Tuesday, May 13, 2025
দর্পণে জীবনসোশ্যাল মিডিয়া

ফেসবুকের পাতায় পাতায়

প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিল্পী ও শিল্প

আজকের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। কত সম্পর্ক তৈরি। কত ভাঙাগড়ার গল্প ! কেউ মনের ভাব প্রকাশে, কেউ বা শিল্পচর্চায়–বাণিজ্যিক লেনদেন থেকে রেসিপি-কলা এই প্ল্যাটফর্মে সবাই হাজির। পড়ছেন চয়নিকা বসুর কলমে।

লকডাউনের আগে থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বিশেষত, ফেসবুককে পারফর্মিং আর্টের শিল্পীরা তাঁদের শিল্পচর্চার কেন্দ্র হিসেবে মঞ্চের বিকল্প রূপে ব্যবহার শুরু করেন। ডিজিটাল বিপ্লবের যুগে এমনটাই স্বাভাবিক। আমি আজ মুলত আলোচনাটা নির্দিষ্ট রাখবো সংগীত শিল্পীদের মধ্যে। এক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা পেশাদারিত্বের ছাপ ছিল। ঘরে বসে পরিবেশন করার মধ্যেও একটা স্মার্টনেস লক্ষ্য করা যেত। পেশাদারিত্বের ছাপও থাকতো। লকডাউনের সময় থেকেই হঠাৎ যেন একটা ঝড় ধেয়ে এলো। ঝড় না বন্যা ? ফেসবুক খুললেই চোখে পড়তো শিল্প ও শিল্পীর বন্যা। লক্ষ্য করলাম, রোজই ফেসবুকে পারফর্ম করছেন এক একজন শিল্পী। সেখানে, নতুন ও পুরোনো–দুইই আছে।

কেউ বাড়িতে কোনও রকমে রেকর্ডিং করে পোস্ট করে দিচ্ছেন। কেউ লাইভ, অর্থাৎ সরাসরি গাইছেন। আমি গানের মান, প্রশিক্ষণ–সেসব প্রসঙ্গে পরে যাচ্ছি। আগে দেখার কথা। আজকের বিনোদন সম্পূর্ণ ভাবেই দর্শন নির্ভর। সেক্ষেত্রে একজন শিল্পী বাড়িতে বসে গাইলেও, তার প্রেজেন্টেশনে একটা পেশাদারিত্ব, একটা ন্যূনতম স্মার্টনেস দরকার। সেই জায়গাটায় খুবই অবহেলা চোখে পড়ে। কোনও রকমে বসে পড়ে, একটা গান গেয়ে ফেলা–যেখানে পুরো লুকটাই একেবারে অপেশাদারী। শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবটাও প্রকট। এখানে একটা কথা, একটু সাজিয়ে বসাটা সবসময় যে খুব খরচসাপেক্ষ, সেটা কিন্তু নয়।

এবার গানের মান প্রসঙ্গে আসি। প্রশিক্ষণ ছাড়াই এখানে ওখানে শুনে, কোনও রকমে গানটা তুলে পারফর্ম করার মারাত্মক প্রবণতা দেখে মাঝে মাঝে আঁতকে উঠতে হয়। কথা ভুল, সুর ভুল, পরিবেশন ভঙ্গি অপ্রীতিকর। এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ধাক্কাটা যেখানে লাগছে, সেটা হলো, রবীন্দ্রসঙ্গীত। লোকজনের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয়, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া সবচেয়ে সোজা। স্বর্ণযুগের বাংলা গান ও বাংলা-হিন্দি পুরোনো সিনেমার গান গাইবার চলও বেশ চোখে পড়ে। এইসব গানের ক্ষেত্রেও মানসিকতা এক। জনপ্রিয় গান বারবার কানে শোনার পর একটা ভাবনা মাথায় খেলা করে, যেন খুব সহজেই গানগুলি গেয়ে ফেলা যাবে।

যাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ আছে, তাঁরা সচরাচর এই দুঃসাহস দেখান না। তাঁরা নিজেদের সীমা অতিক্রম করেন না। তাঁরা জানেন, এইসব কালজয়ী গানের সাঙ্গীতিক মূল্যের কথা। যে সমস্ত শিল্পী গানগুলিকে অমর করে রেখে গেছেন, তাঁদের মর্যাদার কথা। সমস্যা হয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই যারা ময়দানে নেমে পড়ছে, তাদের ক্ষেত্রে। মাঝখান থেকে শ্রোতার কানে গানের বিকৃত রূপটি পৌঁছনোর ফলে তাঁরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছে নিন্দনীয় নয়। শিল্পী হবার স্বপ্ন দেখাটাও দোষের নয়। কিন্তু সবকিছু চাওয়া ও পাওয়ার কিছু রীতি আছে। নিজেকে তার যোগ্য করে তুলতে হয়। সোস্যাল নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করুন আপনার স্বপ্ন পূরণে। কিন্তু যথেচ্ছাচার দ্বারা নয়।

**ছবিঃ প্রতিকি