Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

বম্বের পাঁচ বেগম আজও বহু নারীর আয়না

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। পূজা ভাটের দুর্দান্ত কামব্যাক ‘বম্বে বেগম’-এ। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর

অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১৯৯১ সালে মহেশ ভাট পরিচালিত ‘দিল হ্যায় কে মানতা নেহি’ ছবিতে পূজা ভাটের অভিনয় দেখেই তাঁর মনে হয়েছিল, কখনও পূজার সঙ্গে নিশ্চয়ই কাজ করবেন তিনি। ‘বম্বে বেগম’-এ পূজা ভাটের কামব্যাক তারই ফসল। যাঁরা এই সিরিজ ইতিমধ্যেই দেখেছেন, তাঁরা উপলব্ধি করেছেন কতটা উজ্জ্বলভাবে ফিরে এসেছেন পূজা এই ওয়েব সিরিজে। যদিও, শুরুতেই রাজি হননি তিনি অলঙ্কৃতার প্রস্তাবে। তবে, চিত্রনাট্য পড়ার পর আর না করতে পারেননি পূজা। ভাগ্যিস করেননি। তাই তো হিন্দি বিনোদন দুনিয়া আবার এক শক্তিশালী অভিনেত্রীকে ফিরে পেল। আরও বেশ কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতাশালী অভিনেতার মতোই ওয়েব সিরিজের হাত ধরে ভারতীয় বিনোদন ক্ষেত্রে ঠিকঠাক কামব্যাক হলো পূজার। ঠিকঠাক এই জন্য, ২০২০-তে সড়ক ২-এ একটি ক্যামিও রোল করেন তিনি, যাকে আর যাই হোক, কামব্যাক হিসেবে গণ্য করা যায় না।

নেটফ্লিক্স-এ গত বছর মার্চ মাসে প্রদর্শন শুরু হয় ‘বম্বে বেগম’-এর। নির্মাতা অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব। চিত্রনাট্য লিখেছেন বর্ণিলা চ্যাটার্জি, ইতি আগরওয়াল ও অলঙ্কৃতা স্বয়ং। নির্দেশনায় যৌথভাবে আছেন অলঙ্কৃতা ও বর্ণিলা। পর্দায় পুরো গল্পটি শুনিয়েছেন (narration) আরাধ্যা আনন্দ। অভিনয়ে পূজা ভাট ছাড়াও আছেন আর এক প্রতিভাময়ী সাহানা গোস্বামী। আছেন আসামের পপুলার গায়িকা ও অভিনেত্রী প্লাবিতা বড়ঠাকুর, অম্রুতা সুভাষ, আরাধ্যা আনন্দ। এখানে অম্রুতার কথা একটু পৃথকভাবে উল্লেখ প্রয়োজন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার গ্র্যাজুয়েট, অত্যন্ত প্রতিভাধর এই অভিনেত্রী ইতিমধ্যেই মারাঠি ছবি ‘অস্তু’-র জন্য ঝুলিতে পুরেছেন জাতীয় পুরস্কার। গত বছর ‘বম্বে বেগম’ তাঁকে এনে দিয়েছে এশিয়ান একাডেমি ক্রিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ডস (বেস্ট একট্রেস ইন আ সাপোর্টিং রোল)। মুখ্য এই পাঁচ অভিনেত্রী ছাড়াও এই সিরিজে অভিনয় করেছেন মণীশ চৌধুরী, সংঘমিত্রা হিতৈষী, রাহুল বোস, ইমাদ শা, বিবেক গম্বার, দানিশ হুসেন, নৌহিদ সাইরুসি, বিবেক ট্যান্ডন, দীপক সোনি প্রমুখ।

Images 10 2
বম্বের পাঁচ বেগম আজও বহু নারীর আয়না 8

পটভূমি আজকের নাগরিক ভারতের মেগা শহর মুম্বই। সেখানকার বিভিন্ন প্রজন্মের পাঁচ মহিলা–তাদের স্বপ্ন, লোভ, আকাঙ্ক্ষা, নীতি ও অসাধুতা, সংকট এবং উচ্চাশা–সব নিয়ে যে রোলার কোস্টার জার্নি, এই সিরিজ তাকেই তুলে এনেছে। এক ব্যাঙ্কের সিইও রানি (পূজা ভাট), তার সংস্থার জটিল সমস্যাগুলি গোপন করায় দিনরাত এক করে সে। রানির অধীনে কাজ করে ফতিমা (সাহানা গোস্বামী), যে কিনা যতদূর সম্ভব স্বামীকে খুশি রাখবার চেষ্টা করে যায়। বস্তির অধিবাসী লিলির (অম্রুতা সুভাষ) স্বপ্ন, অতীতের বার ডান্সার পেশার স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে ছেলেকে নিয়ে ভালো জীবনের ছন্দ খুঁজে নেওয়া। যদিও, এখানেও তার পরিকল্পনায় রয়েছে জালিয়াতির পথ। বাই সেক্স্যুয়াল আয়েশাও (প্লাবিতা বড়ঠাকুর) ছোট শহর ইন্দোর থেকে মেগা সিটি মুম্বইয়ে এসে খুঁজছে নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার পথ। ড্রাগচক্র, ব্ল্যাকমেল এবং আরও নানা অপরাধের ধূসর ক্যানভাসে এই পাঁচ নারীর জীবন কোন খাতে প্রবাহিত, তাই নিয়েই এই সিরিজের প্রথম সিজনের ৬টি পর্ব পরিবেশিত।

এই শোয়ের ভাবনা শুরু সেই ২০১২ সালে। সেই সময় নিজের কাজের জগতের অভিজ্ঞতা থেকে অলঙ্কৃতা ব্যাক্তিগত ভাবে অনুভব করেছিলেন একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তেমন কিছু বদলায়নি। এমনকী অত্যাধুনিক কর্পোরেট দুনিয়াতেও বড় বড় পোস্টে যে সব মহিলা কাজ করেন, তাঁদের প্রতি ঘরে-বাইরে আশপাশের মানুষের প্রত্যাশা আটকে আছে সেই উনবিংশ শতাব্দীর ভাবনায়। সেই অনুভব থেকেই ‘বম্বে বেগম’-এর চিত্রনাট্য লেখার পরিকল্পনা। ২০২১-এ এসে যার ওয়েব দর্শন আমাদের। বলতে দ্বিধা করবো না, প্রায় এক দশক পার করেও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি অলঙ্কৃতার বিষয়। সিরিজের কার্যনির্বাহী প্রযোজক অলঙ্কৃতা স্বয়ং। সিনেমাটোগ্রাফি অক্ষয় সিং। সম্পাদনা চারুশ্রী রায় ও ওঙ্কার উত্তম সকপল। থিম মিউজিক কম্পোজার সানি দত্ত। মিউজিক কম্পোজার আনন্দ ভাস্কর। প্রযোজনা এন্ডেমল শাইন ইন্ডিয়া ও চেরনিন এন্টারটেনমেন্ট।