Monday, February 3, 2025
কৃষ্টি-Culture

বিশ্ব নাট্যদিবস পালনে জলপাইগুড়ি মঞ্চজন

থিয়েটার এমন এক শক্তিশালী শিল্প মাধ্যম, যা একদিকে সমাজের দর্পণ–পাশাপাশি সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার এক শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। থিয়েটারের এই গুরুত্ব অনুভব করে ১৯৬১ সালে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের নবম কংগ্রেসে থিয়েটারের প্রসার ও প্রচারের জন্য একটি বিশেষ দিনের প্রবর্তনের প্রস্তাব নেওয়া হয়। পরের বছর ১৯৬২-তে প্যারিসে  ২৭শে মার্চ ‘থিয়েটার নেশনস’ নাট্যোৎসব শুরু হয়। এই বিশেষ দিনটিকেই ইউনেস্কো বিশ্ব নাট্যদিবসের মর্যাদা দেয়। সারা বিশ্বের নাট্যকর্মীদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষা ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে এই দিনটি অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়।

এবছর জলপাইগুড়ি শহরের সমগ্র নাট্যদলের ঐক্যমঞ্চ মঞ্চজনের আয়োজনে ২৭শে মার্চ পালিত হয় বিশ্ব নাট্যদিবস। জলপাইগুড়ি শহরের সমাজপাড়ার পথসভায় সেদিন সন্ধ্যার শুরুতে মঞ্চজনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জলপাইগুড়ি রূপায়ন নাট্যদলের কর্ণধার দীপঙ্কর রায়। এরপর অনুভব নাট্যসংস্থার নির্দেশক সাধন চক্রবর্তী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই বিশেষ দিনের তাৎপর্য তুলে ধরেন। এ বছরের বিশ্ব নাট্যদিবসের বাণী প্রদান করেছেন মিশরের থিয়েটার অভিনেত্রী সামিহা আইয়ুব। সেই বাণী পাঠের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে মোট পাঁচটি দল তাদের নাট্য প্রযোজনা পরিবেশন করে।

Img 20230330 Wa0000
বিশ্ব নাট্যদিবস পালনে জলপাইগুড়ি মঞ্চজন 5

জলপাইগুড়ি মুক্তাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠীর নিবেদনে ছিল  ‘পথ কত দূর’, নাট্যকার কুন্তল ঘোষ ও নির্দেশক রীনা ভারতী। এ নাটকে লকডাউনের সময় ঘরমুখো এক পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক পরিণতির গল্প আবর্তিত হয়েছে। নাট্যকার সন্দীপ ব্যানার্জির রচনা ও নির্দেশনায় দর্পণ নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘ছাতা’। এ নাটক বৃষ্টির দিনে একটি ছাতাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন বান্ধবীর খুনসুটি ও মধুর কলহকে ঘিরে সুন্দর কমেডি তৈরি করেছে। গুঞ্জন স্কুল অফ অ্যাকটিং-এর পরিবেশনায় ছিল ‘বকুল কথা’, যার নাট্যকার ও নির্দেশক সাধন চক্রবর্তী। এই নাটকে চা-বাগানের মেয়ে বকুল নিদারুণ সাংসারিক অভাবের তাড়নায় আর সিনেমার রুপোলি জগতের হাতছানিতে আদিম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়, পরিণতি মৃত্যু। রূপায়ন নাট্যসংস্থা পরিবেশন করে বারীন চক্রবর্তীর রচনায় ও দীপঙ্কর রায়ের নির্দেশনায় শ্রুতিনাটক ‘লকডাউন’। এ নাটকে লকডাউন সময়কালে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভাব অনাহার ও অসহায়তার মধ্যেও নাট্যকর্মীদের পাশে থাকার উজ্জ্বল ছবি ফুটে উঠেছে। জলপাইগুড়ি কলাকুশলী নাট্যদল পরিবেশন করে তমজিৎ রায় রচিত ও নির্দেশিত ‘বিষ উপাখ্যান’। এ নাটক ছিল চোলাই মদের ব্যবসা ও তাকে ঘিরে মৃত্যু, ক্ষতিপূরণ ও নোংরা রাজনীতির একটি অসাধারণ পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। এদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’, ‘গাজী সাহেবের কিস্যা’ ও নিজস্ব প্রযোজনা ‘বেহুলা’ নাটকের গান পরিবেশন করে জলপাইগুড়ি উজান নাট্যদল। জলপাইগুড়ি শহরের সমস্ত নাট্যদল ও নাট্যকর্মী সহ নাট্যপ্রেমী দর্শক-শ্রোতা সমাগমে বিশ্ব নাট্যদিবসের এই আয়োজন সার্থক হয়ে ওঠে।