ভালো গান আজও শোনে কলকাতা
শাস্ত্রীয় ও উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল কলকাতা। শিল্পী থেকে দর্শক, ব্যতিক্রম সবেতেই। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে চলতি সব ধারণাকে ভুল প্রমাণ করল গত ২রা এপ্রিল বালিগঞ্জ চৌধুরী হাউসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান। গুরু অঞ্জন মজুমদারের সঙ্গীত শিক্ষকতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।
বর্তমান প্রজন্ম শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে, এই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমান করে এক ঝাঁক উজ্জ্বল নতুন মুখ এদিন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, উপ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করলেন। একই সঙ্গে এদিন দর্শকপূর্ণ হল জানান দিল, আজও কলকাতার মানুষ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে কদর করতে জানেন। সেক্ষেত্রে শিল্পীর প্রতিষ্ঠা বা পরিচিতি গুরুত্বপূর্ণ নয়, শিল্প পরিবেশনের মানই শেষ কথা।
অনুষ্ঠানে শাস্ত্রীয়, উপ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি পরিবেশিত হয় নতুন বাংলা গানও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশ থেকেও ছাত্রছাত্রীরা এসেছেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। এদিন গুরু-শিষ্য পরম্পরা প্রতিষ্ঠায় নজির সৃষ্টি করে এই অনুষ্ঠান। শুরু হয় দুপুর ৩টেয়। উদ্বোধনে ছিলেন অঞ্জন মজুমদারের শিক্ষক, বিশিষ্ঠ সঙ্গীতগুরু তথা সুরকার জয়ন্ত সরকার। সঙ্গীতের তিন প্রজন্মের মিলনে এই অনুষ্ঠানটি ব্যতিক্রমী মাত্রা পায়।
সঙ্গীত মানে তো শুধু কথা-সুর-তাল-লয় নয়। সঙ্গীত একটা জীবনবোধ। সেই বোধে উদ্বুদ্ধ করাই সঙ্গীত শিক্ষকের কাজ। জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সঙ্গীতকে পাথেয় করে এগিয়ে চলার সেই শিক্ষা সফলভাবে দিয়ে চলেছেন অঞ্জন মজুমদার। তাই তো তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ আজ প্রথিতযশা শিল্পী, আবার কেউ কেউ সঙ্গীতকে পেশা না করলেও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে, সবার জীবনেই রয়েছে সঙ্গীতের সাত সুর।
এমন অসংখ্য উজ্জ্বল মুখকে সঙ্গে নিয়েই ২৫ বছরের সফর ফিরে দেখলেন গুরু অঞ্জন মজুমদার। এদিনের অনুষ্ঠানকে দুটি পর্বে সাজানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে ছিল শাস্ত্রীয় ও উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অংশগ্রহণে ছিলেন সঞ্চারী, মঞ্জুরী, শিলাদিত্য, সম্রাট এবং রাখী। উপশাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মধুমন্তী চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা, রিতিশা, অমৃতা, সোনালি পরিবেশন করেন ঠুমরি, দাদরা। ভজনে মুগ্ধ করেন সুসীমা, মধুমন্তী সেনগুপ্ত। শিল্পীদের পরিবেশনার মাঝে তানপুরার সুর মিলিয়ে দিয়ে গুরু অঞ্জন মজুমদার ও গুরু জয়ন্ত সরকার শিষ্যদের প্রতি তাঁদের যত্ন, ভালবাসা ও আরেক জীবনবোধের নিদর্শন রাখেন। দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে ছিল বাংলা গানের আসর। শতরূপা, উপাসনা, চন্দ্রিমা, দেবাশিস, স্নিদ্ধদেব এবং রাগেশ্রীর কণ্ঠে বাংলা গান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এদিনের পূর্ণ দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন রাজ চক্রবর্তী, রাজীব চক্রবর্তী,পরিমল চক্রবর্তী, দেবাশিস টুনাই গাঙ্গুলি, উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বরূপ ঘোষদস্তিদার, পার্থসারথী একলব্যের মতো বিশিষ্ট মানুষজন। শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা প্রসঙ্গে প্রত্যেকেই ছিলেন প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।