Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

ভুবন এবং রানুর ভবিষ্যৎ

বাদাম কাকু আর বাদাম বিক্রি করবেন না। এখন থেকে গান গাওয়াকেই নিজের পেশা করতে চান তিনি। কথায় বলে, খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে…! দেখা যাচ্ছে, রানাঘাটের রানু মন্ডলের কাছ থেকে কিছুই শেখেননি ভুবন বাদ্যকর ! নাকি অনেককিছুই শিখেছেন ! বিষয়টা নিঃসন্দেহে তর্কের দাবি রাখে। রানু মন্ডল মুম্বই ইত্যাদি ঘুরে এসেও নিজের রুটি-রুজির কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা করতে পারেননি। এটা ঠিক, তাঁর রোজগারপাতি আগের তুলনায় বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখনও ভাইরাল তাঁর গান, নাচ-গান অথবা ভুল বকা। কিছুদিন আগে ইওহানির ‘মানিকে মাগে হিতে’ গাইবার একটা কষ্টসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন রানু। লোকজন সেটা ভাইরাল করেছে ওই হাসির খোরাক হিসেবেই। এছাড়াও তাঁর ব্যবহার, সাজপোশাক ইত্যাদি–সর্বোপরি লতাজিকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য রানুর জায়গাটা পরিস্কার করে দিয়েছে।

এহেন রানুর ফুটস্টেপ ধরে এগিয়ে ভুবন পেশা বদলে গান গেয়েই জীবন কাটানোর যে ভাবনা ভেবেছেন, তাকে নিরুৎসাহিত করার মতো ছোট মন আমাদের নয়। কিন্তু ভুবনকেও তাঁর অবস্থান বুঝতে হবে। বছরের পর বছর সংগীতচর্চা করেও এক একজন শিল্পী প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে ভুবনের না আছে প্রশিক্ষণ, না জন্মগত মারাত্মক কোনও প্রতিভা। ভুবনের গানের ভিডিও প্রথমে ভাইরাল করে ‘একতারা’ বলে একটি ইউটিউব চ্যানেল। পরে তার রিমিক্স করা হয় এবং ভিডিওটি ৫০ লক্ষ ভিউয়ারশিপ পায়। এই পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ ইতিবাচক।

কথা হলো, বারবার তার জন্য এই জাতীয় কাজকর্ম করবে কোন করিতকর্মার দল ! এখন যারা ভুবনকে ঘিরে, তারা তখন অন্য কোনও ভুবনে পাড়ি দেবে। বিষয়টার মধ্যে যেহেতু কোনও সুস্থির পরিকল্পনা নেই। ফলে, ভাইরাল হওয়া মুখগুলি বারবার বদলাবে। যাই হোক, রাতারাতি তারকা হয়ে যাওয়ার পর পয়সার মুখ দেখেন ভুবন। সেটা পরিমানে এতটাই যে তিনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িও কিনে ফেলেন। সেই গাড়িতে বসে গাড়ি চালানো শিখতে গিয়েই সম্প্রতি এক বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ভুবন। খবরে প্রকাশ বুকে আঘাত পেয়েছেন তিনি। আপাতত চিকিৎসাধীন ভুবন। আমরা সবাই প্রার্থনা করবো, তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন এবং ছন্দে ফিরবে ভুবনের জীবন।

রানু বা ভুবনের মতো মানুষের সমস্যা এটাই। তাঁরা অনেকসময় বাস্তবটা ভুলে যান। ভুলে যান অতীত ইতিহাস। কিছু প্রতিভা ওঁরা জন্মগতভাবে পেয়েছেন। কিছু অবদান আজকের প্রচার মাধ্যমের। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে টিভি বা সংবাদপত্র, যতদিন বাজার গরম, ততদিনই যাবতীয় মাতামাতি। মানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টা একাধারে জটিল ও নিষ্ঠুর। টাকাপয়সা আয় করার থেকে ব্যয় করা শক্ত। কয়েকমাসের সাফল্যে একটা গাড়ি কিনে ফেলার মতো রোজগার করেই ফেলা যায়। কিন্তু তারপর ? রানু বা ভুবনের মতো মানুষের জমা পুঁজি সাধারণত এতটা থাকে না যে, তাই দিয়ে আজীবন চলে যাবে। রোগভোগ-বার্ধক্য তো আছেই। অতএব, আগে সঞ্চয় করুন ভুবন। গাড়ি-বাড়ি তারপর।