজ্জুর ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে শাশ্বত ভারতের পঞ্চম বেদের বিভিন্ন করুণ এবং অজানা কাহিনি।
প্রথম প্রথম চার পাঁচ পাতা পড়ে অবশ্যই খেই হারিয়ে যাচ্ছিল, বারংবার বাংলা বইয়ে সংলাপ হিসেবে ব্যবহৃত হিন্দি জুবানি আমার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছিল, কিন্তু তারপর কখন যে আমি গল্পের মাঝে হারিয়ে গিয়েছি…চোখের সামনে জলজ্যান্ত যেন দেখতে পাচ্ছিলাম ঘটনার পাত্রমিত্রদের এবং তাই তাঁদের নিজস্ব চারিত্রিক স্বতন্ত্রতাকে অক্ষুণ্ন রাখতেই হয়তো অতি আবশ্যকীয় হয়ে পড়েছিল সংলাপে এই হিন্দি-আরবি-উর্দুর আধিক্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাবলী, আজানা, অসম্পূর্ণ এবং অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি বইটিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সবশেষে উল্লেখিত সহায়ক গ্রন্থের তালিকা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য সহায়ক বলেই আমি মনে করি!
তথাপি, আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিলো…
১) বইটিতে দু-চারটি মুদ্রণ প্রমাদে বড়ো আশাহত হলাম।
২) রহস্যময়ী প্রচ্ছদের মতোই যদি বইয়ের ভিতরেও আরও বেশ কিছু অলঙ্করণ থাকত! আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী…
৩) একটি যথাযথ বংশপঞ্জীর অভাবে মধ্যে মধ্যেই পড়া থামিয়ে অন্তর্জালের শরণাপন্ন হতে হচ্ছিল, যেটি আমার কাছে যথেষ্টরূপেই বিরক্তি উদ্রেককারী। পুনর্মুদ্রণে এটির কোনো যথাযথ ব্যবস্থা করলে আমার মতো ইতিহাস প্রেমী পাঠকের বড়োই সুবিধা হয়, অন্তত সময়কালটা সেক্ষেত্রে গুলিয়ে যাবেনা বারবার! তাছাড়া গুটিকয়েক বিজয়ী এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ ছাড়া ইতিহাস তো কোনকালেই বাকিদের খোঁজ রাখে না, এ বইয়ে যখন বারেবারেই আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় চরিত্ররাও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, তখন সেটি হলে বড়ো সুবিধা হয়। সত্যি যারা ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের পড়ার রসদ জোগান দেবে এই বংশপঞ্জী, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।
পুনশ্চঃ খারাপগুলিকে কিছু সময়ের জন্য চোখের অন্তরালে রাখলে, এ বই আমার মতে প্রত্যেকেরই অন্তত একবার করে পড়া উচিৎ! কথা দিচ্ছি হতাশ হবেন না, উপরন্তু, পাঠান্তে ইতিহাসের প্রতি এক আলাদাই টান অনুভব করবেন, বিশ্বাস করুন। লেখিকাকেও ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি বই উপহার দেওয়ার জন্য। লেখিকার থেকে ভবিষ্যতে আরও এরকম লেখা পাবার আশায় রইলাম।
*** প্রকাশকের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে – নতুন প্রজ্ঞা সংস্করণে বইটিতে বংশ তালিকা এবং দিল্লির মানচিত্র যোগ করা হয়েছে।
প্রাপ্তিস্থানঃ
- প্রজ্ঞা পাবলিকেশনের নিজস্ব বিপণী। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, প্যারামাউন্টের ঠিক বিপরীতে।
এছাড়া ঘরে বসেই অর্ডার করতে পারেন প্রজ্ঞা পাবলিকেশনের যে কোন বই। WhatsApp করুন 9147364898 – এই নম্বরে।
অন্যান্য প্রাপ্তিস্থান –
- দে বুক স্টোর (দীপুদা)
- জানকী বুক ডিপো (সুখরঞ্জন দা)
- বইবন্ধু