Monday, February 3, 2025
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

বিদ্যা আর শেফালির হাড় হিম করা জলসা

লিখেছেন অজন্তা সিনহা

অনেকেই বলেন, ভারতীয় সিনেমায় বিদ্যা বালানের প্রতিভাকে এখনও সেভাবে ব্যবহারই করা হয়নি। বিভিন্ন ছবিতে আমরা তাঁর যে অভিনয় দেখি, সেখানে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো বিদ্যার প্রতিভা ঝলকালেও, এখনও তাঁর সেরা অভিনয় দেখা হয়ে ওঠেনি আমাদের। এটা ঠিক, পরিচালক মিলন লুথরিয়া ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এ বিদ্যার ভিতরের আগুনকে সবচেয়ে ভালো কাজে লাগিয়েছেন। এ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন বিদ্যা। কিন্তু তারপর ? কেরিয়ারের প্রায় শেষদিকে করিশমা কাপুরকে দিয়ে শ্যাম বেনেগল ‘জুবেইদা’ ছবিতে যে অভিনয়টা করান, স্মিতা পাতিলের অসংখ্য কাজ, অন্তত একটি ‘ভূমিকা’ বা রেখার ‘উমরাও জান’–এরকম একটি কাজও কী বিদ্যার ভাগ্যে জুটতে পারতো না ? অথচ তথাকথিত ভাবে বিদ্যা মোটামুটি নারীকেন্দ্রিক ছবিই বেশি করেছেন।

বিদ্যার থেকেও যোগ্যতার হিসেবে কম সুযোগ পাওয়া বলিউডের আর এক অভিনেত্রী হলেন শেফালি শাহ। ‘সত্য’ ছবিতে তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন শেফালি। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও ওঠে ঝুলিতে। কিন্তু তারপর ? স্বামী প্রযোজক বিপুল শাহ। তা সত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য শেফালিকে অপেক্ষা করতে হয় সাতটি বছর । ১৯৯৮-এ ‘সত্য’। ‘ওয়াক্ত দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’ মুক্তি পায় ২০০৫-এ। মাঝে না বলার মতো ‘মনসুন ওয়েডিং’। ‘ওয়াক্ত দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’ ছবিতে তিনি অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন। সাম্প্রতিক ‘দিল ধড়কনে দো’-তে সুপারস্টার অনিল কাপুর পর্যন্ত মাঝে মাঝে ফিকে হয়ে যান শেফালির বিপরীতে। আদতে একগুচ্ছ তারকার মাঝেও অভিনয়ের গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে উজ্জ্বল প্রতিভাত হন শেফালিই।

এই যে বলিউডের দুই প্রতিভাময়ীকে একত্রে আলোচনায় এনে ফেললাম, এটা একেবারেই অহেতুক ভাববেন না, প্রিয় পাঠক। এঁদের দুজনকে এবার আমরা দেখতে চলেছি একই ছাতার নিচে–থুড়ি একই ছবির ফ্রেমে। দুটি একেবারে আলাদা জগতে পৃথকভাবে পল্লবিত দুই নারীর জীবন। পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণীর থ্রিলার ‘জলসা’-য় অভিনয় করেছেন বিদ্যা ও শেফালি। যাকে বলে, শিরদাঁড়ায় শিহরণ জাগানো, এমনই টানটান নাকি এই ছবির কাহিনি! একেবারে মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে যাবে, এমন বিষয়। আর প্রেজেন্টেশনও এমন যে লোকজন ছবিটা দেখার পর মাথা ঘামাতে বাধ্য হবেন। বহু অজানা প্রশ্ন উঠে আসবে কাহিনির পরতে পরতে। প্রশ্ন উঠবে। উত্তর মিলবে কী ? ছবির কাহিনি স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি জনসমক্ষে আনেননি নির্মাতারা। থ্রিলারের মজা নষ্ট না হয়, এটাই কারণ, বুঝতে অসুবিধা হয় না।

তবু, যতটা জানা গেছে–বিদ্যা একজন সিনিয়র মিডিয়া পারসন, যে কিনা একজনকে একটা স্পেশাল স্টোরির দায়িত্ব দেয়। একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে কোন সত্য সে দিনের আলোয় আনতে চায় ? এই রহস্যের আড়ালে লুকিয়ে কোন তথ্য ? শেফালি অভিনয় করেছেন ওই সাংবাদিকের (বিদ্যা) রাঁধুনির চরিত্রে। এই চরিত্রটি ভয়ঙ্কর কুচুটে, সবসময় টেনশন ও দুশ্চিন্তায় ভোগে এমন এক মহিলা। ইনি তাঁর সন্তানকে নিয়ে অতীত অশান্তি থেকে পালাতে চায়। কী সেই অতীত ? এও এক জটিলতার জাল। এবার এই দুই নারী মুখোমুখি হয়ে কী করে, তারপর কী হয়–হাড় হিমকরা রসদ সেখানেই পুঞ্জীভূত। রাতের মেরিন ড্রাইভে শুটিং লোকেশন–পরিবেশ সৃষ্টিতে ত্রুটি রাখছেন না নির্মাতা-নির্দেশক।

সম্প্রতি প্রযোজকদের পক্ষ থেকে ছবিটির একটি টিজার প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিওতে ‘জলসা’-র কাহিনি প্রসঙ্গে বিদ্যা বলেছেন, “সবাই প্রস্তুত থাকুন গল্পের ভিতরের গল্প উদ্ঘাটনে!” বোঝাই যাচ্ছে, ছবি তৈরির শুরু থেকেই বিদ্যা দারুণভাবে ‘জলসা’-য় সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন। যৌথভাবে এই ছবি প্রযোজনা করেছেন সুরেশ ত্রিবেণী, টি সিরিজের ভূষণ কুমার ও কৃষাণ কুমার এবং অ্যাবানড‍্যানশিয়া এন্টারটেইনমেন্ট-এর বিক্রম মালহোত্রা ও শিখা শর্মা। বিদ্যা ও শেফালি ছাড়াও অভিনয়ে আছেন রোহিনী হাত্তাঙ্গাদি, মানব কাউল, ইকবাল খান, বিদ্যার্থী বন্দি, শ্রীকান্ত মোহন যাদব, শফীন প্যাটেল ও সূর্য কাশিভাটলা। ২০২১-এ ক্রাইম থ্রিলার ‘শেরনি’-তে শেষ দেখা গেছে বিদ্যাকে। শেফালি এই মুহূর্তে যথেষ্ট আলোচনায় ‘হিউম্যান’-এ এক ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে। এর আগেই অবশ্য  ‘দিল্লি ক্রাইম’-এ শেফালির ক্রাইম স্টোরির সঙ্গে ওঠাবসা হয়ে গেছে। এঁদের একত্রে চিত্রনাট্যের কোন আলো-আঁধারের খেলায় জুড়েছেন সুরেশ ত্রিবেণী, সেটা নিঃসন্দেহে এক চমক হতে চলেছে।

আমাজন প্রাইম ভিডিওতে আগামী ১৮ মার্চ প্রিমিয়ার হবে এ ছবির। প্রসঙ্গত, এটি আমাজন প্রাইম ভিডিওর সঙ্গে অ্যাবানড‍্যানশিয়া এন্টারটেইনমেন্ট-এর সপ্তম যৌথ উদ্যোগ। এর আগে এই জোট বন্ধনে আমরা দেখেছি ছোড়ি, দুর্গামতি, রাম সেতু, ব্রিদ, শেরনি ইত্যাদি। ছবির গল্প লিখেছেন প্রোজ্জ্বল চন্দ্রশেখর, সংলাপ আব্বাস দালাল ও হুসেন দালাল। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে এখন দেশবিদেশের দুর্দান্ত সব থ্রিলার ও ক্রাইম স্টোরি দর্শকের হাতের মুঠোয়। ‘জলসা’ সেক্ষেত্রে নতুন কী অনুপান যোগ করে, সেটা দেখার জন্য উদগ্রীব সকলেই। বিশেষত, বিদ্যা আর শেফালির কেমিস্ট্রি নিয়ে অনেকটা বাড়তি আগ্রহের মৌতাত জমেছে। দুজনেই নিজেদের সেরাটা দেন সুযোগ পেলেই। আপাতত ‘জলসা’ রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়। অপেক্ষায় তামাম ওটিটি দর্শক।