ফ্যাক্টরির কোচিং ক্লাসে এবার ‘ক্রাশ কোর্স’
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর
যাঁরা ইতিমধ্যেই ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ দেখেছেন, তাঁরা বিষয়টা শুনে কিছুটা বিভ্রান্ত হতেই পারেন। তাঁদের অবগতির জন্য আগেই জানাই, প্রেক্ষাপট এক হলেও ভাবনার গতিপ্রকৃতিতে অনেকটাই পার্থক্য রয়েছে। এডুকেশন ড্রামা ‘ক্রাশ কোর্স’ হার্ডকোর শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু সামাজিক দিকের প্রতিও অঙ্গুলি নির্দেশ করেছে, যা ছাত্রজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এটা ঠিক, ‘কোটা ফ্যাক্টরি’-কে অনেকবেশি বাস্তবমুখী বলছেন তাঁরা, যাঁরা দুটিই দেখেছেন। তা সত্ত্বেও যে বিষয়গুলি ‘ক্রাশ কোর্স’ তুলে এনেছে, তার গুরুত্বও কিছু কম নয়।
ছাত্রকুলের কেরিয়ারের স্বপ্ন ও তা পূরণ করার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলির বিভিন্ন স্কিম এখন এদেশের শিক্ষা পরিষেবার এক বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে। স্কিম অজান্তেই স্ক্যামে পরিণত হয়, সেও আমাদের জানা। প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর সেটা রক্ষা করার মধ্যে আসমান-জমিন না হলেও বিস্তর ফারাক থাকে, সে কথাও সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন। তবু, এ জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্রের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় থাকে না ছাত্রছাত্রীদের এবং অভিভাবকদের। এমনই স্বপ্ন দেখা একদল ছাত্রছাত্রী, দুটি ইনস্টিটিউটের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও তার ফলে ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা–এই নিয়েই তৈরি ‘ক্রাশ কোর্স’। অকুস্থল রাজস্থানের কোটা। হ্যাঁ, ‘কোটা ফ্যাক্টরি’র গল্পও এই অঞ্চলেই বিন্যস্ত।
আদতে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজস্থানের কোটায় এখন এই জাতীয় কোচিং সেন্টারের রমরমা, যাদের নাম আইআইটি, জেইই ইত্যাদির এডমিশন পাওয়ার প্রস্তুতি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পথ বাতলানোর (?) ক্ষেত্রে সারা দেশের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মুখে মুখে ফেরে। সিরিজ নির্মাতারা সঙ্গত কারণেই তাই প্রেক্ষাপট রূপে কোটাকে বেছে নিয়েছেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, তারই মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেকার সম্পর্ক–বয়সজনিত কারণেই আবেগ বাঁধ মানে না। একদিকে অভিভাবকদের উচ্চাকাঙ্খার চাপ, অন্যদিকে তারুণ্যের আবেগে মন দেওয়ানেওয়া খেলায় হারজিত। বলা বাহুল্য, এই সবটাই ওদের ঠেলে দেয় নানা মানসিক সংকটে। এখান থেকেই আত্মহত্যা ও অন্যান্য প্রক্রিয়া প্রবণতার শুরু। ‘ক্রাশ কোর্স’ এই দিকটায় বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’র আছে জিতু ভাইয়া, যিনি এমন এক শিক্ষক, যাকে সব ছাত্রছাত্রী পছন্দ করে। ‘ক্রাশ কোর্স’-এর রতনলাল জিন্দাল হলো মুখ্য নির্ণায়ক। লাইন অফ কোচিং ইনস্টিটিউশনের মালিক রতনলালের ক্ষমতার পরিমাপ বুঝতেই পারছেন। বহু বছর পর বলিউডের শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা অন্নু কাপুরকে রতনলালের চরিত্রে পাওয়া নিঃসন্দেহে এই সিরিজের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। একজন ইনস্টিটিউশনের মালিক, যার বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষার থেকেও অনেক বেশি যোগসূত্র থাকে বাণিজ্যের অর্থাৎ অর্থকরী ব্যাপারটির সঙ্গে, সেটা অন্নু কাপুরের অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে। পয়সার স্বার্থে যতদূর যাওয়া সম্ভব রতনলাল সেটা করে। তার সীমাহীন নিষ্ঠুরতা ছাত্রছাত্রীদের কোন পথে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে মোটেই ভাবিত নয় অর্থলোলুপ অসৎ রতনলাল। অন্নু কাপুরের দাপুটে অভিনয় ছাড়া রতনলাল বিশ্বাসযোগ্য হতে পারতো না নিঃসন্দেহে। অন্নু কাপুর ছাড়াও অভিনয় করেছেন মোহিত সোলাঙ্কি, হৃধু হারুন, অনুষ্কা কৌশিক, ঋদ্ধি কুমার, ভবেশ বালচন্দানি, আরিয়ান সিং, হেতাল গাড়া, অন্বেষা ভিজ, ভানু উদয়, উদিত অরোরা, প্রণয় পাচৌরি, বিদিতা বাগ প্রমুখ। গত ৫ আগস্ট আমাজন প্রাইম ভিডিওয় শুরু হয়েছে ‘ক্রাশ কোর্স’। লেখক ও নির্মাতা মণীশ হরিপ্রসাদ। লেখার ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগী হয়েছেন রায়না রায়। পরিচালক বিজয় মৌর্য। প্রযোজনা আউলেট ফিল্মস। আপাতত ১০ পর্বের প্রথম সিজন। গল্পের গতিপ্রকৃতি যা, পরবর্তী সিজনের অপেক্ষায় সকলেই। নির্মাতারাও নিশ্চয়ই পরের সিজনের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই।