পাহাড়ের কোলে শান্ত নির্জন তুরুক
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
মন ভালো করা এই সকালে কে যে আমায় বারবার নিয়ে যায় সেই রূপকথার অচিনপুরে ! কে আবার ? পাহাড় ! পাহাড় ! কখনও গাঢ় নিরুদ্দেশে, কখনও দিকশূন্যিপুরে ! আহা কি যে আনন্দ এই বেহিসেবি পাগলামির স্রোতে ভেসে যাওয়ায়! বলা বাহুল্য, এইসব উন্মাদনার পর্ব নিয়ে আগের রাত থেকেই মনে মনে চর্চা শুরু। তারপর ঘুম ভাঙতেই দ্রুত প্রস্তুত হওয়া। প্যাকিং সারাই ছিল। উত্তরবঙ্গে পাকাপাকি চলে আসার পর পাহাড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা তুলনায় সহজ হয়েছে। এখন আর কলকাতা থেকে আসার ট্রেনজার্নির সময়টা নষ্ট হয় না। যাকে বলে, মন চাইলেই ছুটে যেতে পারি পাহাড়ের কাছে। এক্ষেত্রে নিজের উদ্যোগে যাওয়া ছাড়াও কলকাতা থেকে আগত বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনের সৌজন্যেও কখনও কখনও বেড়ানোর পরিকল্পনা হয়। এবারেরটা তেমনই। মধুমিতা ও বাপি, কলকাতার এই দম্পতি বেশ কয়েকটি হোমস্টে চালাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে। তারই একটি তুরুক, আমার এবারের ডেস্টিনেশন।
মধুমিতার সঙ্গে কথামতো একটু পরেই বাড়ির সামনে গাড়ির হর্ন বাজে। জানুয়ারির শেষ। এমনিতেই ক’দিন ধরে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। তারমধ্যে আজ সকাল থেকেই দেখছি আকাশের মুখ ভার। মেঘ আর কুয়াশার আস্তরণ পুরো শিলিগুড়ি শহরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তুরুক কার্শিয়ং জেলার অন্তর্গত। বুঝতেই পারছিলাম এই কুয়াশা আরও ঘন হবে সেখানে। ওই দিকটায় যতবারই যাই, কুয়াশার মোহমায়া ঘিরে রাখে চারপাশ। যথারীতি শুকনার পথে মহানন্দা জঙ্গল রেঞ্জ ও বালাসন নদী পার হয়ে রোহিনী পাহাড়ে উঠতে উঠতে দেখলাম কুয়াশা তার আঁচল বিছিয়েছে যত দূর চোখ যায়। এবার ব্রেকফাস্ট পর্ব। সবারই বেশ খিদে পেয়েছে। ড্রাইভার ভাই একটি পরিচ্ছন্ন ধাবার পাশে গাড়ি দাঁড় করায়। ততক্ষণে কুয়াশা আর মেঘের মিলিত দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।


ব্রেকফাস্ট শেষ করে আবার চলা। বেশ কয়েকটি হেয়ারপিন বেন্ড পার হয়ে গাড়ি এখন চড়াইমুখী পথে । কিছুদূর চলার পর কার্শিয়ং শহর পেরিয়ে আমাদের গাড়ি ডানদিকের একটি পথ ধরে। অপেক্ষাকৃত সরু সেই পথও কুয়াশার চাদরে ঢাকা। পথের ধারে ধারে পাইন গাছের গোড়ায় আরও ঘন কুয়াশা। দিনের বেলাতেই যেন রাতের অন্ধকার। সব মিলিয়ে কেমন এক রহস্যময় পরিবেশ। হেডলাইট জ্বালিয়ে, ক্রমাগত হর্ন দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে ড্রাইভার ভাইকে। একদিকে পাহাড়, একদিকে পাইনের জঙ্গল। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বেশ মনোরম এক দৃশ্যপট রচিত হতো, বুঝতেই পারছিলাম। কিন্তু এখন সব ধূসর। এরও অবশ্য এক মজা আছে। সেই অচেনা শিহরণ সঙ্গে করেই একসময় পৌঁছে গেলাম তুরুক।
তুরুকের অভিষেক হোমস্টে আমাদের অস্থায়ী ঠিকানা। হোমস্টে-র প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের আপ্যায়ন জানায় আমির খোয়ায়েশ। হোমস্টে চালান আমিরের মা। হোমস্টে-র কাছেই চলছে মাঘীমেলা। সেখানে স্টল দিয়েছেন তিনি। আমাদের যাবতীয় দায়িত্ব এখন তাই আমিরের কাঁধে। ভাই অভিষেককে নিয়ে সে দায়িত্ব চমৎকার পালন করছে আমির। ব্যাগপত্র ঘরে পৌঁছনোর পর ফ্রেশ হলাম। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। তাপমাত্রা অনেকটা নিচে নেমেছে টের পেলাম। এরই মধ্যে ছুটোছুটি করে কাজ করছে দুই ভাই। একটু পরেই লাঞ্চের ডাক পড়লো। একধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিচেন। খাবার ব্যবস্থা সেখানেই। গরম গরম ভাত, ডাল, আলু ভাজা, পাঁপড়, চাটনি, আচার আর চিকেনের দুরন্ত এক প্রিপারেশন। রান্না করেছে আমির। পরিবেশনে দুই ভাই। এককথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পাহাড়ে ছেলে-মেয়ে–কাজের ভেদাভেদ নেই। তবু এতটা পরিপাট্য সত্যিই আশা করিনি।
লাঞ্চ শেষে ঘরে এলাম। ঘরগুলি সুন্দর সাজানো। বিশেষত কাঠের কটেজদু’টি এককথায় অপূর্ব ! ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই সামনে যতদূর চোখ যায়, পাহাড়শ্রেণি, ছোট ছোট বাড়িঘর আর জঙ্গল। জঙ্গলে বিচিত্র প্রকৃতির গাছপালা। এখন তারা সব ধারাস্নানে নুয়ে পড়েছে। এটা বৃষ্টির সময় নয়। তবে, প্রকৃতি নিজেই নিজের নিয়মভাঙ্গার খেলা খেলে মর্জি হলেই। গত কয়েক বছর ধরে শীতকালেও বর্ষা নামে। পাহাড়ে বর্ষা নামলে মানুষের বড় কষ্ট। ঠান্ডার সঙ্গে ভেজা বাতাস মিলে শীত তীব্র আকার ধারণ করে। এই মুহূর্তে গোটা তুরুক সেই শীতের কবলে। ডাবল কম্বল গায়ে দিয়েও হু হু করে কাঁপি। সামান্য বিশ্রাম। সেই অবকাশে কিছু তথ্য জানাই পাঠককে।


ইয়াং নদীর বিস্তৃত উপত্যকা ঘিরে অবস্থিত সিটং। এই মুহূর্তে যার পর্যটন আকর্ষণ তুঙ্গে। সেই সিটংয়েরই অন্তর্গত তুরুক। সিটং আদতে খাসমহল, অনেকগুলি ছোট ছোট গ্রামের সমষ্টি। তারই একটি মিডল তুরুক, মুখে মুখে তুরুক। অবস্থান সিটং ২-এ । উচ্চতা মোটামুটি ৪০০০ ফুট। সকলেই প্রায় নেপালি ভাষাভাষী। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান–সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। মিলেমিশে পালন করেন দুর্গাপূজা, দশেরা, দিওয়ালি, বড়দিন, লোসার, বুদ্ধ পূর্ণিমা ইত্যাদি। কাছেই রয়েছে একটা ঝর্না আর কিছু দূরে খানিকটা উঁচুতে এক গুম্ফা। সেখানে ট্রেক করে উঠতে হয়। ঝর্না আপাতত জলবিহীন। তবে, বর্ষায় একেবারে আপন বেগে চলমান সে । গুম্ফাটি খুব পুরোনো না হলেও দেখে প্রাচীনতার অনুভূতি মেলে।
হোমস্টের মালকিনের একটি দোকান আছে একেবারে বাড়িটার গা ঘেঁষে। যেমন হয় পাহাড়ী অঞ্চলের দোকান। চাল-ডাল, তেল-নুন, লজেন্স-বিস্কুট থেকে ঝাড়ু-বালতি-জুতো, এমনকী কিছু ওষুধপত্রও মেলে এখানে। আপাতত দোকান বন্ধ। মাঘীমেলায় স্টল নিয়ে ব্যস্ত তিনি। মেলার আকর্ষণে একটু পরেই আমরাও পথে। মাঘ মাসের আগমন, সেই উপলক্ষে মাঘীমেলা। খোলা প্রান্তরে উৎসবের মেজাজ। দোকান সাজিয়ে বসেছে গ্রামের মানুষ। সেখানে বুড়ির মাথার পাকা চুল, ফুচকা, ঘুগনির পাশাপাশি রয়েছে, হস্তশিল্প, ঘরসংসারের সরঞ্জাম, কিছু শীতের ও ফ্যাশনেবল জামাকাপড়। সাজগোজের সরঞ্জামাদিও চোখে পড়লো। মাইকে বাজছে নেপালি গান। আছে নাগরদোলাও। শহর থেকে দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক গ্রাম্য মেলায় সবচেয়ে বেশি যা অনুভব করলাম, তা প্রাণের স্পন্দন !

ফেরার পথে দেখি, পাইনের ছায়া আর একটু ঘন হয়েছে। জঙ্গল কোথাও পাতলা, কোথাও আবার নিশ্ছিদ্র। শুনলাম গ্রামে লেপার্ড হানা দেয় প্রায়ই। সুযোগ পেলেই পোষা কুকুর বা ছাগল ইত্যাদি ধরে নিয়ে যায়। ইতস্তত চোখে পড়ে খরগোশ, হরিণ ও ভালুক। অঞ্চলটি পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ ! নানাজাতের পাখি দেখতে পাওয়া যায়। মার্চ-এপ্রিলে অপরূপ হয়ে ওঠে ফুল আর প্রজাপতির মিলন। তুরুকে ৬০/৬৫ ঘর মানুষের বাস। মুখ্য জীবিকা কমলালেবু চাষ। যা অন্যদিকে প্রবল পর্যটন আকর্ষণ হিসেবেও ধরা যায়। তুরুক থেকে কিছুটা দূরেই বেশ কয়েকটি কমলা বাগান রয়েছে, যেখানে দেখা শুধু নয়, গাছপাকা কমলালেবু চেখে নেওয়ার সুযোগও পান পর্যটকরা। এমনিতে আসা-যাওয়ার পথে এলাকার মানুষ ছোট ছোট স্টলে কমলালেবু বিক্রি করেন। ভারী মিষ্টি তার স্বাদ।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমানে ভুট্টা,আদা ও এলাচের চাষও হয় তুরুকে। সঙ্গে নানা ধরনের সবজি। গাজর, বিন, সিম, সব ধরনের কপি, রাইশাক, স্কোয়াশ, পালং, আলু, শসা, করলা, কুমড়ো, মটরশুঁটি ফলে পাহাড়ের ধাপে বা উপত্যকার নিচু কৃষিজমিতে। কৃষিকাজে এখানকার মানুষ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না। ফলে, শাকসবজি অতীব সুস্বাদু । প্রায় সবার বাড়িতেই আছে গরু, ছাগল, মুরগি। দুধ বা ডিম, মুরগির মাংসও বিক্রি করেন কেউ কেউ । ছুতোরের কাজও করেন কেউ কেউ। আছেন ড্রাইভিং পেশার মানুষ। তরুণরা বেশ পছন্দ করেন সেনাবাহিনীর কাজ। নার্স, বিউটি পার্লার, হোটেলের কাজ নিয়ে বাইরে চলে যাওয়া ইদানীং পাহাড়ে যথেষ্ট বেড়েছে। তুরুকও তার ব্যতিক্রম নয়। আগ্রহ বাড়ছে পর্যটন ব্যবসায়। পুরো সিটং জুড়ে এখন বেশ কয়েকটি হোমস্টে।
সন্ধ্যায় ভেজ পকোড়া সহযোগে কফি পান। ঘরেই সার্ভ করে আমির আর তার ভাই। মেলা চলবে রাত পর্যন্ত। তাই, এখনও আমিরই আমাদের দেখভালের দায়িত্বে। যেটা বুঝলাম, এই যে মেলায় স্টল দেওয়া, এটা যত না অর্থকরী লাভালাভের জন্য–তার থেকেও বেশি সামাজিকতা। পারস্পরিক আদানপ্রদান বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ের মানুষের কাছে। মেলায় সেই মেলবন্ধনের কাজটা হয়। শীতের প্রকোপ বাড়ছে। অতএব দ্রুত ডিনার সেরে নেওয়া হলো। আয়োজনে ছিল হাতে গড়া রুটি, চিকেনের একটা হালকা প্রিপারেশন, সঙ্গে আচার। বৃষ্টি কমেনি। তাই রাতের খাবারও ঘরেই। এতে আমিরদের কাজ বাড়লেও এতটুকু বিরক্তি নেই আচার-ব্যবহারে। খাওয়ার পর কম্বলের নিচে আশ্রয় নিতেই ঘুম নামে চোখের পাতায়।


পর্যটকরা দু’টিদিন অনায়াসে কাটাতে পারেন তুরুকে। একটা দিন রাখুন গ্রাম ঘুরে দেখার জন্য। সারল্যই এ গ্রামের অলংকার ! পাহাড়-জঙ্গল-উপত্যকা-ঝরনা। সঙ্গে লোকালয়। ছোট ছোট বাড়িগুলি ছবির মতো সুন্দর। ফুলের বাগান, চাষের ক্ষেত, সুউচ্চ সারিবদ্ধ পাইন–সবই বড় মায়াময় এখানে। একটি দিন প্রয়োজন সাইট সিয়িং-এর জন্য। কাছেই রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত মংপু। মংপুর রবীন্দ্রভবনে রয়েছে গুরুদেবের ব্যবহৃত নানান সামগ্রী। এর বেশকিছু আবার তাঁর নিজের ডিজাইন করা। এই ভবনটি একটি মালভূমি আকৃতির জমির উপর দাঁড়িয়ে। বিশাল গাছেরা আজও দাঁড়িয়ে ভবনটি ঘিরে। বহু যুগের ইতিহাসের সাক্ষী তারা। একদা সিনকোনা চাষের জন্য বিখ্যাত মংপু। তার প্রসেসিংয়ের জন্য কারখানাটি কাছেই। সেসব অবশ্য ব্রিটিশ আমলের স্মৃতি। এছাড়া আছে অহল দারা ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে একই সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তিস্তা দর্শন এককথায় অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা। ঘুরে আসা যায় মহানন্দা ফরেস্ট রেঞ্জের উচ্চতম অঞ্চল লাটপাঞ্চার, নামথিং লেক (ভাগ্যে থাকলে এখানে মেলে বিরল প্রজাতির সালামান্দার দর্শন), ইয়াং নদী এবং কমলা বাগান।
নিয়ম মেনেই ফেরার ঘন্টা বাজে। তাড়া পাঠায় কাজের দুনিয়া। ফেরার দিনে মেঘ-কুয়াশা উধাও। সকাল থেকেই ঝকঝকে আকাশ। রোদ্দুর মেখে নিয়েছে পাহাড়, জঙ্গল, পথঘাট। আজ ব্রেকফাস্টে ছিল অতীব সুস্বাদু পুরি-সবজি ও নেপালি পদ্ধতিতে প্রস্তুত আচার । আমিরের পরিবারের সবাই মিলে আমাদের বিদায় জানায়। এক অমল ভালোলাগার স্মৃতি নিয়ে গাড়িতে উঠি। এবার যেতে যেতে বাকি তথ্য। হোমস্টে-তে থাকা-খাওয়ার খরচ ১২০০ টাকা, দিন-প্রতি জন-প্রতি। খাবারের মধ্যে পাবেন ভাত, রুটি, ডাল, ভাজি, সবজি, চিকেন, ডিম। ব্রেকফাস্ট ও স্ন্যাকসে পুরি/রুটি-সবজি, টোস্ট-অমলেট, ওয়াইওয়াই, চাওমিন, মোমো ও পকোড়া। গিজার, রুম হিটার ও Wifi-এর ব্যবস্থা আছে। সাইট সিয়িং-এর বন্দোবস্ত করে হোমস্টে কর্তৃপক্ষ। বর্ষাকাল বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময় যেতে পারেন তুরুক।
এনজেপি/শিলিগুড়ি/বাগডোগড়া থেকে তুরুক পর্যন্ত রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া ৩০০০ টাকা। এছাড়া সার্ভিস বা শেয়ার গাড়িতে এনজেপি/শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়ং আসতে পারেন, ভাড়া ১০০ টাকা। ছাড়ে শিলিগুড়ি জং/তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে।মোটামুটি সকাল ৮টা থেকে পাবেন গাড়ি। কার্শিয়ং থেকে মিডল তুরুক দুপুর ১টা থেকে ২.৩০ পর্যন্ত গাড়ি পাওয়া যায়, ভাড়া ১০০ টাকা। ফেরার ক্ষেত্রেও শেয়ার গাড়ি পাবেন। মিডল তুরুক থেকে কার্শিয়ং সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে সব গাড়ি ছেড়ে দেয়। কার্শিয়ং থেকে প্রায় সারাদিনই গাড়ি পাবেন শিলিগুড়ি ফেরার। তথ্যগুলি ২০২১-এর। সামান্য এদিক-ওদিক হতে পারে। সেক্ষেত্রে যাওয়ার আগে সঠিক জানতে ও বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন নিচের ফোন নম্বরে। 7980681264,7278803993,
7003021825,7003252526

★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।
🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।