মহুল আবৃত্তি ব্যান্ডের ১৫তম সুকুমার উৎসব
বিগত ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছরই সুকুমার রায়ের জন্মদিন পালন করে আসছে মহুল আবৃত্তির ব্যান্ড। এবছর সুকুমার উৎসবের ১৫তম বছর। সুতরাং এ বছরের উদযাপনে যোগ হল বিশেষ কিছু রঙ। গত ৩০শে অক্টোবর মহুল আবৃত্তির ব্যান্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সুকুমার রায়ের ১৩৫ বছরের জন্মদিন উদযাপন করল নবনালন্দা স্কুল। স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে ছোটদের সঙ্গে সমানভাবে অংশ নিলেন কয়েকজন বিখ্যাত মানুষও। সুকুমার রায়ের গান-কবিতা-শ্রুতিনাটকে সাজানো এই অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শাঁওলী মজুমদারের পরিবেশনা সহ মহুল আবৃত্তি ব্যান্ডের পারফরমেন্স। ব্যান্ড সংস্কৃতির সঙ্গে যে সুকুমার রায়ের কবিতাকে ওতপ্রোতভাবে মিশিয়ে নেওয়া যায়, তার একমাত্র নিদর্শন মহুলের এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। ‘দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম’, ‘আয়রে ভোলা’, ‘খাই খাই’, ‘হুঁকোমুখো হ্যাংলা’ সহ পাঁচটি কবিতার ডালি সাজালেন শাঁওলী আর তাঁর ব্যান্ড।
সুকুমারের কবিতা নিয়ে একেবারে ভিন্নধারার পরীক্ষানিরীক্ষা করলেন অরুণা দাশ আর কিঞ্জল চক্রবর্তী। আবোলতাবোল-এর ছড়ায় সমসাময়িক মিউজিক যোগ করে, চেনা ধারাটাকেই তাঁরা পালটে দিলেন। সুকুমার রায়ের লেখা ‘চলচ্চিত্ত চঞ্চরি’র বাছাই করা অংশ নিয়ে অনবদ্য এক শ্রুতিনাটক উপস্থাপন করলেন মলয় ঘোষ, আকাশ পাত্র, স্পন্দন দাশ এবং কিঞ্জল চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে আবোলতাবোল-এর ছড়া শোনাল অভিরাজ, বিলাস, মৌলিক, সপ্তর্ষি এবং প্রিয়ব্রত। শুধু সুকুমারের ছড়া নয়, বাবুরাম সাপুড়ে, কাঠবুড়ো, হুকোমুখো হ্যাংলা-দের মতো তাঁর সৃষ্ট কয়েকটি জনপ্রিয় চরিত্রও জীবন্ত হয়ে হেঁটে-চলে বেড়ালো এই উৎসব প্রাঙ্গনে।
সুকুমার রায় যখন, তখন গল্প থাকবে না? ছিল বইকি। একেবারে অজানা, অচেনা, বিরল সব গল্পের রসদ নিয়ে এসেছিলেন প্রখ্যাত গবেষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। আর তাঁর গল্প মানেই চমকে ওঠার মতো সব ঘটনা। সুকুমারের শব্দ দিয়ে কষে জব্দ করার মতো খেলা নিয়ে হাজির ছিল শব্দবাজি-ও। সুকুমার রায় মানে সবটাই কেমন হযবরল, তাই না? হ্যাঁ, সেই বিখ্যাত রচনার অংশ শ্রুতিনাটকে নিয়ে এল নব নালন্দা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ছোটদের আবৃত্তি তো ছিলই। কাব্যায়নের ছাত্রছাত্রীদের ছড়াও ছিল বেশ উপভোগ্য। নব রবিকিরণ-এর শিল্পীদের সুকুমার-সঙ্গীত পরিবেশনও হলো মনে রাখার মতো।
গোটা অনুষ্ঠানটি নিজেদের কথা দিয়ে গাঁথলেন স্পন্দন দাশ, সায়নী মজুমদার এবং আরাত্রিকা দে। আর হ্যাঁ, জন্মদিন যখন, কেক কাটা হবে না? হইহই করে সুকুমার রায়ের জন্মদিনের কেক কাটলেন তাঁর অনুরাগীরাই। আমন্ত্রিত অতিথি এবং সুকুমার অনুরাগীদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে মহুল আবৃত্তির ব্যান্ড এবং নব নালন্দা স্কুলের এই সুকুমার উৎসবের সন্ধ্যা উজ্জ্বল হয়ে রইল।