Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

মিয়া বিবি আউর মার্ডার

আর একবার রাজীবের কামাল করা অভিনয়

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর

তাঁর প্রথম ছবি ‘আমির’ মুক্তির ঠিক আগে একদিন। মুম্বই থেকে ছবির জন সংযোগের কাজটা যারা দেখছিল, সেই এজেন্সির ফোন এলো, ছবির নায়ক রাজীব খান্ডেলওয়ালের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুরোধ নিয়ে। আমি তো এক পায়ে খাড়া। ততদিনে একতা কাপুরের মেগা ‘কহি তো হোগা’-র সুজল চরিত্রে অভিনয় করে তামাম হিন্দি টিভি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন রাজীব। একতা তাঁর বালাজির ব্যানারে তখন একের পর এক নতুন মুখের আমদানি ঘটাচ্ছেন হিন্দি টিভির দুনিয়ায়। রাজীব নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেরা।

প্রসঙ্গত, ‘কহি তো হোগা’-র আগেই রাজীব পা রেখেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে, তবে পর্দার পিছনে, ‘ফিল্মি চক্কর’ নামের এক সিরিজে, একজন পরিচালকের ভূমিকায়। আর তাঁর এই পরিচালক সত্ত্বাটি যে বরাবরই তাঁর মধ্যে থেকে গেছে, সেটা উঠে এসেছিল আমাদের সাক্ষাৎকার পর্বেও। ‘আমির’ ছবির পরিচালক রাজকুমার গুপ্তা। সঙ্গীত পরিচালক অমিত ত্রিবেদী। মনে পড়ছে অসাধারণ এক ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নির্মাণ করেন এই তরুণ প্রতিভাবান। আদতে এ ছবির কাহিনি থেকে নির্মাণের পুরো টিম–সবটাই ছিল নতুন প্রজন্মের ভাবনার, স্বপ্নের, উত্তরণের। একটি সন্ত্রাসবাদী দল তাদের কাজের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় তরুণ এনআরআই ডাক্তার ডাঃ আমির আলিকে (রাজীব)। তারপর পুরোটাই একশন আর দারুন রোমাঞ্চকর সব ঘটনাপ্রবাহ।

Images 9 2
মিয়া বিবি আউর মার্ডার 7

আমাদের কথাবার্তা হচ্ছিল দুরভাষে। তার মধ্যেও ছবি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে রাজীবের কন্ঠের উত্তেজনা ঢাকা থাকছিল না। জানাচ্ছিলেন, কোনও বডি ডামি ছাড়াই কেমন করে এ ছবির সমস্ত একশন তিনি নিজে করেছেন। অত্যন্ত লো বাজেটের ছবিটিতে পয়সা বাঁচাবার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যামেরাম্যানের কাজটাও কয়েকটি সিকোয়েন্সে রাজীব নিজেই করেছেন। মুম্বইয়ের এক কুখ্যাত অঞ্চলে রিয়েল লাইফ লোকেশনে শুটিং করার সময় ট্যাক্সির ভিতরে তিনি নিজেই ক্যামেরা ধরেছিলেন। আর এই পুরো জার্নিটাই দারুন উপভোগ করেছেন তিনি, সেটাও সেদিন নির্দ্বিধায় জানান রাজীব। ‘আমির’ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োতে সমর্থ হয়। মনে আছে, তারপর বহুদিন পর্যন্ত রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

বেশ কয়েকটি মেগা সিরিয়ালে সাফল্য অর্জন করে,  ততদিনে টিভির সুপারস্টার রাজীব। যার মধ্যে রয়েছে ধামাকাদার একশন  সিরিজ ‘টাইম বম্ব নাইন/ইলেভেন’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক মেগা। কিন্তু সাফল্য তাঁকে দাম্ভিক করে তোলেনি। যোগাযোগ করলেই সাড়া দিয়েছেন, কথা বলেছেন ভদ্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে। ‘আমির’ ছবির পর ‘শয়তান’, এখানেও রাজীব অভিনয়ে চমকে দেন সকলকে। পরপর ‘সাউন্ডট্র্যাক’, ‘টেবিল নং ২১’  ইত্যাদি ছবি। রাজীবের ব্যতিক্রমী কাজের ধারা অব্যাহত ছিল, বড় ও ছোটপর্দা ঘিরে। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রচুর শো হোস্ট করার মাধ্যমেও নিজের অপরিহার্যতার স্বাক্ষর রাখেন এই তরুণ। কাজ করেছেন ইন্দো অস্ট্রেলিয়ান ছবি ‘সল্ট ব্রিজ’-এ। রাজীব অভিনীত ছবি হিট হোক না হোক, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সমালোচকরা বরাবর অকুণ্ঠ চিত্তে তাঁর প্রশংসা করেছেন।

ফলত, ২০১৮ সালে যখন অল্ট বালাজির হাত ধরে তাঁর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অভিষেক হলো, ‘হক সে’ ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে, নড়েচড়ে বসেছিলেন রাজীব ভক্তরা। যা আর একটু উজ্জীবিত হলো রাজীবের সাম্প্রতিক ওটিটি যাত্রা ‘মিয়া বিবি আউর মার্ডার’-কে কেন্দ্র করে। ওয়েব সিরিজ মানেই ক্রাইম থ্রিলার ইদানীং সকলেই এমন এক ধারণা পোষণ করেন। সেই ধারণার মধ্যেও এক ভিন্ন ভাবনার বাতাস নিয়ে এসেছে রাজীব ও মঞ্জরি ফাদনিস অভিনীত এই সিরিজ। গত ১ জুলাই থেকে এম এক্স প্লেয়ারে দেখানো শুরু হয়েছে ‘মিয়া বিবি আউর মার্ডার’ আর সঙ্গে সঙ্গেই ওটিটি দর্শকের আকর্ষণের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে এই সিরিজ। রাজীব-মঞ্জরী ছাড়াও অভিনয় করেছেন রুশাদ রানা, প্রসাদ খান্দেকর, আশুতোষ পান্ডে, অস্মিতা বকশি, ঋতিক দীনেশ শাহ, বিনোদ পল, রণদীপ মালিক প্রমুখ। পরিচালনা সুনীল মনচন্দা।

Images 9 7
মিয়া বিবি আউর মার্ডার 10

একটি অপরাধ ঘটে। তাকে ঘিরে আরও কিছু ঘটনাক্রম–রহস্য দানা বাঁধে পরতে পরতে। কিছু রহস্যের ওপর থেকে পর্দা ওঠে। কিছু লুকোনোই থাকে। এর মাঝখানে আমরা একে একে চরিত্রগুলির দেখা পাই। তাদের ওঠাবসা, চলাফেরায় সাসপেন্স তুঙ্গে ওঠে এবং শেষে টানটান ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছয়। প্রচুর উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যকল্প রচিত হয়। ক্রাইম থ্রিলারে সচরাচর আমরা যে ধরণের ফর্মুলা দেখতে অভ্যস্ত, তার বাইরে এমন অনেক কিছু উপাদান যুক্ত হয় এখানে, যা অভাবিত এবং অপ্রত্যাশিত। পাঠক কল্পনা করুন, ক্রাইম আর কমেডি একসঙ্গে ? আদতে এই জাতীয় বিপরীতমুখী টুইস্ট নিয়েই এগিয়ে চলে ‘মিয়া বিবি আউর মার্ডার’।

জয়েশ (রাজীব) একজন পুলিশ অফিসার। জয়েশের স্ত্রী প্রিয়া (মঞ্জরি) একজন গৃহবধূ, যে প্রবলভাবে ক্রাইম ড্রামার ভক্ত। দুজনের সম্পর্ক ভালো নয়। দুজনেই দাম্পত্যে অসৎ, একে অপরকে ঠকিয়ে চলে। একদিন বাড়িতেই পাওয়া যায় এক মৃতদেহ, লোকটি আর কেউ নয়, প্রিয়ার প্রেমিক। এবার শুরু নতুন খেলা। মৃতদেহ সহ সব চিন্হ লোপাট করতে মাঠে নামে জয়েশ ও প্রিয়া। বুঝতেই পারছেন এটা তাদের আপৎকালীন সন্ধি। এই কাণ্ডের পাশাপাশি রয়েছে এক ড্রাগ মাফিয়া এবং হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকজন সাক্ষী। কে খুনি, কে শিকার, কারা সাক্ষী–এই যাবতীয় প্রশ্ন ঘিরে উত্তেজনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

Images 9 4
মিয়া বিবি আউর মার্ডার 11

মোট ৯ পর্বের সিরিজ, আর এক একটির সময়কাল মোটামুটি ২০ মিনিট। অর্থাৎ একঘেয়ে লাগবার কোনও সম্ভাবনাই নেই। দ্রুত গতি এই সিরিজের আকর্ষণ বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। প্রথমদিকের পর্বগুলি হালকা মেজাজে অতিক্রান্ত হয়। ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে যে হাড় হিম করা থ্রিলারের ভাবনা আমাদের মাথায় গেঁথে গেছে, ‘মিয়া বিবি আউর মার্ডার’ একেবারে তার বিপরীত অভিমুখে চলে। এর কৃতিত্ব নিশ্চয়ই পরিচালক সুনীল মনচন্দার। রাজীব খান্ডেলওয়ালকে নিয়ে এই প্রতিবেদন শুরু করেছিলাম, শেষেও আবার তাঁর উল্লেখ করবো। নিজের উৎকর্ষতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন রাজীব এখানেও। প্রতি পর্বেই দর্শককে একাত্ম করে নেন তিনি। সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন মঞ্জরী। বাকিরাও দক্ষ, নিপুণ। এই সিরিজ দেখার পর, ক্রাইম থ্রিলার কম, ব্ল্যাক কমেডি বেশি মনে হবে  ‘মিয়া বিবি আউর মার্ডার’-কে। স্বাদ বদলের জন্য দেরি না করে আজই চোখ রাখুন এম এক্স প্লেয়ারে।