প্রথম আলোর চরণপাতে অপরূপ বাগোড়া
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
শিলিগুড়ি শহর ছেড়ে গাড়ি সুখনার পথ ধরতেই চোখে পড়ে, বদলে যাচ্ছে বাইরের দৃশ্যপট। দু’পাশে প্রাচীন গাছের সারি। এলাকাটি সেনা হেডকোয়ার্টারের অধীনে। পরিচ্ছন্ন চারপাশ আর গাড়িঘোড়াও কম। গন্তব্য উত্তরবঙ্গের অচেনা, অদেখা গ্রাম বাগোড়া। জেলা কার্শিয়ং। কার্শিয়ং শহরেরই নিকটবর্তী এই ছোট্ট গ্রামের উচ্চতা ৭১৫০ ফুট। এটা কার্শিয়ংয়ের সবচেয়ে উঁচু ভিউ পয়েন্ট। সময়টা জানুয়ারির শেষ। ঠান্ডা কী পরিমাণ হবে বুঝতেই পারছিলাম। সে হোক ! প্রকৃতির সবকিছু আহরণ করতেই তো আসা।
সুখনার জঙ্গল এলাকা থেকে পঙ্খাবাড়ির রাস্তা, সমতল থেকে পাহাড়। প্রচুর হেয়ারপিন বেন্ড পার হয়ে যখন কার্শিয়ং শহরে পৌঁছলাম, ততক্ষনে কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছে চরাচর। এটা এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। ছিঁচকাদুনে বাচ্চার মতো কথায় কথায় মুখ ঢাকে মেঘ আর কুয়াশায়। একটু পরেই শহরের ঘিঞ্জি অঞ্চল ছাড়িয়ে ডানদিকের অপেক্ষাকৃত একটি নির্জন রাস্তা ধরে ড্রাইভার। রাস্তার অবস্থা ভালো নয়। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ী অঞ্চলের বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থাই খুব খারাপ। চড়াইগামী এই রাস্তাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বাগোড়া নয়–এই পথ দিয়ে যাওয়া যায় চিমনি, লাটপাঞ্চার ও চটকপুর। ফলে প্রচুর ট্যুরিস্ট যাতায়াত করে এ পথে। তবু কেন অবহেলা, কে জানে ?
যাই হোক, কিছুটা চড়াই ওঠার পর দেখলাম, রাস্তা তুলনামূলক ভালো। যত উঠি পথের দু’পাশে ঘন হয় পাইনের ছায়া। কুয়াশা জমে গাছেদের আনাচেকানাচে। ধূসর মেঘে ঢাকা পড়ে আকাশ। এভাবেই কোনও এক সময় পৌঁছে যাই বাগোড়ার ডিকি’স হোমস্টে-তে। একটু আগেই ঝাপিয়ে বৃষ্টি এসেছে। গাড়ি থেকে নামবো কি, হাওয়ার তোড়ে দাঁড়ানোই মুশকিল। এদিকে রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা উঠে পৌঁছতে হবে হোমস্টে-র দরজায়। ঠিক তখনই দেবদূতের মতো হোমস্টে-র এক তরুণ কর্মী হাজির হলো বিশাল রঙিন ছাতা নিয়ে। তার হাত ধরেই পাথুরে এবড়োখেবড়ো পথ ধরে ওপরে উঠি। মালপত্র ঘরে পৌঁছে দিয়ে ড্রাইভার চলে যায়।
এরপরেই ঘটে কষ্টদায়ক, কিন্তু, মজাদার এক কান্ড। চলতি অভ্যাসে বাথরুমে গিয়ে কল খুলতেই বরফঠান্ডা জলে হাত জমে যায়। ততক্ষণে সেই তরুণ ছুটে এসেছে। সে একাধারে হতবাক ও লজ্জিত। যেন অপরাধ তারই। আমি তাকে বুঝিয়ে বলি, দোষ আমার। কলের জল যে বরফের মতো ঠান্ডা হবে, সেই বিষয়টা তো আমারই মাথায় রাখা উচিত ছিল। যাই হোক, দেখলাম তার হাতে গরম জলের কেটলি। অতএব একেবারে স্নানই করে ফেলবো ঠিক করলাম। স্নান করে সোয়েটার, চাদর, মোজা, গ্লাভস ইত্যাদিতে শোভিত হয়ে বাইরে আসতেই মন ভালো হয়ে গেল। মেঘ সরিয়ে উঁকি দিয়েছেন সূর্যদেব। ঝলমলে রোদ্দুর মেখে নিয়েছে বাগোড়া।
একটু পরেই লেজ নাড়তে নাড়তে টাইগার এসে হাজির। হোমস্টে চালায় যে তরুণী, সে-ই এই হ্যান্ডসাম সারমেয় প্রবরকে ‘টাইগার’ বলে ডাকছিল। সেই থেকেই টাইগারকে চেনা। চা নিয়ে বারান্দায় বসেছিলাম। প্লেট থেকে তুলে বিস্কুট দিতেই টাইগারের লেজ নাড়া বেড়ে যায়। খুবই কেয়ারিং সে পরে টের পেলাম। হোমস্টে থেকে এদিক-ওদিক যেখানেই যাও, টাইগার সঙ্গী হবে। পরের দুটি দিন সারাদিনে কতবার যে টাইগার জানান দিয়ে গেছে, সে আছে ! তার জন্য বাধ্য হয়েই বিস্কুট একটু বেশি করে রাখতে হলো আমার খাদ্যভান্ডারে।
নিচের ধাপে হোম স্টে-র মালকিন থাকে। কী নিপুণ হাতে সবটা সামলাচ্ছে এই তরুণী, দেখলাম এই ক’দিন। অতিথিদের খাওয়ার ঘরও নিচেই। প্রথম দিন ভাত-ডাল, ডিমের ঝোল, রাই শাক আর আলুর চোখা দিয়ে লাঞ্চ হলো। তার আগে সারাদিন অফিস, তারপর সারারাত ট্রেন জার্নি। এমনিতে দুপুরে ঘুমোই না। কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না। এদিকে বিছানা হিমশীতল। দুখানা ভারি কম্বল জড়িয়ে কাঁপুনি থামাবার চেষ্টা করি। ক্লান্ত শরীরে ঘুম নামতে দেরি হয় না। ঘুম ভাঙতে বারান্দায় যাই। অস্তগামী সূর্য আলো ছড়িয়েছে আকাশের কোনে কোনে। সে আলোর ঝলক ছুঁয়ে গেছে পাইনের ছায়াঘন প্রান্তর। আলো-আধারীর অপূর্ব এক আল্পনা যেন আঁকা হচ্ছে সেখানে।
একটা মালভূমির মতো আকৃতির জায়গার ওপর বাড়িটা। তাই সামনের দৃশ্যপট বহুদূর পর্যন্ত চোখে পড়ে। পাইনের সারির পিছনে ঢেউয়ের মতো পাহাড়শ্রেণী। কোনাকুনি বাঁদিকটা পশ্চিম। সূর্য অস্ত যাচ্ছে সেখানে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠি। মাথার ওপর খোলা আকাশ। সে আকাশ যেন গোধূলির রঙ মেখে সলাজ নববধূ হয়েছে। ঘরে ফিরছে পাখির দল। কি অপরূপ শান্তি ! আলো কমলে ঘরে আসি। ততক্ষণে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। ডিনারে চিকেন আর রুটি খেয়ে বিছানায়। রাত ন’টা বাজে মাত্র। চারিদিক চুপচাপ। শুধু মাঝে মাঝে পাশের ঘর থেকে ছেলের দলের হুল্লোড় আছড়ে পড়ছে এখানকার চরম উদাসীন নৈঃশব্দে। শুনেছিলাম, ওরা কাল থেকেই আছে। ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছি। এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে গেলেও যেন মনে হচ্ছে হিম হয়ে আছে সব। কখন যেন এভাবেই ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুম ভাঙলো অতি ভোরে, ছেলের দলের প্রবল চিৎকারে। দ্রুত গরম পোশাক জড়িয়ে বাইরে আসি। সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য। একেই বোধহয় ব্রাহ্ম মুহূর্ত বলে। আকাশ যেখানে মাটির সঙ্গে মিশেছে, সেখানটায় এখনও ঘোর অন্ধকার। তার একটু ওপর থেকে অন্ধকার ফিকে হচ্ছে আর আগুনের শিখার মতো লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে দিগন্ত জুড়ে। উদ্ভাসিত হচ্ছেন তিনি। প্রথম আলোর চরণধ্বনি কান পাতলেই যেন শোনা যাবে এখনই। দৌড়ে ঘরে গিয়ে ক্যামেরা নিয়ে আসি। বিস্ময়ে স্তব্ধ সবাই। একটু একটু করে আলো বাড়লো, কাটলো অন্ধকার। দশদিক সচকিত করে পূব আকাশে উঠে এলেন দিনমনি। এ ছবি ক্যামেরায় ধরা বা লিখে বর্ণনা করা কঠিন। এ এক অনির্বচনীয় অনুভূতি হয়ে হৃদয়ে থেকে যায়।
একটু পরেই দেখি, সামনের জমিতে যে ঘাস, তার উপরের শিশিরকণা বরফকুচিতে পরিণত হয়েছে। সারারাত ধরে ঘটেছে এই কান্ড। অর্থাৎ রাতে তাপমাত্রা নেমেছিল শূন্যের নিচে। এখন ঠান্ডা তুলনায় কম। ঝকঝকে আকাশের নিচে ফসলের ক্ষেত, সেখানে শাকসবজির সবুজ প্রাচুর্য। বাগোড়া এমন এক ভিউ পয়েন্ট, এখান থেকে যেদিকেই চাও, প্রকৃতির আঁচলে ছড়ানো মনিমুক্তা চোখে পড়ে। বর্ণনাতীত সেই সৌন্দর্য। উপত্যকা জুড়ে প্রথম সূর্যের রোশনাই। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দিব্যি দর্শন মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। আমার সঙ্গে অবশ্য বেশিরভাগ সময়ই আড়ি থাকে তার। এবারেও তারই পুনরাবৃত্তি। রাতে ছাদের উপর থেকে দেখা যায় দার্জিলিং,কালিম্পং ও কার্শিয়ং শহরের আলো। কিছুদূর হেঁটে গেলে জিরো পয়েন্ট, আর্মি বেস ক্যাম্প। এখানেও একটি ভিউ পয়েন্ট আছে। উপত্যকায় বহতা তিস্তার অসাধারণ এক ভিউ মেলে এখান থেকে।
বাগোড়াকে ঘিরে রয়েছে অনেকগুলি ট্রেকিং রুট। উৎসাহীরা যেতে পারেন সিটং, লাটপাঞ্চার, চটকপুর, চিমনি। খুব কাছে ডাউহিল ফরেস্ট। যেদিকেই যাওয়া যাক, পাইনের শোভা, প্রাচীন বৃক্ষরাজির গাম্ভীর্য মুগ্ধ করে। চিমনি যাওয়ার পথে পড়বে এক পুরোনো কালী মন্দির। উপত্যকায় নানা মরশুমি ফুল বসন্তে বাহারী হয়ে ওঠে। এছাড়াও শীতে রডোড্রেনডনের স্বর্গ বাগোড়া। পাইন ছাড়াও আছে ওক ও কমলালেবুর গাছ। সকাল-সন্ধ্যায় নানা জাতের পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়। এইসব স্বর্গীয় প্রাপ্তিসুখ নিয়ে আর একটা দিন কাটাই। আজ ব্রেকফাস্টে প্রথমবার ওয়াইওয়াই খেয়েছি। এটা পাহাড় স্পেশাল। দুর্দান্ত স্বাদ। শীত বোধটাও কমিয়ে দেয়।
মন ভালো করা এই সকাল-সন্ধ্যা যেন না ফুরোয়, আমার এই প্রার্থনা কেমন করেই বা শোনেন ঈশ্বর। তিনিও তো সময়ের চাকায় বন্দি। আমার ছুটি শেষ হয়। এবার ফেরার পালা। পরের দিন হালকা লাঞ্চ করে বের হলাম। অনেকটা দূর পর্যন্ত টাইগার এল পিছু পিছু। একটা ব্যাথার খবর। পরে আর একবার বাগোড়া গিয়েছিলাম। শুনলাম টাইগার আর নেই, নেকড়ের শিকার হয়েছে সে। ফেরার পথে ডাউহিল ফরেস্ট। দিনটা সরস্বতী পুজো। স্কুলের ছেলেমেয়েরা অঞ্জলি দিয়ে ফিরছে। হাসিখুশি পোজ দিয়ে আমার ক্যামেরায় বন্দি হয় ওরা। সেই সম্ভার মনের ঝুলিতে নিয়ে পৌঁছে যাই নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। অপেক্ষা ট্রেনের। ফিরতে হবে কাজের শহরে।
জরুরি তথ্য :
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বাগোড়া যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এটা নির্ভর করে শিলিগুড়ি ও কার্শিয়ং শহরের ট্রাফিকের ওপর। হোমস্টে থেকে পিক আপ ও ড্রপের ব্যাবস্থা করা হয়। ভাড়া এক পিঠ ৩০০০/৩৫০০ টাকার মধ্যে (বড় গাড়ি)। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকেও কমবেশি একই সময় ও খরচ লাগে।
থাকা-খাওয়ার খরচ দিন-প্রতি জন-প্রতি ১২০০ টাকা। ভাত, রুটি, ডাল, ভাজা, সবজি, ডিম, চিকেন পাবেন। ব্রেকফাস্টে টোস্ট-অমলেট, পুরি-সবজি, ওয়াইওয়াই। কাছাকাছি দোকানবাজার নেই তেমন। তাই চাহিদা অনুযায়ী সব হয়তো পাবেন না। তবে, অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপন্ন শাক-সবজির সুস্বাদ তৃপ্ত করবে। সঙ্গে ঘরে তৈরি আচার। রান্নার স্বাদও বেশ ভালো।
বছরের যে কোনও সময়ই যেতে পারেন বাগোড়া। শুধু বর্ষাটা এড়িয়ে চলুন। শীতে জবরদস্ত ঠান্ডা পড়ে। সেই হিসেবে শীতপোশাক সঙ্গে রাখবেন। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ সব থেকে ভালো সময়।
বিস্কুট ও শুকনো খাবার, ফ্লাস্ক, জল গরমের কেটলি, টি ও কফি ব্যাগ সঙ্গে রাখলে ভালো হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ফার্স্ট এড বক্স রাখাও দরকার। হোমস্টে’র যোগাযোগ : 8145723177
★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।
🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।