প্রতিশোধ নেবে এই ‘জাতিস্মর’
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। হইচই-এ সম্প্রতি স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে মধুমিতা সরকার অভিনীত ‘জাতিস্মর’। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
ফিকশন নির্মাতাদের ক্ষেত্রে, সে যে মাধ্যমেই হোক, কিছু বিষয় সব সময় অগ্রাধিকার পায়, ‘জাতিস্মর’ তেমনই এক বিষয়। এবার ওয়েব সিরিজেও এই বিষয়টি ঢুকে পড়ল রীতিমতো শোরগোল করে। জাতিস্মর আসলে কী, না, একটি মানুষ হঠাৎ করেই যেন কোন অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে প্রবেশ করে তার গতজন্মে। তারপরই ঘটতে থাকে নানা চমকপ্রদ কাণ্ডকারখানা। অতীতের না ভোলা ঘটনা নিয়ে পুনর্জন্ম হয় তার। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতেই পারে। তবে, তাতে ফিকশন নির্মাতাদের কিছু আসে-যায় না। ‘জাতিস্মর’ চর্চা সব সময়ই উত্তেজনায় পূর্ণ। যেমন উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা ঘটছে এই মুহূর্তে নারায়ণপুর গ্রামে।
গ্রামের পুরোনো মন্দিরের ছবি তুলতে এসেছে তরুণী রূপকথা। পেশায় একজন ফটোগ্রাফার সে। রূপকথার প্রেমিক অরুণি চৌধুরী, যার সঙ্গে তার আলাপ হয় কর্মসূত্রেই। গ্রামের এই জমিদারবাড়ি, যেটা কিনা আদতে অরুণিদেরই বাড়ি, সেখানেই এসে ওঠে রূপকথা। আর বাড়িটিতে সে ঢোকার পর থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা। রূপকথার মনে হয়, কোন অনাদি অতীতে সে যেন এখানে ছিল ! নারায়ণপুর গ্রামের সবই যেন তার বড় চেনা !
এই ঘটনাকে ঘিরে আমূল বদলে যায় রূপকথার জীবন। বাড়ির ইতিহাস, অনেক গোপন রহস্যের পর্দা সরে যায়। রূপকথা যেসব তথ্য অবলীলায় বলতে থাকে, তা তার জানার কথাই নয়। পরিবারের সদস্যরা বিস্মিত হয়ে পড়ে। কীভাবে এসব ঘটনা রূপকথার জানা, তা নানা প্রশ্ন তৈরি করে। যে অতীতের গল্প রূপকথা বলছে, বা, যে মানুষদের কথা বলছে, তাদের সে কেমন করে চিনবে ?
অর্থাৎ ‘জাতিস্মর’ হয়েই নারায়ণপুর গ্রামে ফিরেছে রূপকথা। এবার প্রশ্ন আগের জন্মে কোন পরিচয়ে ছিল রূপকথা এখানে ? কে সেই মানুষটি, যার ওপর ঘটে যাওয়া অঘটনের প্রতিশোধ নিতেই রূপকথার অজান্তেই নারায়ণপুর গ্রামে আসা ? প্রতিশোধ ! হ্যাঁ, সেটাই মুখ্য উদ্দেশ্য ‘জাতিস্মর’ রূপকথার। ‘হইচই’ সিজন সিক্সে একঝাঁক নতুন ওয়েব সিরিজের ঘোষণা করেছিল এই ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। তারই অন্যতম ‘জাতিস্মর’ শুরু হয়েছে গত ২১ এপ্রিল। মোট ৭টি পর্বে ২২-২৪ মিনিটের সময়সীমায় দেখান হচ্ছে এই সিরিজ।
‘জাতিস্মর’-এ রূপকথার ভূমিকায় অভিনয় করছেন ছোট পর্দা থেকে ওয়েব সিরিজে সমান দক্ষতায় বিচরণরত মধুমিতা সরকার। মধুমিতার বিপরীতে সিরিজে আছেন রোহন ভট্টাচার্য। রয়েছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি প্রমুখ। সঙ্গে আরও একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী। পরিচালনা সানি ঘোষ রায়। প্রযোজনা অ্যাক্রপলিস এন্টারটেনমেন্ট। গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন অনুজা চট্টোপাধ্যায়। সিনেমাটোগ্রাফার ইন্দ্রনীল মুখার্জি। সম্পাদনা সৌগত মুখার্জি।
সিনেমাটোগ্রাফার ইন্দ্রনীল মুখার্জি দুর্দান্ত আলো আঁধারি পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, যা এই জাতীয় রহস্যঘন কাহিনির ক্ষেত্রে একান্ত জরুরি। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে ‘জাতিস্মর’ পরিবেশনার মান উৎকর্ষতায় উন্নীত। অভিনয়ে শুরুতেই অবশ্যই মধুমিতার কথা। রূপকথা নারায়ণপুর গ্রামে পা দেওয়া মাত্র যে অদ্ভুত, ব্যাখ্যাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অভিব্যক্তিতে অতুলনীয় তিনি। চরিত্রের টানাপোড়েন প্রকাশে মধুমিতার অভিব্যক্তি লা জবাব! পাশাপাশি সমান তালে ভালো অভিনয় করেছেন রোহন। বিদীপ্তা বা কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজিও নিজ অভিনয় গুণে কাহিনির অংশ হয়ে যান। বাকিরাও যথাযথ। পরিবেশন ভঙ্গি স্মার্ট ও দ্রুতগতি সম্পন্ন। সব মিলিয়ে একটু ভিন্নধারার এই সিরিজ ওয়েব দর্শক যে বেশ পছন্দ করবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।