বাবা-মেয়ের অমল রসায়ন
আয় খুকু আয় ছবিতে
লিখেছেন অজন্তা সিনহা
তারকা প্রসেনজিতের অভিনেতা হয়ে ওঠার জার্নিটা শুরু হয়ে গেছে বহু আগেই। গ্ল্যামারাস ইমেজ ঝেড়ে ফেলে রিয়ালিস্টিক চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি, সেও তো অনেকদিন হলো। এবার আরও একধাপ এগিয়ে এক বৃদ্ধ বাবার চরিত্রে তিনি। একেবারে সেইরকমই লুকেই পর্দায় আসতে চলেছেন প্রসেনজিৎ। এই ছবি ঘিরে প্রসেনজিৎ ভক্তরা আক্ষরিক অর্থেই চূড়ান্ত উৎসাহে ফুটছেন বলা যায়। এক বাবা আর তার মেয়ের কাহিনি ‘আয় খুকু আয়’ প্রসেনজিতের কেরিয়ারে নতুন কোনও মোড় নিয়ে আসবে কিনা, সে কথা ছবি মুক্তির আগে বলা অসম্ভব! তবে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় সুযোগ পাওয়াটা যে দিতিপ্রিয়া রায়ের জন্য এক বড় ব্রেক, সেকথা এখনই বলে দেওয়া যায়।
বাবা-মেয়ের মধুর রসায়নের এই কাহিনি পর্দায় নিয়ে আসছেন ‘সুইৎজারল্যান্ড’ খ্যাত পরিচালক শৌভিক কুন্ডু। দর্শক কেমন চেহারায় দেখবে এই বাবাকে, তা মিডিয়ার কল্যাণে ইতিমধ্যেই কিছুটা প্রকাশিত। কাঁচাপাকা দাঁড়িযুক্ত মুখ। মাথায় বেশ বড়সড় এক টাক। চোখেমুখে শুধু বয়সের ছাপ নয়, একেবারে বিদ্ধস্ত এক অবস্থা। মানুষটি কোন অর্থনৈতিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত জানা না গেলেও এই মুহূর্তে তার জামাকাপড়ের মলিন দশা দেখে আন্দাজ করা যায় সংকটের মধ্যেই দিন কাটে তাদের। অথবা, কোনও বিশেষ কারণে এই সংকট। তবে, মুখের হাসিটি এখনও বেঁচে আছে তার। সে কী তার খুকু অর্থাৎ মেয়ের কারণেই ? মেয়েকে ছোট থেকে অতি মমতা ও যত্নে বড় করে তুলবেন বাবা। তারপর তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো। এরপর কী ? এ প্রশ্নের জবাব নেই। ছবির কাহিনি প্রায় গোপনেই রেখেছেন প্রযোজক-পরিচালক থেকে পুরো ইউনিট। তবে, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যখন, তখন যথেষ্ট আবেগ যে থাকবে এর পরতে পরতে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
অভিনেতা-প্রযোজক জিৎ মদনানির জিৎস ফিল্মওয়ার্কস প্রযোজনা করেছে ‘আয় খুকু আয়’। শোনা যায় জিতের শর্তই ছিল প্রসেনজিৎ ছাড়া এ ছবি বানাবেন না তিনি। স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে টলিউডে বাণিজ্যিক ছবিতে এমন এক চরিত্রে কাজ করার মতো আর কে আছে ? প্রসেনজিতের লুক কেমন হবে, সেটাও জিৎই ঠিক করেন। প্রসেনজিতের লুক সংক্রান্ত গুরু দায়িত্বটি সামলাচ্ছেন সোমনাথ কুণ্ডু। খবরে প্রকাশ, প্রসেনজিতের লুকের জন্য প্রস্থেটিক মেকআপের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। একটা মজার ব্যাপার এ প্রসঙ্গে মনে পড়লো। বয়সের ভারে এতটুকু কাতর নন তিনি। চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কঠোর ডায়েটে থাকেন প্রসেনজিৎ, এ তথ্য সকলেরই জানা। ফিটনেস রক্ষার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট যত্নবান তিনি। অভিনয়ের খাতিরে সেই চেহারায় এখন অন্য কারিকুরি। সব বাদ দিয়ে এটার জন্যও বোধহয় কুর্নিশ করা যায় তাঁকে।
লুক নিয়ে ভাবা হয়েছে দিতিপ্রিয়ার ক্ষেত্রেও। ঝকঝকে গ্ল্যমারাস এক তরুণী তিনি। ‘রানী রাসমনি’ মেগায় রানীমা লুকে দেখেছে তাঁকে দর্শক। ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে আবার আর এক রকম। সেই সব থেকে বেরিয়ে এসে দিতিপ্রিয়াকে দেখা যাবে সম্পূর্ণ ছাপোষা ঘরের এক মেয়ের ভূমিকায়। কলমকারি প্রিন্টের সাদামাটা সালোয়ারে মফঃস্বলের এক মেয়ে এখন তিনি। পরিচালক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঠিক যে বয়সের একটি মেয়ে তাঁরা চাইছিলেন প্রসেনজিতের মেয়ের চরিত্রে, তেমনটাই পেয়েছেন দিতিপ্রিয়ার মধ্যে। এছাড়া স্বল্প পরিসরেই দিতিপ্রিয়া তাঁর স্বচ্ছন্দ অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। সেটাও নিশ্চয়ই তাঁকে নির্বাচন করার একটা কারণ।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দিতিপ্রিয়া রায় ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী মিথিলা। ইদানীং টলিউডে প্রযোজক-পরিচালকদের পছন্দের তালিকায় ভালোই জায়গা করে নিয়েছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। পরিচালক রাজর্ষি দে’র ‘মায়া’ ছবির সৌজন্যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখবার পর থেকে একের পর এক নতুন প্রোজেক্ট সই করেই চলেছেন সৃজিত ঘরনি। তবে, ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতে তিনি জুটি বাঁধতে চলেছেন প্রসেনজিতের সঙ্গে, অভিনয় করবেন তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায়–এটা নিঃসন্দেহে বড় খবর। অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে আছেন রাহুল দেব বোস, সোহিনী সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শঙ্কর দেবনাথ, সত্যম ভট্টাচার্য প্রমুখ। ছবির গল্প লিখেছেন পরিচালক শৌভিক কুণ্ডু স্বয়ং। চিত্রনাট্যে তাঁকে সাহায্য করেছেন সুগত সিনহা। সঙ্গীত পরিচালনা করছেন রণজয় ভট্টাচার্য। ছবির শুটিং হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল সহ, বোলপুর ও তার সংলগ্ন বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায়।
প্রযোজক জিৎ অর্থ খরচে কার্পণ্য করেন না। ছবির কাহিনিকে সুন্দর মোড়কে পরিবেশন করতে ভালোবাসেন তিনি। আজকাল যাকে আমরা ডিজাইন করা বলি, সেই নান্দনিকতা ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতেও মিলবে নিশ্চয়ই। বাকি রইলো প্রসেনজিতের কামাল আর পরিচালক শৌভিক কুন্ডুর দক্ষতা। টানটান অপেক্ষায় বাংলার বিনোদনপ্রেমী দর্শক।