মধুমিতার হাতে পর্ণার উত্তরণ
মধুমিতা সরকার। ছোটপর্দার অতি প্রিয় মুখ। স্বচ্ছন্দ অভিনয়ে শুরু থেকেই নজর কেড়ে নেন এই প্রতিভাময়ী কন্যা। স্বল্পদিনের কেরিয়ারেই নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পা রেখেই। ‘হইচই’-এ জানুয়ারির শেষে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে নতুন সিরিজ ‘উত্তরণ’-এর। পর্ণা একেবারে সহজ সরল একটি মেয়ে। পেশায় শিক্ষক। সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে অভির সঙ্গে। স্বভাবগুণেই বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, স্কুল সর্বত্র সকলের প্রিয় পর্ণা। এহেন পর্ণার জীবনে এক মারাত্মক ঝড় ওঠে অপ্রত্যাশিত ভাবেই। তাকে নিয়ে একটি অশ্লীল এমএমএস ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়। একেবারে বদলে দেয় পর্ণার জীবন।
৭ পর্বের এই সিরিজ সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বটতলা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করেছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। পর্ণার বিপরীতে আছেন টেলি দুনিয়ার আর এক জনপ্রিয় মুখ রাজদীপ গুপ্ত। এই সিরিজেই প্রথম জুটি বাঁধলেন রাজদীপ ও মধুমিতা। রাজদীপও খুব শক্তিশালী অভিনেতা। পর্দায় রসায়ন জমিয়ে দিয়েছে বাংলা ওয়েব দুনিয়ার এই নতুন জুটি। ওঁদের জুটিকে ইতিমধ্যেই পছন্দ করেছে দর্শক। এছাড়াও আছেন স্বস্তিকা দত্ত ও শাওন চক্রবর্তী। তবে এ সিরিজ নিতান্তই পর্ণা নির্ভর। তাই মধুমিতার দিকেই চোখ সকলের। তাঁর গার্ল নেক্সট ডোর লুকের অন্তরালে রয়েছে প্রচুর ধূসর স্তর। মধুমিতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ! তবে, সকলেই বলছেন মধুমিতা পারবেন চ্যালেঞ্জটা নিতে। পর্ণার জীবন এক ক্লিকে কতটা বদলে যায়, তা তো দেখতেই হবে। প্রথম সিজন এতটাই টানটান ও রহস্যে ভরপুর যা দর্শক এখন থেকেই পরের সিজনের অপেক্ষায়।
এরপর পর্ণার জীবন কোন খাতে বইবে, সেটা কিছুটা আমাদের সামাজিক প্রেক্ষিতে আন্দাজ করা যায়। এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর অপরাধ। কিন্তু এর পিছনে কে বা কী জানার আগেই অপরাধের শিকার যে, তার কাটাছেঁড়া শুরু করে দেয় সমাজ। পর্ণার ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। তাকে তার বাবা-মা ভুল বোঝে এবং চরম শাস্তি স্বরূপ পর্ণাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয়। পর্ণার সহমর্মী স্বামী এ যাবৎ সব ব্যাপারে তার পাশে থেকেছে। কিন্তু এই কঠিন সময়ে সে থাকবে কী ? পর্ণার দেওর নীলার্কের ভুমিকাটাও খুব স্বচ্ছ নয়। এমএমএস কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আজকের ইন্টারনেট প্রযুক্তি ও ফটোশপের কেরামতি বহু মেয়ের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। পর্ণার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়নি তো ?
একদিকে প্রশ্ন, একা কী করে এতবড় এক স্ক্যামের বিরুদ্ধে লড়বে পর্ণা ? একটি মানুষও কী থাকবে না তার পাশে ? স্কুলের যে শিক্ষিকারা পর্ণাকে এত পছন্দ করে, তারাও মুখ ফেরাবে ? অন্যদিকে এই অপরাধের পিছনে কারা, সেই অনুসন্ধান কে করবে ? কতটা সৎভাবেই বা করবে। আমাদের দেশে অপরাধীকে আড়াল ক’রে, যে শিকার, তাকেই কলঙ্কিত করার চেষ্টা নতুন নয় ! সমাজের অন্ধকার দিক উন্মোচন করে উত্তরণের পথে যাবে পর্ণা, এটাই প্রত্যাশিত।
ছোটপর্দার মিষ্টি পাখি তার ডানা মেলেছে আগেই। ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’-র পাখি আর একটু পরিণত ‘কুসুম দোলা’ মেগায় ডাঃ ইমন মুখার্জির চরিত্রে। প্রতিম ডি গুপ্তার ‘লাভ আজ কাল’ ছবিতে বেশ সাহসী চরিত্র ও দৃশ্যে ধরা দেন তিনি অর্জুন চক্রবর্তীর সঙ্গে। মৈনাক ভৌমিকের ‘চিনি’ ছবিতে আবার আর এক অবতার মধুমিতার। ‘উত্তরণ’ সাহিত্যিক সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের সাইবার ক্রাইমের ওপর লেখা অত্যন্ত জনপ্রিয় এক উপন্যাস। মধুমিতার আর একটু উত্তরণ আমরা দেখবো নিশ্চয়ই এখানে।