ফিরে আসাটা উপভোগ করছি
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। স্টার জলসায় সদ্য শুরু হয়েছে ‘মেয়েবেলা’। এই ধারাবাহিকের হাত ধরেই টিভির পর্দায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে বাংলা ছোট ও বড়পর্দার অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলির। এক সাক্ষাৎকারে নানাকথা জানিয়েছেন তিনি রামিজ আলি আহমেদ কে।
অনেকদিন পর তাহলে টেলিভিশনে ফিরলেন !
- অনেক বছর পর অভিনয় জগতে ফিরে আসা। টেলিভিশন থেকে তো অনেক অনেক দিন বিরতির পর এই প্রত্যাবর্তন। সত্যি কথা বলতে কী, ‘মেয়েবেলা’-র এই চরিত্রটিতে কাজের অফার পেয়েই রাজি হলাম।
‘মেয়েবেলা‘ ধারাবাহিকে অভিনীত চরিত্র বীথির সঙ্গে আপনার ব্যক্তিসত্ত্বার কতটা মিল বা অমিল?
- আমার ব্যক্তিসত্ত্বার সঙ্গে বীথির সেরকম কোনও মিল নেই। বীথি রিভোল্ট করেনি। বীথি নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে সব জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে। রূপা গাঙ্গুলি ওরকম দুর্বল নয়।
আপন ব্যক্তিসত্ত্বার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রকমের চরিত্র। এর জন্য কী ধরণের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?
- যদি পরিস্থিতির কথা ভাবি, সেক্ষেত্রে, রূপার সাথে বীথির কিছু মিলও আছে। তফাতটা হয়, কে কীভাবে সেটার মোকাবিলা করছে ! আমি হলে, বীথি যেভাবে বলছে, সেরকম ভাবে হয়তো বলতাম না। বীথি তার শ্বাশুড়ির সঙ্গে এমন ভয়ে ভয়ে কথা বলছে–আমি হলে এরকম করতাম না। বীথির যেমন মেজাজ, আমার তার থেকে কম বা বেশি হতে পারতো। আবার আচরণে কিছু মিলও আছে। তবে, এই ধারাবাহিকে কাজ করতে যেটা সবচেয়ে মজা লাগছে, সেটা হল, আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেরকম, ঠিক সেরকমই এখানেও–ছাপোষা, স্বাভাবিক একজন মানুষ।
আমরা মেগাতে যেটা দেখি নারী চরিত্ররা বাড়িতেই দামি শাড়ি–গয়না পরে আছে ! সেরকম কিন্তু এই ধারাবাহিকে দেখলাম না !
- একদম না। সেইজন্যই তো কাজটা করতে ভালো লাগছে। চরিত্রগুলি স্বাভাবিক ও চেনা। কস্টিউম, মেকআপও তেমনই।
অনেকদিন পর বাংলা টেলিভিশনে কামব্যাক। এখন তো নতুন জেনারেশনের ছেলেমেয়েরাই বেশি কাজ করছেন। আপনি এঁদের সঙ্গে কেমন ভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন আর নতুনদেরই বা কেমন দেখছেন ?
- দেখুন, আমি এতদিন অভিনয় জগৎ থেকে দূরে ছিলাম বলে খবরাখবর কমই রাখতে পেরেছি। রাখবার সময়, সুযোগ–কোনওটাই পাইনি। আমাদের এখানে যে লিড চরিত্র করছে, স্বীকৃতি, সে তো আগে একটা মেগা করেছে। খুব পরিচিত মুখ। এরা আমার কাছে নতুন হলেও, এদের সঙ্গে কাজ করাটা দারুন এনজয় করছি। এই মেগায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, এখানে স্টারডমের কোনও ব্যাপার নেই, চরিত্রগুলোই আসল। এখানে এরা কেউই স্টারসুলভ ব্যবহার করে না।
রাজনীতির প্রাঙ্গন থেকে মানুষের জন্য অনেক কিছু করলেন। এখনও করছেন। কিন্তু কখনও কি মনে হয় না, এর জন্য অনেক ভালো ভালো চরিত্র করতে পারলেন না, বা দর্শক আপনাকে অনেক ভালো চরিত্রে দেখতে পেল না!
- সেটা যেমন ঠিক, তেমন, এটাও ঠিক সমাজে রূপা গাঙ্গুলির আরেকটি ভূমিকা মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছে। রূপা গাঙ্গুলি যেটার জন্য জন্মেছে, এটাই রুপা গাঙ্গুলির আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমি শখ করে রাজনীতি করতে যাইনি। রাজনীতি আমার কাছে শখ নয়। আমি ছোটবেলায় টিউশন পড়িয়ে দুশো টাকা রোজগার করতাম তখনও সোশ্যাল ওয়ার্ক করেছি। ক্লাস টেন পাস করেই বাচ্চা পড়াতে শুরু করেছিলাম। কত বাচ্চাকে যে পড়াতাম। সপ্তাহের সাতদিনের পাঁচ-ছয়দিন বাচ্চা পড়াতাম। যেসব বাচ্চাদের পড়িয়েছি, তারা তখন কেউ সেভেনে পড়ে, কেউ টু-তে বা থ্রি-তে। তারা আগে বিলো পাস মার্কস পেত, তাদেরকে পড়িয়ে সিক্সটি পার্সেন্ট, কাউকে সেভেন্টি পার্সেন্ট তো কাউকে এইট্টি পার্সেন্ট পাইয়ে দিয়েছি। এক ঘন্টা পড়াবার কথা। তাদের দু-আড়াই ঘণ্টা পড়িয়েছি।
- মনে পড়ছে, তখন একটা বাড়ির দুই ভাইবোনকে পড়াতাম। তাদেরকে কোনো কোনো দিন তিন ঘন্টা, সাড়ে তিন ঘন্টা পড়াতাম। তখন আমি যোগমায়া দেবী কলেজে পড়ি। মর্নিং কলেজ। কলেজ করে আসতাম বাসন্তী দেবী কলেজের পাশে স্টুডেন্টস হেলথ হোমে। সস্তায় খাবার পাওয়া যেতো সেখানে। খাওয়াদাওয়া করে বিভিন্ন জায়গায় পড়ানো থাকতো। তাদেরকে পড়িয়ে বাড়ি ফিরতে রাত আটটা-নটা হয়ে যেতো। আবার পরেরদিন সকালে নিজের কলেজের ক্লাস–৬.১৫-তে প্রথম ক্লাস থাকতো। সেই সময়েই পড়িয়ে দুশো টাকা রোজকার করে খুঁজে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম কার কি দরকার। সেইজন্যই তো রাজনীতিতে আসা। এটা আমার ভালো লাগার জায়গা। এটা আমার চলবে।
এরপর কি তাহলে ছবিতেও প্রত্যাবর্তন ঘটবে?
- হ্যাঁ। অনেকের সঙ্গে চিত্রনাট্য নিয়ে কথা চলছে। এরপর দেখা যাক, কী হয় !
শেষ প্রশ্ন, রূপা গাঙ্গুলির কাছে ‘মেয়েবেলা‘-র অর্থ কি ?
- আমার কাছে ‘মেয়েবেলা’-র অর্থ হলো, যখন কোনও মেয়ে বুঝতে পেরে যায় সে মেয়ে। কোনো কোনো পরিবারে ছোট্ট বয়সেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তুমি মেয়ে। মাছের বড় পিসটা ছেলের জন্য। আবার অনেক পরিবার আছে, যেখানে মেয়েটা খেলতে ভালোবাসে, বাড়িতে সবাই তার জন্য খেলার সরঞ্জাম রেডি করে। সে ক্রিকেট, ভলিবল–সবকিছু দৌড়ঝাঁপ করে খেলে। মেয়েবেলা এমন একটা সময়, যেখানে প্রত্যেকটি মেয়ে তার মতো করে মেয়েত্বটা উপভোগ করেছে। সেটা আনন্দের হতে পারে। সেটা দুঃখের হতে পারে। নানা মেয়ের বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতার একত্রিত মালা হচ্ছে ‘মেয়েবেলা’।