যাত্রা শুরু লীনার নতুন নাও ‘নোয়া’র
উপকূলীয় ছোঁয়ার আবেশ নিয়ে শহর তিলোত্তমার বুকে পথচলা শুরু ‘নোয়া’-র। নেপথ্যে প্রযোজক, পরিচালক, কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
নীল আকাশের বুকে পেঁজা তুলোর মতো মেঘেদের আনাগোনা শুরু। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। যাত্রা শুরু লীনার নতুন নাও ‘নোয়া’র । প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শরতের আগমন বার্তা। শুরু হয়েছে পুজোর কাউন্টডাউন। আর ঠিক এই সময়েই শহর তিলোত্তমার বুকে যাত্রা শুরু করলো ‘নোয়া’। একাধারে কফিশপ, রেস্তোরাঁ ও বুটিকের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘটেছে এখানে। ভুরিভোজ থেকে সাজগোজের সামগ্রী এক ছাতের তলায়। এমন অভিনব একটি অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রের ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন আর কেউ নন–টলিপাড়ার খ্যাতনামা প্রযোজক-পরিচালক, কাহিনি-চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি আবার রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনও।
সাম্প্রতিক রবিবাসরীয় এক বিকেলে ধুমধাম করে উদ্ধোধন হলো লীনার এই সাধের ক্যাফে কাম বুটিকের। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে নতুন এই ক্যাফের উদ্বোধন করলেন টালিগঞ্জের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। বুটিক ক্যাফের উদ্ধোধন করে স্বমহিমায় উজ্জ্বল সাবিত্রী বললেন, “প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্ধোধন করতে এক মিনিট সময় লাগে। কিন্তু এটাকে জ্বালিয়ে রাখার কাজটাই খুব মুশকিলের। তাই আমি লীনা-শৈবাল সহ ওদের অফিসের সকলকে অনুরোধ করব এই প্রদীপ যেন জ্বলে। তেলের অভাবে প্রদীপের সলতে যেন পুড়ে না যায়।”
প্রসঙ্গত, টালিগঞ্জের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় দাসানি স্টুডিওর পাশেই যাত্রা শুরু’নোয়া’-র। একসময় ক্যাফে হিসেবে এটির সূচনা হলেও মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় এই রেস্তোরাঁ। এবার রীতিমতো নবকলেবরে বুটিক ক্যাফের আকারে ‘নোয়া’-র সূচনা করলেন লীনা। অবশ্যই এবারেও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সহযোগী প্রযোজক-পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। নামকরণের ক্ষেত্রে বিশেষত্ব রাখাটা লীনার বরাবরই সিগনেচার স্টাইল। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। নোয়া শব্দটি এসেছে হিব্রু শব্দ ‘নোয়াচ’ থেকে। যেটির অর্থ বিশ্রাম বা শান্তি।
রেস্তোরাঁ জুড়ে রয়েছে কোস্টাল অ্যাম্বিয়েন্স। স্বাদে, সাজে সমুদ্র উপকূলের ছোঁয়া। মনের মতো করে রেস্তোরাঁটিকে সাজিয়েছেন লীনা। তাঁর ভাবনাকে রূপায়ণ করেছেন শিল্প নির্দেশক তন্ময় চক্রবর্তী। ক্যাফের ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে একটা লম্বা ডিঙি। চারিদিক সাজানো নানা ধরনের আলোয়। ডিঙির খোপে সাজানো রয়েছে যাবতীয় ঘর সাজানোর কিউরিও সামগ্রী। এছাড়াও রয়েছে কোস্টাল জুয়েলারি। বুক সেলফ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের বই। চাইলে ক্যাফেতে বসে পড়ে নেওয়ার পাশাপাশি ভালো লাগলে সংগ্রহ করতে পারেন। রয়েছে মনমাতানো শাড়ির কালেকশন। বেনারসের বেনারসী, লখনৌয়ের চিকন থেকে মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি। এছাড়াও রয়েছে ফুলিয়ার হ্যান্ডলুম শাড়ি। থাকছে সুন্দরবনের খাঁটি মধু ও ঘি।
‘নোয়া’-র খাদ্য তালিকায় চোখ রাখলে, সেখানেও দেখবেন অভিনবত্বের ছোঁয়া। কন্টিনেন্টাল কুইজিনের সঙ্গে সেখানে রয়েছে মোগলাই, বাংলাদেশী খাবার। বোনলেস মটন-চিকেন বিরিয়ানি, কোরিয়ান, ফরাসি খাবার সহ বাংলাদেশি ইলিশ পোলাও, চিংড়ি ভর্তা। এর সঙ্গে রয়েছে ফিশ রোল, স্যান্ডউইচ-স্যালাড-মকটেলের সম্ভার। বাংলাদেশি খাবার তৈরির জন্য সেদেশ থেকে এসেছেন বিশেষ রাঁধুনি।
এই বুটিক কাম ক্যাফে প্রসঙ্গে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “একদম ভালোলাগা-ভালোবাসা থেকেই এটা শুরু করা। অনেক ভাবনাই মাথায় আসে, কিন্তু শুরু হয়ে ওঠে না। এটা ফাইনালি হলো। অনেক কষ্ট করে কাজের মধ্যে থেকে সময় বের করে এটা করেছি। আমার কাছে ‘নোয়া’ হলো নোয়ার জাহাজ। যেখানে সঠিক লোকজন যাঁরা, তাঁরাই উঠবেন। যা কিছু পবিত্র, ভালো সেটাকেই এখানে রাখতে চেয়েছি।”
রবিবাসরীয় বিকেলে ‘নোয়া’-র এই নতুন পথচলায় রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছিল। দুলাল লাহিড়ি, শকুন্তলা বড়ুয়া, প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী, অভিনেত্রী-পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, মানালি দে, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায়, সপ্তর্ষি মৌলিক, সোহিনী সেনগুপ্ত, ঋদ্ধি সেন, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেশমী সেন, অপরাজিতা আঢ্য, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভরত কল, ঋতা দত্ত চক্রবর্তী সহ টলিপাড়ার একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী, কুশীলব উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং মেয়র পারিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার। সকলেই লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি ভূয়সী প্রশংসা করেন।