ভালো-মন্দের দন্দ্ব-মায়া
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। আজ সোনি লিভ-এর ‘গুড ব্যাড গার্ল’। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
শৈশবের কিছু ঘটনা আমাদের মনে অজান্তেই এমন সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে, যা ভবিষ্যতে, বলা যায় কখনও কখনও সমস্ত জীবনভর মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ‘গুড ব্যাড গার্ল’-এর মায়া ওরফে বুলবুলের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে বলা যায়। তার মা তাকে সত্যি কথা বলতে শেখায়। আবার প্রতিবেশী আন্টির স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে সবার সামনে সত্যি বলায়, আন্টি ক্ষেপে ওঠে এবং মায়ের কাছে সত্যি বলার জন্য বকা খায় বুলবুল। সত্যি-মিথ্যার এই সংশয়ে বুলবুলের বিশ্বাস শুধু ধাক্কা খায় না, নতুন এক জীবন-ধারণা জন্ম নেয় তার মধ্যে।
ছোট্ট মেয়ে বুলবুল বড় হয়ে ওঠে। এখন সে মায়া আহুজা রূপে পরিচিত সর্বত্র। পেশায় আইনজীবি মায়া এখন সত্য-মিথ্যার টুইস্টের সমীকরণ ভালোই জানে। এই ফর্মুলাতেই বাজিমাত করতে চায় সে। তবে, এই মুহূর্তে মায়ার জীবনে প্রভূত টানাপোড়েন। একদিকে নিজের শারীরিক অসুস্থতার জন্য ডাক্তার, পেশার কারণে কোর্ট এবং বস জাইনা মিস্ত্রির সঙ্গে ঝামেলা। এমনই তীব্র সেই ঝামেলা যে চাকরি খোয়াবার যোগাড় হয় মায়ার। ঠিক তখনই মায়ার ক্যান্সারের খবর ছড়িয়ে পড়ে অফিসে। সহানুভূতির ভান্ডার উপচে পড়ে। মায়ার পাশে দাঁড়ায় তার সহকর্মীরা। সত্যি কি ক্যান্সার আক্রান্ত মায়া ? এরই মধ্যে আমরা জানতে পারি, ঝিলমিলের কথা। বন্ধু ও পরিচিত মহলে দারুন জনপ্রিয় ঝিলমিল মায়ার নতুন বন্ধু।
তবে, এই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও রয়েছে মায়ার নানা জটিল খেলা। মায়ার পরিকল্পিত ভালো-মন্দের খেলা চলতেই থাকে। সহকর্মী সাহিলের গোপন কথা জানতে পারে মায়া, যেখানে লুকিয়ে সাহিলের অন্ধকার কাহিনি। মায়া এবার সাহিলের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানায় সেই গোপন কথা নিয়েই। থেমে থাকে না সাহিলও। সেও মায়ার কাণ্ড-কারখানার কথা জানে। দুজনেই দুজনের বিরুদ্ধে অলিখিত যুদ্ধে নামে। একদিকে ঝিলিমিলের বন্ধুদের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করে মায়া। অন্যদিকে সাহিলের সঙ্গে ঝামেলায় কোণঠাসা সে। সমর্থন খোঁজে পুরোনো পরিচিত আঁচলের কাছে।
সোনি লিভ-এ প্রদর্শিত ‘গুড ব্যাড গার্ল’-এর মায়া কোনও অস্বাভাবিক চরিত্র নয়। আমাদের আশপাশে মায়ার মতো ভাবনা নিয়ে চলা মানুষ কম নেই। সেইদিক থেকে মায়াকে রক্তমাংসের বলেই অনুভূত হয়। আর এর কৃতিত্বের অনেকটাই বর্তায় এর লেখক টিমের ওপর, যেখানে রয়েছেন তাহিরা নাথ, নিখিল অরোরা, কল্যাণী পণ্ডিত, আরতি কাপুর ও চৈতালী পারমার। মূলত দিল্লির একটি অঞ্চল, যেখানে পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের বসবাস, এমনই এক পরিবেশে পল্লবিত সিরিজের গল্প। ক্রিয়েটর বিকাশ বহেল ও চৈতালী পারমার। পরিচালনা অভিষেক সেনগুপ্ত। প্রযোজনা বিকাশ বহেল, অনুরাগ শ্রীবাস্তব, বিরাজ সাওয়ান্ত ও বরুণ খান্ডেলওয়াল। ‘গুড ব্যাড গার্ল’ আদতে ভালো-মন্দ, অতীত-বর্তমান, সত্য-মিথ্যার সংজ্ঞা নিয়ে যে ধারণা, যা খুব সরল রেখায় কখনই নিরূপণ করা যায় না, তারই এক দুর্দান্ত ওয়েব-করণ।
‘গুড ব্যাড গার্ল’ মায়ার অভিনয়ে সমৃদ্ধি দেওয়ান একেবারে চাবুক। আপনি পর্বে পর্বে মায়াকে দেখতে দেখতে কখনও তার ওপর রেগে যাবেন, কখনও ভালোবাসবেন। সমৃদ্ধির স্মার্ট ও ঝকঝকে উপস্থিতি আপনাকে এই দোলাচলে রাখবে বরাবর। একইভাবে ছোট্ট মায়া ওরফে বুলবুলের অভিনয়ে মন কেড়ে নেয় আরাধ্যা। এছাড়াও আছেন বৈভব রাজ গুপ্তা (সাহিল), সোহুম মজুমদার (ডাঃ পুনিত), নম্রতা শেঠ (ঝিলমিল), রাজেন্দ্র শেঠি (রামন আহুজা), জৈন খান দুরানি প্রমুখ। আর আছেন দু দুজন অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেতা–গুল পনাগ (মায়ার বস জাইনা মিস্ত্রি) ও শিবা চাড্ডা (মায়ার মা নিম্মি আহুজা)। সোনি লিভ-এ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্ট্রিমিং শুরু এই সিরিজের। উপভোগ্যতার গুণে ইতিমধ্যেই ওয়েব দর্শকের দিল জিতে নিয়েছে ‘গুড ব্যাড গার্ল’। আপাতত একটিই সিজন, দেখানো হচ্ছে ৯টি পর্বে।