Monday, February 3, 2025
কৃষ্টি-Culture

মৌলিক বাংলা গানের ভবিষ্যৎ কী বিপন্ন ?

একটা সময় ছিল যখন বছরে পরিমিত সংখ্যক মৌলিক গান প্রকাশিত হত এবং গান শোনার মাধ্যম ছিল রেকর্ড প্লেয়ার, পরে ক্যাসেট। আকাশবাণীতে শোনা যেত নতুন বাংলা গান। প্রধানত, এই মাধ্যমগুলিই ছিল সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের গান শোনার উৎস। শারদ উৎসবে HMV থেকে প্রকাশিত হতো কিংবদন্তী শিল্পীদের মৌলিক বাংলা গান। সেই সমস্ত গান শোনার জন্য বছরভর প্রতীক্ষায় থাকতেন আপামর বাঙালি। সেই সব গান আজ কালোত্তীর্ণ। বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সেই সব গান সমান জনপ্রিয়। বহু নবাগত শিল্পী সেইসব গান নতুনভাবে সঙ্গীতায়োজন করে গেয়ে থাকেন।
কিন্তু নতুন বাংলা গান সেই ভাবে একালের সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে কী গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে ? সেই প্রশ্নটাই এখন ভাবিয়ে তুলেছে বর্তমান সঙ্গীত শিল্পীদের। ইন্টারনেটের যুগে গান শোনার বহু মাধ্যম তৈরি হয়েছে। ইউটিউব, নানান ওটিটি প্ল্যাটফর্মের (আইটিউনস, গানা, সাভন, আমাজন ইত্যাদি) দৌলতে নতুন গান শোনাটা এখন সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে খুব কঠিন ব্যাপার নয়। আমরা এখন নিজেদের মুঠোফোনেই যখন ইচ্ছা শুনে নিতে পারি নতুন বাংলা গান। কথা হলো, গান শোনার মাধ্যম হয়তো বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু, অর্থকরী ভাবে লাভবান হতে পারছেন না বহু শিল্পী। তাই অনেক প্রতিভাবান শিল্পীই এখন হতাশায় ভুগছেন। যে পরিমান অর্থ একটি গান তৈরিতে খরচ হয়, সেই অর্থের অর্ধেক মূল্যও তাঁরা ফেরত পাচ্ছেন না। ফলে, নতুন গান তৈরির তাগিদ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা।

78421240

শুধু নতুন প্রতিভাবান শিল্পীরাই নন, বহু প্রথিতযশা শিল্পীও একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সম্প্রতি জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যমে জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ২০১৭ থেকে ৫৪টি গান ইউটিউবে প্রকাশ করে পাঁচ বছরে তাঁর উপার্জন হয়েছে মাত্র ২৫০০ টাকা। অথচ গানগুলি তৈরি করতে তাঁর নিজের পারিশ্রমিক বাদ দিলে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ চার হাজার টাকা। তাঁর আশঙ্কা এরকম চলতে থাকলে বাংলা গানের শিল্পীরা সফল হবেন কীভাবে ?
রূপঙ্কর আরও জানান, নতুন গান এখন আর মানুষ শুনতে চান না। গান এখন শুধু শোনার নয়, দেখারও বিষয়। একটি গানের সঠিক দৃশ্যায়ন করতে যে পরিমান খরচ হয়, তা সব শিল্পীর পক্ষে খরচ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে ভালো গান গাইলেও তা মৌলিক গানের জগতে অচেনাই থেকে যায়। তাঁর মতে, আগামী দিনে সফল হতে গেলে হয় প্রথম সারির কোনও প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। যাতে তাঁদের ছবির নেপথ্য গায়ক বা গায়িকা হওয়া যায়। নয়তো জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো-তে গিয়ে সেরার তকমা পেতে হবে। এর বাইরে তিনি আর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান।
প্রসঙ্গত, যাঁরা এই দুটি পথের সুবিধা নিতে পারেন না, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী ? এই বিষয়েও কিছু কথা মাথায় রাখা জরুরি। ডিজিটাল পাইরেসির যুগে শিল্পীরা যদি সঠিক বিশ্বস্ত ডিজিটাল কন্টেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে গান প্রকাশ করেন, তবে, অর্থকরী ভাবে লাভবান হবার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায় এবং বাংলা মৌলিক গান শ্রোতাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়।