Monday, May 12, 2025
কৃষ্টি-Culture

বিজ্ঞানী ও দেশপ্রেমী শান্তনু ভৌমিকের অবদান

“তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি–চিৎকার নয়, ভোটবাজিতে নয়। আমার সকল কাজে তোমায় স্মরণে রাখি।”

“তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ করো–ভালো লাগছে ভেবে রাজধানী দিল্লীর রাজপথে, ইন্ডিয়া গেটে  নেতাজীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হলো।”

নেতাজী সম্পর্কে তাঁর অকুন্ঠ আবেগ এভাবেই ব্যক্ত করলেন প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক শান্তনু ভৌমিক। পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের এই শ্রদ্ধেয় ভূমিপুত্র এখানেই থেমে থাকেননি। সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর জন্য বিশেষ বুলেটপ্রুফ বর্ম তৈরি করেছেন তিনি এবং নিজের এই আবিষ্কারকে উৎসর্গ করেছেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নামে। আপাতত প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ শেষ। গুজরাতের বরোদার একটি সংস্থা এই লাইট ওয়েট বুলেটপ্রুফ কম্পোজিট বর্ম তৈরি করবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী শান্তনু ভৌমিক। প্রসঙ্গত, এই বর্মের নাম তিনি দিয়েছেন ‘নেতাজী সুভাষ আর্মর’।

“সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর জন্য প্রচলিত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কিছুটা ভারী ও পুরু হয়। কিন্তু আমার তৈরি বর্ম তুলনায় অনেক হালকা আর ব্যবহারও সুবিধাজনক”–জানান শান্তনু। জানা গেল, তৈরির ক্ষেত্রে উপদানগত পার্থক্যও রয়েছে। শান্তনু আরও জানান, প্রচলিত জ্যাকেটগুলি উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের সংস্থা থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তাঁর বর্ম একেবারেই ভারতীয় উপাদানে তৈরি এবং গুলি রুখবার ক্ষেত্রে একইরকম কার্যকর। শান্তনুর তৈরি এই বর্ম ইতিমধ্যেই পরীক্ষায় পাশ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

“এই পুরো প্রযুক্তিটি আমি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নামে উৎসর্গ করেছি। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া এবং মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী ভারত গড়ার উদ্দেশ্য সাধিত হবে এতে”–জানান শান্তনু।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শান্তনুর তৈরি বর্ম প্রসঙ্গে–

● এটি থার্মো-প্লাস্টিকের মিশ্রণ থেকে তৈরি।

● উচ্চমাত্রার তাপ সইতে পারা এই থার্মো-প্লাস্টিক রেজিন সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় উপাদান।

● প্রতি সেকেন্ডে ৪৪০ মিটার গতিবেগের নয় মিলিমিটার বুলেট প্রতিরোধ করতে সক্ষম বর্মটি।

● বর্মটি ৭১২ মিটার গতির ‘একে ৪৭’ রাইফেলের বুলেট প্রতিরোধ করতে পারবে। সেই পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, থার্মোকল বর্জ্যকে রিসাইকেল করে হালকা ওজনের অথচ দৃঢ় হেলমেট বানানোর পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছেন এই প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। জানালেন, স্বামী বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত এই হেলমেট তৈরি হবে পুনের একটি শিল্প সংস্থায়। এরই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য, প্লাস্টিক বর্জ্যকে ব্যবহার করে আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জার উপকরণ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করে ইউনেস্কোর ‘লিডারশিপ অ্যান্ড এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন শান্তনু গত বছর।

তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর প্রবাসী, অমৃতা বিশ্ববিদ্যাপীঠমের অ্যারোম্পেস বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী শান্তনু ভৌমিক এভাবেই তাঁর বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে মিলিয়েছেন সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। এছাড়া দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন তিনি।